ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও ৯টি চালুর কর্মকৌশল নেয়া হবে

ভারতের সঙ্গে বর্ডার হাট চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

ভারতের সঙ্গে বর্ডার হাট চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ভারতের সঙ্গে বর্ডার হাট চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। দ্রুত আরও নতুন নয়টি বর্ডার হাট চালু এবং তা কার্যকর করতে কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানিসহ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার এ বিষয়েও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হবে। আগামী নবেম্বরে দিল্লীতে দু’দিনব্যাপী (১৬-১৭) বাংলাদেশ-ভারত সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠক সামনে রেখে এজেন্ডা চূড়ান্ত করেছে সরকার। জানা গেছে, বর্ডার হাট চুক্তি করার পাশাপাশি এবারের আলোচ্যসূচীতে রয়েছে- বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অস্থায়ী বাধা দূর করা, বাংলাদেশের বিএসটিআই কর্তৃক প্রদত্ত টেস্ট সার্টিফিকেটের ভারত কর্তৃক স্বীকৃতি প্রদান, আরও নয়টি বর্ডার হাট চালু, শীঘ্রই দুটি নতুন বর্ডার হাট উদ্বোধন এবং চালু থাকা চারটি হাট আরও কার্যকর করা, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ওপর থেকে ভারতের আরোপিত সিভিডি প্রত্যাহার, বাংলাদেশের তৈরি পাটের ব্যাগ ভারতে রফতানির সমস্যা দূর করা, স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়ন, খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে ফেনী নদীতে সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর করতে উদ্যোগ, ভারত কর্তৃক স্পর্শকাতর হিসেবে বাংলাদেশী ২২৫টি পণ্যের তালিকা প্রত্যাহার, ভারত থেকে কমলাজাতীয় ফলের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার, ভারতীয় দুগ্ধজাতীয় পণ্যের বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশ, ভিসা সহজীকরণ ও ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী মাল্টিপল ভিসা চালু, এদেশে ভারতের বিনিয়োগ, বিবিআইএন দ্রুত কার্যকর, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারতের সহযোগিতা প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, সচিব পর্যায়ের এবারের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লীতে অনুষ্ঠিতব্য এ বৈঠক সামনে রেখে বাংলাদেশ এজেন্ডা প্রায় চূড়ান্ত করেছে। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে যেসব মন্ত্রণালয় কাজ করছে তাদের প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবারের বৈঠকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় অংশজুড়ে রয়েছে ভারত। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপের ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। বাণিজ্য বৈষম্য দূর করে উভয় দেশ কিভাবে লাভবান হতে পারে সেসব বিষয়ে এবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, বর্ডার হাট চুক্তি নবায়নসহ বাণিজ্য বৃদ্ধিতে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো নিয়ে উভয় দেশ আলোচনা করবে। ভারত বরাবরই বাংলাদেশের ব্যাপারে আন্তরিক। আশা করছি, এবারও তারা বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে খুব শীঘ্রই দেশটিতে সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু’দেশের সরকারপ্রধান পর্যায়ের বৈঠকে এবার গুরুত্ব পাবে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে জোর দেয়া হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) কার্যকর এবং নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারতের ভূখ- ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশ। এ বিষয়গুলো এবারের বৈঠকের কার্যসূচীতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত রফতানির সুযোগ দেয়ার কারণে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। তবে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন-এ্যারাইভাল ভিসা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন টিটু জনকণ্ঠকে বলেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। বাংলাদেশে মানসম্মত উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে উঠেছে। কিছু কোম্পানি ভারতে বিনিয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে। একই সঙ্গে ভারতের বড় বড় কিছু কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি বাধাপ্রাপ্ত হয় দুর্বল অবকাঠামোর কারণে। এর মধ্যে রয়েছেÑ সরু রাস্তা, ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ ট্রাকের দীর্ঘ সারি এবং সমন্বয়ের অভাব। এসব কারণেই সময় এবং মূল্য বাড়িয়ে দেয় আমদানি রফতানির। এসব সমস্যা সমাধানে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশীদের জন্য ভবিষ্যতে ভারত অন-এ্যারাইভাল ভিসা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। জানা গেছে, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় ইস্যুকৃত জয়েন্ট কমিউনিকের ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত জনগণের সুবিধার জন্য পাইলট ভিত্তিতে বর্ডার হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। একই বছরের ২৩ অক্টোবর দুই দেশের মধ্যে বর্ডার হাট সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়। ওই চুক্তিতে পাইলট ভিত্তিতে দুটি বর্ডার হাট স্থাপনের কথা থাকলেও এরপর দুই দেশের সরকারের সম্মতিতে এ পর্যন্ত চারটি বর্ডার হাট স্থাপন হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে মহাজোট সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল সীমান্ত হাট। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলা সদর থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে ভারতের কালাইরচর সীমান্তের বিপরীতে বাংলাদেশের বালিয়ামারী সীমান্তে প্রথম বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হয়। সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দু’দেশের ৪৭টি করে পণ্য বেচাকেনার কথা। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বর্ডার হাট কাক্সিক্ষত সফলতা আসেনি। কী উপায়ে এসব হাট আরও যুগোপযোগী করে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো যায় সে কৌশল নেয়া হবে চুক্তি নবায়নে।
×