শাহীন রহমান ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনের পাশাপাশি আগামী ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ তিনটি নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে কমিশন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি নাগাদ জেলা পরিষদ ও দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
তাদের মতে জেলা পরিষদের নির্বাচনের তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হলেও নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচী তফসিলের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোন স্থানীয় সরকার পরিষদের প্রথম নির্বাচনের তারিখ সাধারণ স্থানীয় মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এরপর পরবর্তী নির্বাচনের সব কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করা হয়। দেশে যেহেতু এবার প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ কারণে পরিষদের প্রথম নির্বাচনের তারিখও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঠিক করে দিয়েছে। তবে এই তারিখ ঠিক রেখেই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই ও প্রত্যাহারের তারিখ নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। নবেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জেলা পরিষদ পাশাপাশি দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
কমিশন জানিয়েছে জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত হয়ে এলেই তা গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হবে। এরপরই কেবল নির্বাচনে বিস্তারিত সময়সূচী ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এর আগেই দলীয় ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কমিশনের চূড়ান্ত করা বিধি খসড়া অনুযায়ী জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে নির্দলীয় ভিত্তিতে। ২৫ বছরের উর্ধে যে কেউ জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। জেলা পরিষদে একজন চেয়ারম্যানও ১৫ জন সদস্য ও ৫টি সংরক্ষিত পদে নির্বাচন হবে। তবে বিধিমালা অনুযায়ী জেলা পরিষদে যারা প্রার্থী হবেন তারা কেউ ভোট দিতে পারবেন না। মূলত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, সদস্য, উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সিটি কর্পোরেশন মেয়র, কাউন্সিলররা জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট প্রদান করবেন। তবে এসব স্থানীয় পরিষদের নির্বাচিত কোন প্রতিনিধি জেলা পরিষদে নির্বাচন করতে হলে তাকে অবশ্যই পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
আগে জেলা পরিষদে অনির্বাচতদের নিয়োগ দেয়া হতো। আইন পাস হওয়ার পর আগামী ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচন। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ আইন করা হয়। এই আইনে একজন অনির্বাচিত ব্যক্তিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার নিয়োগ প্রদান করত। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনে নতুন আইন করে। নতুন এই আইনের অধীনে কোন বিধিমালা না থাকায় এতদিন জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। আগামী ডিসেম্বরে অনির্বাচিত এসব জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ২৮ ডিসেম্বর স্থায়ী সরকার মন্ত্রণালয়ে বেঁধে দেয়া সময়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে কমিশন।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে সব সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হয়েছে নির্দলীয়ভাবে। ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে দলীয়ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিধিমালা চূড়ান্ত করেছেন। বিধিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। এছাড়া বাকি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। চেয়ারম্যান পদে দলের বাইরে কেউ ইচ্ছা করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে হলে সংশ্লিষ্ট দলের মনোনয়ন থাকতে হবে। কারণ বিধিমালা অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করবেন রাজনৈতিক দলগুলো। দলের প্রত্যায়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকেই ইসির পক্ষ থেকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ধরে নেয়া হবে। তবে কোন দলের পক্ষ থেকে একজনের বেশি প্রার্থীর প্রত্যায়নপত্র দেয়া যাবে না। এর আগে পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর একই প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও সম্পন্ন করা হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের শেষ ভাগের যে কোন সময় দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে ইসি। এ বিষয়ে ইসির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে আগামী ২০ ডিসেম্বর দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। আলাদাভাবে না করে দুটি সিটিতে একসঙ্গে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসি। এজন্য নবেম্বরের মাঝামাঝিতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ শেষের আগেই দুই সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়। এজন্য ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচন আয়োজনে কমিশন সচিবালয় ইতোমধ্যেই প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে। সিটি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পদের জন্য ৩শ’ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকার বিধান রাখা হয়েছে। আচরণবিধিতে মন্ত্রী ও এমপিদের প্রচারের বাইরে রাখা হয়েছে।
বিগত ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ এবং ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর। এ হিসেবে এ সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৬ ডিসেম্বর। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন অনুসারে মেয়াদ পূর্তির ৬ মাস বা ১৮০ দিন আগে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা হয় ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। মেয়াদ শেষ হবে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে। ফলে আইন অনুযায়ী দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এক সঙ্গে অনুষ্ঠানে কোন বাধা নেই। তাই বর্তমান ইসির মেয়াদ পূর্তির আগেই তারা জেলা পরিষদ ও দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে চান। জানা গেছে এই তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইসির সচিবালয়ের পক্ষ থেকে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে।