ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বাবার সারা জীবনের ত্যাগ ও বিসর্জনের মূল্যায়ন এই পদ’

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

‘বাবার সারা জীবনের ত্যাগ ও বিসর্জনের মূল্যায়ন এই পদ’

বিডিনিউজ ॥ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘ত্যাগ ও বিসর্জনের প্রতিদান’ হিসেবে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন বলে মনে করছেন তার ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মঙ্গলবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নওফেলের নাম ঘোষণা করেন দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে। তিনি ২০১৪ সালে ঘোষিত ৭১ সদস্যের নগর কমিটির নির্বাহী সদস্যও। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নওফেল বলেন, ‘আমার বাবার সারা জীবনের ত্যাগ ও বিসর্জনের মূল্যায়ন এই পদ। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এবং দলের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাব। তিনি বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে অবিলম্বে সব সাংগঠনিক জেলায় যাব। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই কাজ এগিয়ে নেব। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদে ভূমিকা ও একাধিকবার কারাবরণের কথা তুলে ধরেন নওফেল। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় আমার বাবাকে রাজনীতি ছাড়তে চাপ দেয়া হয়। তিনি নতি স্বীকার করেননি। তিনি কারাবন্দী থাকা অবস্থায় আমার বোন মারা যায়। তিনি কখনই চট্টগ্রাম ছেড়ে যাননি। চট্টগ্রামবাসীকে ভালবেসেই তিনি সারা জীবন রাজনীতি করেছেন।’ জানতে চাইলে ঢাকায় অবস্থানরত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘নওফেলকে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। এজন্য নেত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কালই (বুধবার) চট্টগ্রামে আসব। তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলব।’ নওফেলের নাম ঘোষণার পরই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। ‘ধন্যবাদ মাননীয় নেত্রী। রাজপথের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতৃত্ব বীর মহিউদ্দিনের রক্ত বেইমানি করবে না। অভিনন্দন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাই।’ ১৯৮৩ সালের ২৬ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নওফেল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে বাবা মহিউদ্দিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি। ওই প্রথম রাজনীতির মাঠে সক্রিয় দেখা যায় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক করা এই নওফেলকে। ২০১০ সালেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিবিদ হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ঢাকা বারের এই আইনজীবী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরও সদস্য। তিনি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল বিজয় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নওফেলও। ওই সভাতেই চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চট্টগ্রামের তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন। গণভবনের ওই বৈঠকের আগে একান্ত আলাপে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে ছেলে নওফেলের কাছে জানতে চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই ‘পরবর্তীতে’ নওফেলকে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি দলের সাংগঠনিক অবস্থার কথা জানাতে গণভবনে গিয়েছিলেন মহিউদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন দুই ছেলে নওফেল ও বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন। দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে মহিউদ্দিন ও আ জ ম নাছির অনুসারী নেতাকর্মীদের দুই শিবিরের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান। নওফেল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সেই দ্বন্দ্ব কোন পথে যায় তাই দেখার অপেক্ষায় দলীয় নেতাকর্মীরা।
×