ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ডে অব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৬

স্মার্টকার্ডে অব্যবস্থা

দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান নির্বাচন কমিশনের একটি ভাল ও সফল উদ্যোগ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০০৮ সালে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এতে করে পরবর্তীকালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন যেমন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হতে পেরেছে, তেমনি নাগরিকরাও নানাভাবে উপকৃত হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে। তবে প্রথম উদ্যোগ হিসেবে যথেষ্ট সফল হওয়া সত্ত্বেও এতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতিও ছিল। যেমন, নামের ভুল বানান, বাবা-মা-স্বামীর ভুল নাম ও বিচ্যুতি, ঠিকানার গরমিল, অস্পষ্ট ছবি ইত্যাদি। এহ বাহ্য। বাস্তবতা হলো, ভোটার আইডি কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেননা, রাজধানীসহ সারাদেশে মানুষ ঠিকানা বদলায়, বাস্তুচ্যুত হয়, বিদেশে চলে যায় অথবা মৃত্যুবরণ করে। উপরন্তু আজকের শিশু-কিশোর একদিন তরুণ হয়ে ভোটারে পরিণত হন। হয়ে ওঠেন দেশ ও রাষ্ট্রের একজন গর্বিত নাগরিক। এখন অবশ্য ১৮ বছরের নিচের নাগরিকদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র তথা স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মোটকথা, নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য কাজ ও দায়িত্বের মধ্যে এটিও একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অবশ্য পালনীয় কাজ। তবে অপ্রিয় হলেও সত্য, যে বা যারা এই কাজে জড়িত, তারা ঠিকভাবে দায়িত্বটি পালন করছেন না অথবা পারছেন না। যেমন, যে বা যারা আইডি কার্ডে সংশোধনী আনতে চাচ্ছেন অথবা যাচ্ছেন, তাদের পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যে বা যারা কোন কারণে হারিয়ে ফেলেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র তাদের পদে পদে হেনস্থা ও ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার ও ডিজিটাল ক্যামেরার সুবাদে আদৌ এমনটি হওয়ার কথা নয়। দেশের সব ভোটারের ছবি ও তথ্যসহ ডাটাবেজ সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট দফতর দক্ষ জনবল ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে খুব সহজেই কাজটি সম্পন্ন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ‘সার্ভিস চার্জ’ বাবদ যুক্তিসঙ্গত একটি অর্থ আদায় করা যেতে পারে এর গ্রাহকের কাছ থেকে। এতে কেউই বোধ করি আপত্তি করবে না। কেন যে সেটি হচ্ছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। অধুনা জাতীয় পরিচয়পত্রকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও আধুনিক করে নাম দেয়া হয়েছে স্মার্টকার্ড। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ওয়ার্ডে এবং দু’চারটি ছিটমহলে স্মার্টকার্ড বিতরণও শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রচার না থাকায় সাধারণ মানুষের তেমন সাড়া মিলছে না। যেমন, গত ৩ অক্টোবর থেকে রাজধানীর দুটি থানার তিনটি ওয়ার্ডে কার্ড বিতরণ শেষ হলেও ৪০ ভাগ ভোটারের কাছে পৌঁছেনি স্মার্টকার্ড। এই তথ্য মিলেছে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিস সূত্রে। কোন কোন থানায় অর্ধেকের বেশি ভোটার স্মার্টকার্ড নিতে আসেননি। এর অবশ্য নানা কারণ আছে। ইতোমধ্যে অনেকেই বাসা বদল করেছেন; এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র, দেশের বাইরে অথবা গ্রামের বাড়িতে। নাগরিক জীবনে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। এর বাইরেও জীবনযাপনের গ্লানি মোচনে প্রায় সবাইকেই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্যবিধ পেশায়। তাদের তো শুধু স্মার্টকার্ডের পেছনে ছুটলে চলে না! অন্যদিকে শুক্র-শনিবার সরকারী অফিসে ছুটি। সুতরাং স্মার্টকার্ড বিতরণের গতি আসবে কোত্থেকে ও কিভাবে? ইসির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, যে বা যারা স্মার্টকার্ড নিতে আসতে পারেননি, পরে তারা তা সংগ্রহ করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট থানা অফিস থেকে। তবে তাতেও কিন্তু কিছু ঝুট-ঝামেলা ও সমস্যা থেকে যেতে পারে। সে অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের স্মার্টকার্ড বিতরণে আরও কার্যকর ও গঠনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এলাকাভিত্তিতে চালাতে হবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। দেশে এতগুলো জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে। সুতরাং বার বার প্রচারেও বাধা নেই। সবচেয়ে ভাল হয় ‘ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন’। মনে রাখতে হবে এটি একটি সাংবাৎসরিক নাগরিক সেবা। প্রয়োজনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলারদের কাজে লাগাতে হবে। মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হলে স্মার্টকার্ড বিতরণে অসফল হওয়ার কোন কারণ নেই।
×