ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাজি আলিতে পূর্ণ প্রবেশ মহিলাদেরও

প্রকাশিত: ২০:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

হাজি আলিতে পূর্ণ প্রবেশ মহিলাদেরও

অনলাইন ডেস্ক ॥ চার বছরের নিষেধাজ্ঞা উঠতে চলেছে অবশেষে। দক্ষিণ মুম্বইয়ের হাজি আলি দরগার মূল কেন্দ্রের বিশেষ পবিত্রস্থানে এ বার থেকে ঢুকতে পারবেন মহিলারাও। সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চকে আজ এ কথা জানিয়েছে দরগার ট্রাস্ট। ২০১২ সাল থেকে দরগার মূল কেন্দ্রে মহিলাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ট্রাস্ট। তাই গত চার বছর কোনও মহিলা দরগার মূল কেন্দ্রস্থলে ঢুকতে পারেননি। ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত ছবিটা অবশ্য তেমন ছিল না। তখন পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও সেখানে ঢুকতে পারতেন। কিন্তু দরগা ট্রাস্টের নতুন বিধি মানতে পারেননি অনেকেই। জাকিয়া সোমন ও নূরজাহান নিয়াজ নামে দুই মহিলা হাজি আলি দরগার ট্রাস্টের বিরুদ্ধে বম্বে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, দরগা ট্রাস্টের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৫ এবং ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের বিরোধী। এতে সংবিধানে উল্লিখিত দেশের প্রতিটি নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়টি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সেই সঙ্গেই হাইকোর্ট জানিয়েছিল, কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের ধর্মীয় রীতি-নীতিতে বদল আনা কোনও দরগার ট্রাস্টের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। গত ২৬ অগস্ট বম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়ে জানায়, পুরুষদের মতো মহিলাদেরও হাজি আলি দরগার মূল কেন্দ্রে প্রবেশের অধিকার রয়েছে। তবে দরগা ট্রাস্টের অনুরোধে সেই রায়ের উপর ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। কারণ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিল দরগার ট্রাস্ট। সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির সময় বিচারপতিরা বলেছিলেন, ‘‘যদি কোনও ধর্মীয় স্থানে প্রবেশের অধিকার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য নিষিদ্ধ হয়, তা হলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু একই জায়গায় শুধু কিছু সংখ্যক মানুষ ঢুকতে পারবেন আর বাকিরা পারবেন না, এতে অসুবিধা আছে।’’ বিচারপতিদের ব্যাখ্যা ছিল, কারণ এ ক্ষেত্রে এক শ্রেণির মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি চলে আসছে। গত ৭ অক্টোবর আদালত জানায়, দরগা ট্রাস্ট নিশ্চয়ই সব কিছু দেখে শুনে প্রগতিশীল সিদ্ধান্তই নেবে। আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাওয়ের বেঞ্চকে ট্রাস্টের পক্ষে আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, ‘‘হাজি আলি দরগা ট্রাস্ট নারী-পুরুষের সমানাধিকারে পুরোপুরি বিশ্বাস করে। তাই এর পর থেকে দরগার মূল কেন্দ্রস্থলে মেয়েদের প্রবেশে আর কোনও বাধা থাকবে না।’’ তবে পরিকাঠামোগত কিছু কাজের জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে চার সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছে ট্রাস্ট। এ নিয়ে আদালতে একটি অতিরিক্ত হলফনামাও ট্রাস্ট পেশ করেছে বলে জানিয়েছেন সুব্রহ্মণ্যম। তবে হাজি আলিই প্রথম নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ধর্মস্থানে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। গত এপ্রিলেই বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ভেঙে মহারাষ্ট্রের শনি সিঙ্গনাপুর মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন মহিলারা। কেরলের শবরীমালা মন্দিরে এখনও ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। সেই মামলা এখনও সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। দরগা ট্রাস্টের এই সিদ্ধান্তকে আজ স্বাগত জানিয়েছেন দেশের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। দীর্ঘ দিন ধরে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে লড়ছেন ত্রুপ্তি দেশাই। মূলত তাঁর আন্দোলনের উপর ভর করেই মহারাষ্ট্রের শনি সিঙ্গনাপুর মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের অধিকার পেয়েছেন মহিলারা। আজ ত্রুপ্তি বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত মহিলা ভক্তকূল ও ভারতীয় সংবিধানের জয়।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×