ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাক ডাকার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

নাক ডাকার সমস্যা থেকে  মুক্তি পাবেন যেভাবে

১. শরীর চর্চা করুন : আমরা শরীরের আকৃতি ঠিক করতে, ওজন কমাতে, শরীরের উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য শরীর চর্চা করি, তাহলে নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে এটিকে কেন কাজে লাগাব না? আপনার জিভকে যতখানি পারেন বের করুন এবং কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখার চেষ্টা করুন, আবার করুন। এবার জিভ বের করে আপনার নাক স্পর্শ করার চেষ্টা করুন। ধরে রাখুন এবং আবার করুন। এরপর জিভ বের করে থুতনি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন এবং আবার করুন। প্রতিদিন এই তিনটি কৌশলের প্রতিটি ১২ বার করে চর্চা করুন। আরেকটি ব্যায়াম হচ্ছে দম ফাটানোর হাসির চর্চা আপনার পক্ষে যতখানি জোরে সম্ভব হাসুন এবং কয়েক সেকেন্ড হাসতে থাকুন। এভাবে দশ বার হাসুন। সারা দিনের মধ্যে কয়েকবারই এটি চর্চা করুন। তবে অবশ্যই একাকী হাসবেন। আর নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে আরও একটি দারুণ ব্যায়াম রয়েছে। সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন আপনার নিচের চোয়ালে উপরের থেকে যতখানি সম্ভব বাইরের দিকে ঠেলে ধরুন। এভাবে ১০ সেকেন্ড থাকুন, এরপর চোয়ালে স্বাভাবিক অবস্থানে নিয়ে আসুন প্রতিদিন এভাবে ১০/১২ বার চর্চা করুন। ২. ওজন কমান : নাক ডাকা বন্ধ করার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পথ হচ্ছে ওজন কমানো। আপনি হয়ত অবাক হবেন। কিন্তু ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে নাক ডাকাও কমে আসে, এমনকি এক সময় তা বন্ধও হয়ে যায়। ৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাবেন না : আপনি কি জানেন যে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূৃর্তে কোন কিছু খেলে তা নাক ডাকার একটি কারণ? এটি সত্য যে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভারি খাবার গ্রহণ করলে আপনি নাক ডাকতে পারেন। তাহলে আর কেন? খাবারগুলোকে হজম করতে আপনার শরীরের কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। তাই ভারি খাবার গ্রহণের পর পরই যদি আপনি ঘুমিয়ে পড়েন, আপনার খাদ্য পুণ্য পাকস্থলী ঝিল্লিকে চাপ দিতে থাকে। ঝিল্লির এই চাপ আপনার শ্বাসনালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, ফলে আপনার নাক ডাকে। সুতরাং, আপনার রাতের শেষ খাবারটি ঘুমাতে যাওয়ার অন্ততপক্ষে সাড়ে তিন ঘণ্টা আগে হওয়া উচিত। ৪. একটি নিরেট, সোজা বালিশ ব্যবহার করুন : ঘুমানোর সময় ঘাড় সোজা থাকলে নাক ডাকা কমে আসবে। ৫. অলিভ অয়েল গ্রহণ করুন : কথিত আছে অলিভ অয়েল নাক ডাকা কমাতে সাহায্যে করে। ঘুমানোর আগে দুই ফোঁটা করে ৪ ফোঁটা অলিভ অয়েল গ্রহণ করুন। এর ফলে নাক ডাকার শব্দ কমে আসবে এবং কিছু সময় পর নাক ডাকাও বন্ধ হয়ে যাবে। ৬. ধূমপান বর্জন করুন : ধূমপান যে শুধু নাক ডাকার একটি কারণ তাই নয় বংে তা পুরো শরীরের জন্যই ক্ষতিকারক। ৭. নাসারন্দ্রর ময়লা-জট পরিষ্কার করুন : ময়লা –জট পরিষ্কার করার জন্য হিউমিডিফায়ার (আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) ব্যবহার করুন যাতে আপনি নাক ডাকার কষ্ট থেকে মুক্তি পান। ব্যথা নাশক ঔষধ গ্রহণও পরিহার করুন। ব্যথা নাশক ঔষধ সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যা পেশিসমূহকে এবং কণ্ঠ নালীর কলা সমূহকে অতিরিক্ত শিথিল হতে সাহায্যে করে। ব্যথা নাশক সিøপ এ্যাপনিয়ার সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত যার কার্ডিওভাসকুলার রোগ হতে পারে। ৮. ঘুম নিয়ন্ত্রণ : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে জেগে উঠুন। অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাবেন। ৯. ব্রাহ্মি ঘি গ্রহণ করুন : প্রতিদিন সকালে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি নাকে তিন ফোঁটা উষ্ণ ব্রাহ্ম ঘি অথবা সাধারণ ঘি গ্রহণ করুন। ১০.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন : আপনার যদি ধুলো, ময়লা বা মাইট পোকায় এ্যালার্জি থাকে তাহলে আপনার বেডরুমকে ভাল করে পরিষ্কার রাখা জরুরী এবং যদি সম্ভব হয় কার্পেট ও পর্দা ব্যবহার করবেন না, কারণ এগুলোতে প্রচুর ধুলো এবং মাইট জমে। ঘন ঘন বিছানা পরিষ্কার করতে হবে এবং লেপ-তোষক, কাথা- বালিশ গরম করতে হবে। ১১. মেডিটেশন : মেডিটেশন (ধ্যান) বা শিথিলায়নের মাধ্যমে নাক ডাকার সমস্যা দূর করুন। ১২. ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম স্যুপ খাবেন : নাসিকা গহ্বরের রাস্তা থেকে কফ পরিষ্কার করতে গরম স্যুপ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপনার ঘুম হবে ভাল। ১৩. মুখ বন্ধ করুন এবং চিবানোর অভিনয় করুন : লক্ষ্য রাখবেন মুখের দিকই যেন সমানভাবে নড়ে। ‘উমমমম’ করে শব্দ করুন যেন আপনি সত্যিই একটি মজার খাবার খাচ্ছেন। প্রতিদিন ১ মিনিট এভাবে করুন। ১৪. টেনিস বল ট্রিক অনুসরণ করুন : যদি চিৎ হয়ে শোয়ার কারণে আপনি নাক ডাকেন তাহলে টেনিস বল ট্রিক অনুসরণ করুন। আপনার টি-শার্টের ভিতর অথবা ট্রাউজারের পেছনের দিক থেকে একটি টেনিস বল রেখে ঘুমান। আপনি বলটিকে আলাদা এক টুকরো কাপড় দিয়ে টি-শার্ট বা ট্রাউজারের সঙ্গে সেলাই করে নিতে পারেন। এরপর আপনি যখনই চিৎ হয়ে শুতে যাবেন তখনই টেনিস বলের কারণে চিৎ হয়ে শোয়ার পরিবর্তে পাশ ফিরে শোবেন। টেনিস বলের পরিবর্তে পিঠের পেছনে একটি বালিশ রাখতে পারেন। খুব শীঘ্রই আপনি পাশ ফিরে শুয়ে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তখন আর টেনিস বলের প্রয়োজন হবে না। ১৫. ঐঁসরফরভরবৎ অথবা ঝঃবধস ঠধঢ়ড়ৎরুবৎ ব্যবহার করুন : বাতাসের আর্দ্রতাহীনতার কারণে ও নাক ডাকার ঘটনাটি ঘটে। বেডরুমে ঐঁসরফরভরবৎ (আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রক যন্ত্র) অথবা ঝঃবধস ঠধঢ়ড়ৎরুবৎ (জলীয়বাষ্প সৃষ্টিকারী যন্ত্র) স্থাপন করলে তা আপনার শ্বসনতন্ত্রকে সিক্ত বা ভেজা রাখতে পারে। কিন্তু এই যন্ত্রগুলোকেও অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে, দুশ্চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলে দিন আর উপরের সহজ কৌশলগুলো চেষ্টা করুন। সুজন মনজুর খিলগাঁও, তিলপাপাড়া
×