ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ভার্চুয়াল জগতে তারুণ্যের ন্যায় অন্যায়

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

ভার্চুয়াল জগতে তারুণ্যের ন্যায় অন্যায়

সম্প্রতি ভারতের ওয়েবসাইটগুলোর ওপর বিচিত্র ধরনের সেন্সরশিপের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। অনেকের চোখে এমন সব নোটিস পড়েছে যা থেকে ধারণা জন্মে যে নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে ঢুকলে জেল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। অবশ্য এই নোটিসগুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। এর মধ্যে নতুনত্বও কিছু নেই। আগেও হয়েছে। উদ্বেগজনক ব্যাপার হচ্ছে ওয়েবসাইট বন্ধের এই প্রশ্নসাপেক্ষ উদ্যোগগুলোতে উচ্চতর বিচার বিভাগকে পর্যন্ত টেনে আনা হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে ভারতের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) বেশকিছু টরেন্ট সার্চ ইঞ্জিন ও কমিউনিটি আটকে দিয়েছিল। গুগল ওয়েবসাইটগুলোকে যে তথ্যপ্রবাহ যোগায় টরেন্ট সার্চ ইঞ্জিনগুলোও সেই কাজেই করে থাকে টরেন্টদের ক্ষেত্রে। কপিরাইটে হস্তক্ষেপকারী সূচীভুক্ত এবং গুগল সেগুলো সার্চ করতে পারে। এই কারণে কিন্তু গুগলকে বন্ধ করে দেয়া হয় না। তবে বেসরকারী বিনোদন কোম্পানিগুলো গত পাঁচ বছর ধরে ভারতে এই কাজগুলোই করেছে। তামিল ছায়াছবি শিংযাম এবং থ্রির প্রয়োজকদের ভাড়া করা কোম্পানিগুলো ছায়াছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই ভিমিও, ডেইলি মোশনের মতো ওয়েবসাইট এবং আটকে দেয়া অসংখ্য সার্চ ইঞ্জিন কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে অথচ এদের কেউ যে কপিরাইটে হস্তক্ষেপ করেছিল তার একটির দৃষ্টান্ত হাজির করেনি। ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সময় সনি গুগল ডকসও আটকে দিতে পেরেছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে এই বিনোদন কোম্পানিগুলো ‘জন ডো’ আদেশের অপব্যবহার করেছিল এবং ওয়েবসাইটসমূহ আটকে দেয়ার জন্যও আইএসপিকে অনুরোধ জানিয়েছিল। আইএসপি প্রাইভেট সেন্সরশিপের নজির হিসেবে এসব অনুরোধ অগ্রাহ্য করার পরিবর্তে মেনেও নিয়েছিল। অন্যান্য ক্ষেত্রে (যেমন সনির ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ঘটনায়) আদালত আইএসপিকে শত শত ওয়েবসাইট আটকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। অথচ এদের বিরুদ্ধে কপিরাইটে হস্তক্ষেপের কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ভারতীয় আইনে আইএসপিদের কপিরাইট অভিযোগে ওয়েবসাইটগুলো আটকে দেয়ার সুযোগ দেয়া আছে কিনা কিংবা থাকলে কিভাবে আছে সে সম্পর্কে হাইকোর্টের বিচারকরা সুসমন্ধিত তত্ত্ব পর্যন্ত উদ্ভাবন করেননি। ভারতের টেলিযোগাযোগ বিভাগ আইএসপিগুলোকে যে লাইসেন্স দেয় সেই লাইসেন্সেই আইএসপিকে প্রাইভেট সেন্সরশিপে লিপ্ত হওয়া নিষেধ করা হয়েছে অথচ সেটা অমান্য করা হলেও কোন আইএসপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত আজ অবধি পাওয়া যায়নি। এ বছরের প্রথম দিকে টাটা স্কাই দিল্লী হাইকোর্টে ইউটিউবের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ দায়ের করেছিল। অভিযোগটা ছিল এই যে ইউটিউবে এমন কিছু ভিডিও আছে যেখানে মানুষকে শিখানো হয়েছে কিভাবে তাদের সেট-টপ বক্সগুলোকে টাট স্কাইয়ের প্রযুক্তিগত তালাগুলোর কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট ভিডিওগুলোর দ্বারা ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এটা ধরে নিয়েই দিল্লী হাইকোর্ট ইউটিউবকে এমন কোন কনটেন্ট না রাখার নির্দেশ দেয় যাতে করে প্রচলিত ভারতীয় আইন লঙ্ঘিত হয়। হাইকোর্ট এ প্রসঙ্গে ভারতের কপিরাইট আইনের ৬৫ ক ধারা ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারার উল্লেখ করে। প্রথম ধারাটিতে টাটা স্কাই যে ধরনের প্রযুক্তিগত তালা স্থাপন করেছে ব্যবহারকারীকে তা কয়েক ডজন কারণে ভাঙ্গার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধারাটিতে বলা আছে যে সেটা ভাঙ্গা যেতে পারে যদি দেখা যায় যে অসাধুতা বা জালিয়াতি করা হয়েছে, কম্পিউটার ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে আইন লঙ্ঘনের অভিপ্রায় আছে কিন্তু এর কোনটাই ইউটিউবের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়নি। আদালত কোন অন্যায় বা অবৈধতা খুঁজে না পেলেও ইউটিউবের ভিডিওগুলো ব্লক করে দেয় এবং এইভাবে আবার সেন্সর আরোপকারী কর্পোরেশনগুলোর পক্ষ অবলম্বন করে। ২০১৩ সালে কমলেস ভাসওয়ানি নামে ইন্দোরের এক আইনজীবী অনলাইনের সকল পর্নোগ্রাফি সক্রিয়ভাবে আটকে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সুপ্রীমকোর্টে একটি পিআইএল দাখিল করেন। সাধারণ অবস্থায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এই ভিত্তিতেই কেবল সংবিধানের ৩২ ধারায় একটি পিআইএলের আদালতে গ্রহণযোগ্যতা থাকে। কিন্তু ভাসওয়ানির অভিযোগের মধ্যে এমন কোন বিষয় ছিল না যার দ্বারা বলা যায় যে পর্নোগ্রাফি আটকে না রেখে রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে অথচ, বাদীর আর্জিতে মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে চাওয়া হয়েছে, কেননা কোনটা বেআইনী পর্নোগ্রাফি এবং কোনটা নয় তা নির্ণয় করার কোন উপায় সরকারের নেই। সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
×