ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক স্টোকস

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক স্টোকস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চওড়া হাসি নিয়েই ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে আসলেন বেন স্টোকস। কারণ তিনিই শ্বাসরুদ্ধকর পাঁচদিনের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ইংল্যান্ড দলের জয়ের নায়ক। যদিও বাংলাদেশকে জিততে না দিয়ে তিনিই খলনায়ক গৌরববঞ্চিত করার কারণে। এশিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়টা তিনিই পাইয়ে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া বাংলাদেশের শেষ দুটি উইকেট তুলে নিয়ে। চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিজয়ের মূল নায়কই তিনিÑ ব্যাটে আর বলে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট আর দ্বিতীয় ইনিংসে মহাগুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট নেয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে বিপদগ্রস্ত ইংল্যান্ডকে ম্যাচের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ৮৫ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে রক্ষা করেছেন। এবার বাংলাদেশ সফরে আচরণগত কারণে সমালোচিত হওয়া এ অলরাউন্ডার খলনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হয়ে বাংলাদেশকে হারানোর কারণেও যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে খলনায়ক হয়েছেন তিনি। তবে ইংল্যান্ডের জন্য ওয়ানডে সিরিজের পর প্রথম টেস্টেও মহানায়ক হয়ে গেলেন ২৫ বছর বয়সী এ তরুণ। শেষ দুই উইকেটে ৩৩ রান মাত্র, তাহলেই ছোট দল বাংলাদেশের কাছে পরাজয়ের লজ্জা সঙ্গী হবে। পঞ্চম দিনে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম যে আত্মবিশ্বাসী মনোভাবে শুরু করেছিলেন তাতে প্রথম তিন ওভারে সেই আশঙ্কা আরও জেঁকে বসেছিল ইংল্যান্ড দলের ওপর। কিন্তু দিনের চতুর্থ ওভারে তিনটি ডেলিভারিতেই সেসব শঙ্কা কাটিয়ে দলকে বিজয়ী করলেন স্টোকস। দিনের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই তাইজুলকে এলবিডব্লিউ করে ফিরিয়ে দেন। তখনও জয় থেকে ২৩ রান দূরে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে শফিউল ইসলাম আগেও ইংল্যান্ড দলকে ব্যাট হাতে ভোগান্তি উপহার দিয়ে দু’বার হারিয়ে দিয়েছেন (ওয়ানডেতে)। এবার তাকে সে সুযোগ দেননি স্টোকস, ওই ওভারের তৃতীয় বলেই আবার এলবিডব্লিউ করে শফিউলকে সাজঘরে পাঠিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন। ২৬৩ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ২২ রানের নাটকীয় জয় দিয়ে রোমাঞ্চকর চট্টগ্রাম টেস্টে হাসিটা হেসেছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডে সিরিজেও এভাবেই দলকে দুটি ম্যাচ জিতিয়ে সিরিজসেরা হয়েছিলেন স্টোকস। টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তিনি সেটাই করলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে মাত্র ১৮ রানে ফিরে গেলেও, নিশ্চিত লিড নেয়ার পথে এগোতে থাকা বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে গুটিয়ে দিয়েছেন তিনিই। তৃতীয় দিন সকালে তার গতির ঝড়েই মাত্র ২৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তিনটিই নিয়েছিলেন স্টোকস। সবমিলিয়ে ৪ উইকেট। ২৮৬ রানের টার্গেটে খেলতে নামা বাংলাদেশ যখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর তখনও দুই উইকেট নিয়ে সেই স্বপ্নটাকে ধূলিসাত করেছেন। এর আগে ব্যাট হাতে ৮৫ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে। মাত্র ৬২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়া দলকে রক্ষা করেন। তাই ইংলিশদের বিজয়ের নায়ক স্টোকস অথচ ওয়ানডে সিরিজে মাঠে তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে। ম্যাচশেষে অভিবাদনের সময়ও বিতর্ক, দু’দিনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচেও স্টোকস আচরণগত কারণে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় সমালোচিত হন। সেটা তার পারফর্মেন্সে ছাপ ফেলেনি। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাক্ষাত খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ঠিকই একক নৈপুণ্যে দলকে জিতিয়ে মহানায়ক হয়ে গেছেন। আবার হতাশায় মুষড়ে পড়া সাব্বিরকে সান্ত¡না দিয়েছেন কাছে এসে। মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ও সাব্বিরের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথম ইনিংসে হেলমেটে আঘাত পাওয়ার পর সাব্বিরের খোঁজ নিয়েছেন। একইসঙ্গে বিপরীতধর্মী আচরণ আর ব্যাট-বলের নৈপুণ্যে তাই স্টোকস নায়ক ও খলনায়ক উভয় ভূমিকাতেই ছিলেন।
×