ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কষ্ট ভুলে শিক্ষাটাকেই বড় করে দেখছেন মুশফিক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

কষ্ট ভুলে শিক্ষাটাকেই বড় করে দেখছেন মুশফিক

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পর চট্টগ্রাম টেস্টে ২২ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। নিজেদের সাদা পোশাকের ক্রিকেটের ইতিহাসে আরও একটি রোমাঞ্চের জন্ম দিয়ে শেষ পর্যন্ত হতাশাই সঙ্গী হয়েছে। আফসোসে পুড়ছেন অগণিত ভক্ত-অনুরাগী। মাঠে লড়াই করেছেন যারা সেই ক্রিকেটারদেরও কষ্টটা কম নয়। বাস্তবতা, এটাই ক্রিকেট। দুঃখ ভুলে তাই সিরিজের প্রথম টেস্ট থেকে পাওয়া শিক্ষাটাকেই বড় করে দেখছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। পাশাপাশি এটিকে ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। দীর্ঘ চৌদ্দ মাস পর ফিরে ইংল্যান্ডের মতো প্রভাবশালী দলের বিপক্ষে সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর দিতে পেরে বরং গর্বিত তিনি। মুশফিক বলেন, ‘সবার মতো আমারও খারাপ লাগছে। হয়ত জিততে পারতাম। কিন্তু আমাদের জন্য বিষয়টা জয়-পরাজয়ে সীমাবদ্ধ নয়। পনেরো মাস পর টেস্টে ফিরে এতটা আশাও করা যায় না। এরপরও যেভাবে লড়াই করেছি তাতে আমি গর্বিত। ভবিষ্যতে এই শিক্ষাটা কাজে লাগবে।’ শেষ দিনে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান, ইংল্যান্ডের ২ উইকেট। ক্রিকেটাররা তো বটেই, আবেগাক্রান্ত সাধারণ ভক্তকুলও হয়ত সারা রাত ঘুমাতে পারেননি। একপ্রান্তে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অপরাজিত সাব্বির রহমান (৬৪*)। একটা কিছু হবে। কিন্তু আভিজাত টেস্ট যে কেবল আবেগের খেলা নয় মুশফিকের ব্যাখ্যায় বেরিয়ে এসেছে সেই সত্যটাও, ‘স্বাভাবিকভাবেই ২ উইকেটে ৩৩ রান করা অনেক কঠিন সমীকরণ। ম্যাচ ৯০-৯৫ শতাংশ ইংল্যান্ডের দিকে হেলে ছিল। ওদের টেল-এন্ডারদের প্রথম শ্রেণীতে সেঞ্চুরি আছে। আমাদের তেমনটা নেই। আর থাকলেও ওদের প্রথম শ্রেণী আর আমাদের প্রথম শ্রেণী এক নয়, এটি নিশ্চই সত্য।’ আশা জাগিয়েও প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ২৯৩ রানের জবাবে ২৪৮Ñএ অলআউট বাংলাদেশ। বাজে শট খেলে আউট হন সাকিব-আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শেষ দিনে ৩৩ রান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও প্রথম ইনিংসের ব্যবধানই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে বলে মনে করেন মুশফিক। বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক বলেন, ‘আমার মনে হয় প্রথম ইনিংসের ওই রান ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। আমরা যদি ২৯০ বা ২৮০ রানও করতাম...। ওরা দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ২৪০, আমরা ২৬৩। সেদিক থেকে বলব প্রথম ইনিংসের সামান্য পার্থক্যটাই শেষ পর্যন্ত ফল নির্ধারণে ম্যাটার করেছে।’ প্রথম ইনিংসের আফসোস থেকেই উঠে আসে সাকিবের নাম। যখন ধৈর্য ধরার কথা তখন মঈন আলীকে তেড়ে ফুঁড়ে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন দলের অন্যতম ভরসা। তার কাছ থেকে যেটি মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। বিষয়টা অধিনায়ক নিজেও স্বীকার করেছেন, ‘তার (সাকিব) মতো একজনের কাছ থেকে আমরা কেউই এমনটা আশা করিনি। ও নিজেও জানে কাজটা ঠিক হয়নি। সে যত প্রভাব বিস্তার করে খেলবে তা আমাদের দলের জন্য আরও ভাল হবে। এটা সাকিব নিজেও জানে। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, আশা করি এই ঘটনা থেকে সবাই জিনিসগুলো শেখার চেষ্টা করবে। সে নিজেও আর এমন ভুলের পুনরাবৃত্তি চাইবে না।’ প্রথম ইনিংসে এক পর্যায়ে ৪ উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২২১ রান। সেখান থেকে শেষ ২৭ রানে ৬ উইকেটের পতন। বাংলাদেশ শেষ করে ৪৫ রানে পিছিয়ে থেকে। সাকিব ফেরেন ৩১ রানে। ২২ রানে হারের পর সেটি আরও বেশি কষ্ট হয়ে ধরা দেয়। তবে সর্বোপরি সন্তুষ্ট মুশফিক। সন্তুষ্ট দুর্দান্ত একটি লড়াই উপহার দিয়ে। টেস্ট কাপ্তান বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম যেন ধারাবাহিক ভাল ক্রিকেট খেলতে পারি। একটা সেশন ভাল, আরেকটা সেশন যেন খারাপ না হয়। দিনে দিনে যেন উন্নতি করতে পারি। চট্টগ্রাম টেস্টে চারটা দিন আমরা ওদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে এগিয়েছি। এটা প্রমাণ করে ওয়ানডের পর টেস্টেও পরিণত হচ্ছি। এটা দারুণ ইঙ্গিত।’ শুক্রবার মিরপুরে শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। টাইগার অধিনায়ক প্রতিপক্ষকে প্রাপ্য সম্মান জানাতে গিয়ে বেন স্টোকসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। স্পিনবান্ধব উইকেটেও ইংলিশ পেসার যেভাবে বল করেছেন সেটি প্রশংসনীয়। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তুলে নিয়েছেন ৪ ও ২টি করে উইকেট। পাশাপাশি ব্যাট হাতে ১৮ ও ৮৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা।
×