ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে মধ্যপাড়া রেঞ্জে পাঁচ হাজার একর বেদখল

হারিয়ে যাচ্ছে শালবন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

হারিয়ে যাচ্ছে শালবন

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ মধ্যপাড়া রেঞ্জে প্রতিদিন এলাকার প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা দখল করে নিচ্ছে বনভূমি। এতে কমে যাচ্ছে বনের গাছের সংখ্যা। বনের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে হাটবাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। দিনাজপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জের ৭ হাজার একর জমির মধ্যে এখন ৫ হাজার একর ভূমিই বেদখল রয়েছে। নীতিমালা না থাকলেও বনের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একাধিক বনখেকো কাঠচেড়াই মিল। দিনাজপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জটি এক সময় শালবাগানের জন্য বিখ্যাত হলেও, বনদস্যুদের গাছ চুরি ও ভূমি দখলের জন্য হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহী শালবাগান। মধ্যপাড়া রেঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, বন বিভাগের জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে হাটবাজার। বসেছে একাধিক স-মিল। এই দৃশ্য শুধু মধ্যপাড়ায় নয়, একই দৃশ্য দেখা যায় এ রেঞ্জের আওতাভুক্ত আফতাবগঞ্জ, কুশদহ, ভবানীপুর বিটেও। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বন বিভাগ নিয়ে গঠিত মধ্যপাড়া রেঞ্জ। এ রেঞ্জের অধীনে রয়েছেÑ মধ্যপাড়া সদর, কুশদহ, আফতাবগঞ্জ, বীট ও ফুলবাড়ী এবং পার্বতীপুর উপজেলা নার্সারি। জানা গেছে, মধ্যপাড়া রেঞ্জে মোট বনভূমির পরিমাণ হলো ৬ হাজার ৮শ’ একর। এর মধ্যে আফতাবগঞ্জ বীটে ২ হাজার ৬শ’ একর, মধ্যপাড়া বীটে ১ হাজার ৪শ’ একর, কুশদহ বীটে ১ হাজার ২শ’ একর ও ভবানীপুর বীটে ১ হাজার ৬শ’ একর বনভূমি রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বর্তমানে বন বিভাগের দখলে রয়েছে মাত্র ২ হাজার একর ভূমি। মধ্যপাড়া রেঞ্জটি এক সময় শালকাঠের বিখ্যাত হলেও এখন সেই শালগাছ নেই বললেই চলে। ফুলবাড়ী-রংপুর মহাসড়কের পাশে চেচেয়া নামক স্থানে ছোট একটি শালবাগান ছাড়া আর কোথাও নেই শালগাছ। সেখান থেকেও প্রতিনিয়তই চুরি হচ্ছে শালগাছ। মধ্যপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রঞ্জিবুল ইসলাম জানান, একাধিক নোটিস দেয়ার পরও ভূমিদস্যুরা সরকারী ভূমির দখল ছাড়েনি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও দেয়া হয়েছে। সেই মামলা থেকে জামিনে এসে তারা আবার আগের মতো কাজ করছে। তিনি জানান, জনবলের অভাবে উদ্ধার করা যাচ্ছে না বেদখল হওয়া বনভূমি। এক বনকর্মকর্তা তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বনদস্যুরা এলাকার প্রভাবশালী ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকায়, তাদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ কারণে বন কর্মকর্তারাও তাদের বিরুদ্ধে কোন জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। বনের জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে এর আগে অনেক বন কর্মকর্তা বনদস্যুদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এ কারণে দিনদিন বেদখল হয়ে যাচ্ছে মধ্যপাড়ার বনভূমি, কমে যাচ্ছে বনসম্পদ।
×