ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাভাতায় লেখাপড়া আর ভিক্ষায় চলে সংসার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

শিক্ষাভাতায় লেখাপড়া আর ভিক্ষায় চলে সংসার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২৪ অক্টোবর ॥ প্রতিবন্ধী আসাদুল অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সরকারের দেয়া শিক্ষাভাতায় কোনমতে লেখাপড়ার খরচ চললেও প্রতিবন্ধী অপর এক বোন নিয়ে সংসার চলে না তার। তাই প্রতিদিন স্কুলটাইম শেষে দুই ভাইবোন ভিক্ষা করে। আসাদুলের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল সদর থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে রায়তাঁতেরকাঠি গ্রামে। গত ১১ আগস্ট লিভার ক্যান্সারে মারা যান বাবা মোসলেম হাওলাদার। এর আগে ২০০৬ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান মা জয়নব বিবি। আসাদুল জানায়, তিন বছর বয়সে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই পা অবশ হয় তার। সংসারের টানাপোড়েন সত্ত্বেও স্থানীয় ডাক্তার-কবিরাজের ঝাড়-ফুঁক, চিকিৎসাতেও ডান পা আর সুস্থ হয়নি। চার বছর বয়সে একই অবস্থা হয় বড় বোন ফাকিনুরের। মেরুদ-ের হাড় বেঁকে শরীর বিকৃত হয়েছে, একই সঙ্গে দু’পায়ের চলন শক্তি হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় তাকে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ফাকিনুর-আসাদুলের আশ্রয় হয় প্রতিবন্ধী বড়বোন রোকেয়া বেগমের সংসারে। অসুস্থ স্বামী আর দুটি মেয়ে সন্তান নিয়ে রোকেয়ারও অভাবের সংসার। তবুও ভাইবোন বলে কথা। সাধ ও সাধ্যের বাইরে নিজ বসতঘরে আশ্রয় দিতে হয়েছে অসহায় আসাদুল-ফাকিনুরকে। সেখানে থেকেই পাশের তাঁতেরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে আসাদুল। প্রাথমিক স্কুল সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে বাকলা তাঁতেরকাঠী সরকারী প্রাইমারী স্কুল থেকে। আসাদুল জানায়, ‘এ অবস্থায় পড়ালেখা ছাড়া জীবনে বাঁচবার মতো পথ কই। বছরে ৭ হাজার ২শ’ টাকা শিক্ষাভাতা পাই। তাতে পড়াশোনার খরচ চললেও তিনবেলা খাওন জোটে না। সবকিছুর দাম বেশি। হাত পাততে অয় মানুষের কাছে।’ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল বিতরণের তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। আসাদুল জানায়, ‘একটা হুইলচেয়ার হলে বুইনটা (বড়বোন ফাকিনুর) একটু ভালভাবে চলাফেরা করতে পারত। বিত্তবানরা সামান্য কিছু সাহায্য করলে বড়বোন ফাকিনুরের হাঁস-মুরগি কিংবা ছাগল পালনের মতো ছোটখাটো কাজে সহজে দু’ভাইবোনের খরচ চালানো যেত। স্থানীয় বাজারে কম্পিউটার-ফটোকপি দোকানের মতো ছোটখাটো দোকান করতে পারলে লেখাপড়াসহ দু’বেলা খাবারের জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে অইতে না।’
×