ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

আওয়ামী লীগের ইতিহাস বলতে গেলে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস। দলটির সবচেয়ে বড় মূলধন নীতি ও নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়। মাঝেমধ্যে যদিও তাতে বিঘœ ঘটেছে। দলটি তার নীতির জন্য ছিল জনপ্রিয় এবং সেই নীতির ওপর ভিত্তি করে এক সময় সাহসী নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু যতটা জনপ্রিয় ছিলেন, তার দল আওয়ামী লীগ ততটাই জনপ্রিয় ছিল। নেতা ও নেতৃত্বের সমন্বিত জনপ্রিয়তাই আওয়ামী লীগকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় সংগঠনে পরিণত করেছিল। কিন্তু আজ সে অবস্থানটি আর নেই। সংগঠন ও নেতৃত্বের মধ্যে বিরাট ফারাক দেখা যায়। দলটি ক্রমশ নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এমন একটি ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে যাতে মনে হতে পারে আওয়ামী লীগের মূলধন শেখ হাসিনা ও তার জনপ্রিয়তা। এ ছাড়া এই যে দলটি বিশাল মহীরুহের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে তার মাটির তলে শিকড়ের সন্ধান মেলা কঠিন। শেখ হাসিনা সূর্যের মতো আলো দিয়ে সংগঠনের সব অন্ধকার ঢেকে রেখেছেন। আর এ পরিস্থিতিতে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আগ্রহের মধ্য দিয়ে দলটির দু’দিনব্যাপী কাউন্সিল সম্পন্ন হলো। শেখ হাসিনা আবারও দলের প্রধান হলেন। এই পদে তিনি গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে রয়েছেন। দলে তার বিকল্প নেই। দলীয় নেতাকর্মীরাও তার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল। দলের কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব এসেছে পুরনোদের পাশাপাশি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। আমরা নয়া নেতৃত্ব ও কমিটিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এবারের কাউন্সিল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতো দেশবাসীও ইতিবাচক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন। তারাও আশা করেন নতুন নেতৃত্বের পাশাপাশি সংগঠন ও নেতৃত্বের মাঝে বিদ্যমান পার্থক্য দূরীভূত হবে। নেতৃত্বে নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সম্পৃক্ত হোক। সুবিধাভোগী ও নব্য ধনীদের কবল থেকে সংগঠন মুক্ত হোক। দুর্নীতি ও গণপীড়নের অভিযোগ থেকে আঞ্চলিক নেতা ও এমপিরা মুক্ত থাকুক। সন্ত্রাসের গডফাদাররা দল থেকে বিতাড়িত হোক। দলকে তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় অবস্থানে ফিরিয়ে আনা হোক। তাহলেই শেখ হাসিনার বর্তমান শক্তিশালী অবস্থান এবং সংগঠন সমন্বিত হয়ে বাংলাদেশকে তার কাক্সিক্ষত উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে। একই সঙ্গে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মৌলবাদকে মোকাবেলা করে দেশের গণতান্ত্রিক সত্তাকে স্থায়িত্বদানের শক্তিমত্তা অর্জন করুক। কাউন্সিলরদের বক্তব্যে এসবই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভেতর থেকে উঠে আসা একটি রাজনৈতিক দল। উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকালে দলটির জন্য এটা একটা বড় অর্জন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমেও পরিবর্তন আসতে বাধ্য। ক্ষমতাসীন দল ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটালে পরিণত করতে চায়। কিন্তু সংগঠন সেক্ষেত্রে অনেক পেছনে পড়ে আছে। এবারের কাউন্সিল জাতির ভাগ্য সমুন্নত করার আরেকটি মহাসুযোগ এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি সুসংগঠিত হয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, শেখ হাসিনার শক্তিশালী নেতৃত্বের পেছনে ঐক্যবদ্ধ জনমত গড়ে তুলতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের ভাগ্যের যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এবারের কাউন্সিল ছিল সুশৃঙ্খল এবং সুসমৃদ্ধ। তৃতীয় দফা নির্বাচিত হওয়ার জন্য দলকে এখনই সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। আর দলটির আবারও নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা জরুরী দেশ ও জাতির স্বার্থে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে তৃণমূল পর্যায়ে দলের কার্যক্রমের ওপর। দেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ দুর্বারগতিতে এগিয়ে যাবে সেটাই প্রত্যাশা।
×