ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

একজন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

একজন ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ যে জনগণের দল, তৃণমূলের দল, প্রকৃত কর্মীদের দল, প্রকৃত নেতাদের দল সর্বোপরি রাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তা আবারও ২২-২৩ অক্টোবরের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো। প্রতিবারের জাতীয় কাউন্সিলের ন্যায় এবারও পূর্বঘোষিত অনেক চমক লক্ষ্য করা গেছে। কারণ অন্যান্য সময়ের মতো এবারও কথা উঠেছিল শেখ হাসিনাই হচ্ছেন সভাপতি এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হচ্ছেন তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু শেখ হাসিনা সভাপতি হয়েছেন ঠিকই কিন্তু চমক এসেছে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। আর ওবায়দুল কাদের এবারে সাধারণ সম্পাদক হওয়াতে আওয়ামী লীগের যে ৬,৫৭০ কাউন্সিলর তারা তো খুশি হয়েছেনই, সেই সঙ্গে সারাদেশের রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক আওয়ামী পরিবারের লক্ষ-কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। খুশি হয়েছেন অন্য রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষও। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক রাজনীতি সচেতন। কাজেই সবাই চান রাজনীতি যেন থাকে রাজনীতিবিদদের কাছেই। ওবায়দুল কাদের পুরোদস্তুর আগাগোড়া একজন ফুলটাইম রাজনীতিক। রাজনীতি ছাড়া তাঁর আর কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। ওবায়দুল কাদের তাঁর স্কুল ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষক বাবা মোশাররফ হোসেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর মা ফজিলাতুন্নেছা সুগৃহিণী এবং স্ত্রী ইসরাতুন্নেছা একজন আইনজীবী। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ এলাকা থেকে। তিনি বসুরহাট হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং নোয়াখালী সরকারী কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক সম্মানসহ ¯œাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন, সেই রাজনৈতিক ধারাবহিকতায় তিনি এখনও সক্রিয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ’৬৬-এর ৬ দফা ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। তিনি সব সময়ই তরুণ প্রজন্মের একজন হিরোয়িক নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি আড়াই বছর কারাবন্দী ছিলেন। তারপর ছাত্রলীগে তাঁর পূর্ব অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে কারাগারে থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সে সভাপতির দায়িত্বও তিনি পরপর দুই মেয়াদ পালন করেন। তারপর থেকে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ছাত্রলীগের ‘মুরব্বি’ হিসেবে কাজ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে। ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তৎকালীন সরকারের যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁর সফল দায়িত্বকাল শেষ করেন। তখনও তিনি হয়ে ওঠেন যুব সমাজের পছন্দের পাত্র এবং মধ্যমণি। ওবায়দুল কাদের ২০০০-২০০২ মেয়াদে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক এবং ২০০২-২০০৯ মেয়াদে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৭ সালে তৎকালীন সামরিক ছদ্মবেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে ৯ মার্চ ২০০৭ তারিখে গ্রেফতার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে বাধ্য হন। তারপর তিনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ের সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অন্যদের সঙ্গে মারাত্মকভাবে আহত হন। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম অর্থাৎ প্রেসিডিয়াম মেম্বার নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হলে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য তিনি প্রথম দিকে মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব না নিয়ে কিছু সময়ে দলকে গুছিয়ে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর তিনি ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন এবং পরবর্তী নতুন সরকারে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি আবারও দ্বিতীয়বারের মতো যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবেই তাঁর দায়িত্বে বহাল থাকেন। তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন আগেকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ই এখন পরিবর্তিত ‘সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়’ হিসেবে পরিচিত। তিনি একসময় জনপ্রিয় দৈনিক বাংলার বাণীতে সহকারী সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকে ৯টি বই বের করেছেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সম্মেলন প্যান্ডেলজুড়ে মুহুর্মুহু ধ্বনিতে উদ্ভাসিত হয়েছে সম্মেলনস্থল। অভিনন্দনের ঝড় উঠেছে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এর একটিই কারণ, তিনি এখন তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন নেতা। সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও সম্মেলনের ঘোষণামঞ্চে একথা উল্লেখ করেছেন। কাজেই তাঁর নেতৃত্বে সত্যিকারের তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মূল্যায়ন পাবেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কোথাও কোন ব্যর্থতার কথা শোনা যায়নি। তিনি সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্যতম সফল একজন মন্ত্রী। দেশের বর্তমান ও আগামীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে রয়েছে তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে, সেখানে শৃঙ্খলা সৃষ্টিতে তিনি অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে প্রত্যেকটি কাজ সূচারুরূপে সম্পন্ন করে চলেছেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বন্ধুপ্রতিম অনেক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন পাচ্ছেন বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের কাছ থেকেও। ইতোপূর্বে সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ ইতোপূর্বে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে যাঁরা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, আবদুল জলিল প্রমুখ সবাই ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও একেবারে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে তিনিই প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন। তাঁর সঙ্গে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সভাপতিম-লীতে নতুন যে সাতজন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নতুন আরেকজন, কোষাধ্যক্ষ- এসব পদে যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের সকলকে নিয়ে আগামী দিনে দল ও দেশের জন্য কাজ করবেন তিনি এ বিশ্বাস সবার আছে। কাজেই বর্তমানে দেশের উন্নয়ন ধারাকে সমুন্নত রেখে সামনের মিশন ও ভিশনগুলোকে অর্জন করাই এখন সামনের বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের বর্তমান নবনিযুক্ত কমিটিকে নিয়ে সামনের দিকেই এগিয়ে গিয়ে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখবেন। আমরা তাঁর সাফল্য কামনা করি। জয়তু শেখ হাসিনা, জয়তু ওবায়দুল কাদের! লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় যশধনরৎভসড়@ুধযড়ড়.পড়স
×