ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শফী আহমেদ

শেখ হাসিনা এক জীবন্ত কিংবদন্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

শেখ হাসিনা এক জীবন্ত কিংবদন্তি

১৯৭৫ সালের পনেরো আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের পরাজিত শক্তির নীল-নক্সায় এবং ক্ষমতালিপ্সু কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নৃশংসভাবে সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে বাঙালী জাতি নিষ্পেষিত হতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপদলীয় কোন্দলে জর্জরিত হয় এবং একাধিকবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দলের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বজনহারা বাংলায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। এরপর একে একে কেটে গেল ৩৫ বছর। শেখ হাসিনা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করে আজ উঠে এসেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বাঙালী জাতিকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের মহাসোাপানে। প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা আজ শুধু নিজ দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে। কীভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেন আমরা সে আলোচনায় আসি। দেশ ও মানুষের জন্য তাঁর চ্যালেঞ্জের সাফল্য তাঁকে দেশের মধ্যেই নয়, আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও প্রবল আত্মবিশ্বাসের জায়গায় উঠিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সামরিক শাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র মুক্তি। ১৯৮১ সালে খুনী জিয়া খুন হয়ে যান এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে। প্রতিষ্ঠিত হয় একেবারেই দুর্বল, ষড়যন্ত্রকারীদের ক্রীড়নক বিচারপতি ছাত্তারের পুতুল সরকার। সেই সরকারকে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে সামরিক শাসন জারি করেন। জাতির বুকে আবারও চেপে বসে সামরিক শাসনের জগদ্দল পাথর। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছাত্র-গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। এই আন্দোলন সংগ্রামে দেশরতœ শেখ হাসিনার দূরদর্শী অবিচল নেতৃত্ব জনগণকে গণতন্ত্র মুক্তির পথ দেখায়। ১৯৯১ সালে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয়। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি তথা বিএনপি সরকার গঠন করে। নব্বইয়ের আন্দোলনের সকল অর্জন বিএনপি সরকার জলাঞ্জলি দেয়। কিন্তু আমাদের নেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত মেয়াদে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু এবং জজ আদালতে এর বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করা। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। এর বাইরেও অনেক উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে, যা এই স্বল্পপরিসরে লেখা সম্ভব নয়। জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ২০০১ সালে নীল-নক্সার নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হয়। বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবনখ্যাত বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে তুলে দেশের মানুষকে এক অবর্ণনীয় দুর্যোগের মধ্যে ফেলে দেয়। ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, চোদ্দ দল, মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে ইয়াজউদ্দিন সরকারকে হটিয়ে সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার গঠিত হয়। শুরু হয় ছদ্মবেশী সামরিক শাসন। ২০০৬ সালে নির্বচান স্থগিত হয়ে যায়। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়; কিন্তু সকল বাধা উপেক্ষা করে জনগণের টানে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তাঁকে কারান্তরীণ করা হয়। জনগণের আন্দোলনের চাপে সেনা সমর্থিত সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিয়ে, ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বক্তব্য অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। কোন কোন বিচারের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় হওয়ার পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়েছে, দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সারাবিশ্বে আল কায়েদা, নব্য সন্ত্রাসী আইএস ও বিভিন্ন নামে যে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে, যা কি না সারাবিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য ঈর্ষণীয়। সদ্য সফরকারী চীনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন, বিভিন্ন স্মারক ও ২৭টি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন। এই সফরে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ১৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-চীন ঐকমত্য হয়। বাংলাদেশ এক চীন নীতির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করে। এর দুদিন পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে ভারতে যান। সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নানাবিধ বিষয় উপস্থাপন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গীবাদ নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এও কম সাফল্য নয়। এতসব, দেশরতœ শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলার জনগণের নেত্রী নন, সারাবিশ্বেও সমাদৃত সফল রাষ্ট্রনায়কদের একজন। এজন্যই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপ্রতিরোধ্য এক জীবন্ত কিংবদন্তি। লেখক : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা
×