ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ফান্ডে আগ্রহ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশ ফান্ডে আগ্রহ বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে গঠিত বাংলাদেশ ফান্ডের আকার দুই হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১০-১১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধসের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণে ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ নামে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার কোটি টাকার এই তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে এ ফান্ডের কার্যক্রম স্থবির থাকলেও বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় এই ফান্ডের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে এ ফান্ডের আকার। ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে। বাংলাদেশ ফান্ডের মূল উদ্যোক্তা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি। এছাড়া ফান্ডটির সঙ্গে রয়েছে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জীবন বীমা কর্পোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ফান্ডটির আওতায় রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ব্যক্তি বিনিয়োগকারী ও অনাবাসী বিনিয়োগকারী। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সালে ফান্ডটি গঠন করা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাহকদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়। অল্পদিনের মধ্যেই ফান্ডের আকার দাঁড়ায় ১ হাজার কোটিতে। পরবর্তীতে বাজার পরিস্থতি ভাল না হওয়ায় ফান্ডটিতে স্থবিরতা দেখা যায়। ফলে পরবর্তী ২ বছরের মাথায় ফান্ডটির আকার হয় ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ফান্ডের আকার বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার কোটিতে। জানা গেছে গত বছর এই ফান্ডের ইউনিট হোল্ডারদের ৬ শতাংশ করে লভ্যাংশ প্রধান করে। এর আগের দুই বছর ইউনিট হোল্ডাররা পান ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ। আগামীতে ইউনিট হোল্ডারদের ভাল কিছু দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ফান্ডের ইউনিট কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মূলত পুঁজিবাজারকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশ ফান্ড গঠন করা হয়। মাঝখানে এর কার্যক্রম কিছুটা থেমে থাকলেও এখন এই ফান্ডের প্রতি গ্রাহকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই ফান্ডের আকার বর্তমানে ২ হাজার কোটি ছুঁয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই এই ফান্ডের আকার আরও বড় হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফান্ডে বাংলাদেশ ফান্ড গঠনের লক্ষ্য ছিল দুঃসময়ে বাজারে কিছুটা তারল্য প্রবাহ বাড়ানো। তাই লক্ষ্য অনুযায়ী এই তহবিল থেকে বাজারে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাডা ফান্ডের পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইউনিট বিক্রিও এগিয়ে চলছে। একই প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই নাহরিন বলেন, ৫ বছরে বাংলাদেশ ফান্ডে আকার ২ হাজার কোটিতে পৌঁছেছে এটা সন্তোষজনক নয়। তবে ফান্ড গঠনের উদ্যোগটি খুব ভাল। পৃথিবীর অন্যানা দেশেও এমন ফান্ড গঠনের নজির রয়েছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ফান্ডের আরও অনেক ফান্ডের দরকার। ব্যাংকের অলস টাকা পুঁজিবাজারে আসলে এই ফান্ডের কাজ করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রান্তিকালে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ফান্ডের মতো ফান্ড গঠনের রীতি রয়েছে। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ধসের পর সে দেশের সরকার শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা ফান্ডের ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি যেসব কোম্পানি লোনের জন্য ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিল তাদের শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেয়া হয়। মূলত পুঁজিবাজারে নতুন ফান্ড আনার লক্ষ্যেই এ কাজ করেছিল সে দেশের সরকার। পদক্ষেপটি সফলও হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শেয়ারবাজারে যখন ধস নামে এবং সূচক ২২ হাজার থেকে ৮ হাজারে নেমে গিয়েছিল তখন দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে অবাধে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যেই শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। এমনিভাবে ধস মোকাবিলায় সবসময়ই সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে বাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। কারণ, বিনিয়োগ বাড়লে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। আর বিনিয়োগে আস্থা পেলে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল হতে বাধ্য।
×