ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুকন্যা আরিয়ার মৃত্যু

দুই মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর শাহানার আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

দুই মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর শাহানার আত্মহত্যার চেষ্টা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে উত্তর বাড্ডার খান মসজিদ এলাকায় শাহানা বেগম (২৫) ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এর আগে ওই ওষুধ দুই মেয়েকে খাওয়ানো হয়েছিল। তবে নিজে বেঁচে গেলেও দেড় বছরের শিশুকন্যা আরিয়াকে বাঁচানো গেল না। পুলিশ জানায়, শাহানা তার স্বামীর প্রতি নানা সন্দেহের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে শাহানা নিজেই কন্যা হত্যাকারী। পুরোপুরি সুস্থ হলে শাহানাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে চার বছরের শিশু আগমনী জ্ঞান ফিরে পেয়ে মাকে খুঁজছে। মা মা বলে কান্নাকাটি করছে। শিশু ওয়ার্ডে আগমনীর কান্না থামাতে পারছে না তার স্বজনরা। মা শাহানা এখনও হাসপাতালের নতুন ভবনের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেননি। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমএ জলিল জনকণ্ঠকে জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে গৃহবধূ শাহানাই তার দুই মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। আর নিজেও ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তিনি জানান, শাহানা সুস্থ হলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব। তবে মায়ের ভুলের কারণে তারই গর্ভজাত দেড় বছরের শিশুকন্যা আরিয়ার মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, শনিবার রাত ২টার দিকে উত্তর বাড্ডার খান মসজিদের কাছে পঞ্চকুন ভিলা নামে একটি পাঁচতলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে শাহানা বেগম, তার দেড় বছরের মেয়ে আরিয়া ও আগমনীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক দেড় বছরের শিশু আরিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চার বছরের শিশু আগমনী জ্ঞান ফিরে পেয়েই মা মা বলে কান্নাকাটি করছে। চাচি গুলেনুর বেগম তাকে কোলে নিয়ে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে শিশু আগমনীকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তার স্বজনরা। ওয়ার্ডে আগত রোগী ও দর্শনার্থীরা শিশু আগমনীকে শান্ত করার জন্য বিভিন্ন খেলনা নিয়ে ছুটে আসছেন। শিশু আগমনীর চাচি গুলেনুর বেগম জানান, রবিবার ভোরে উত্তর বাড্ডা থেকে দেবরের স্ত্রী শাহানা বেগম ও তার দুই শিশুসন্তান আগমনী ও আরিয়াকে অচেতন অবস্থায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙ্গে উদ্ধারের পর ঢামেক হাসপাতালে আনেন প্রতিবেশীরা। ভোরেই মারা যায় দেড় বছরের শিশু আরিয়া। শিশু ওয়ার্ডে অচেতন অবস্থায় মৃত আরিয়ার বড়বোন আগমনীকে রাখা হয়। আর মা শাহানাকে অচেতন অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি জানান, চার বছরের আগমনীর জ্ঞান ফিরলে সে কান্নাকাটি শুরু করে। শুধু মায়ের কাছে যাবে এবং মা মা বলে কান্নাকাটি করছে। তাকে থামানোই যাচ্ছে না। কী করে বুঝাবো এই শিশু বাচ্চাকে। তার মা শাহানা বেগম এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেনি। শাহানার স্বামী আমজাদ হোসেনের বড়ভাই নূর ইসলাম জানান, ২০০১ সালে পারিবারিকভাবে তার ভাইয়ের সঙ্গে শাহানার বিয়ে হয়। কোন দিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার কথা তারা শোনেননি। তবে শুনেছি, আমজাদ তার কর্মস্থল রাইস মিলে চাকরির সুবাদে প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। নূর ইসলাম আরও জানান, রাইস মিলে চাকরির সুবাদে মাসের মধ্যে ১৫ দিনই রাজশাহী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পাবনাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেত। এ নিয়ে শাহানা তার স্বামী আমজাদকে নানাভাবে সন্দেহ করত। অনেক সময় শাহানা তার স্বামী আমজাদকে বলতÑ ‘অন্য কোন মেয়ের প্রেমে পড়ে বাইরে সময় কাটাচ্ছ।’ তিনি আরও বলেন, শুনেছি শাহানা প্রায়ই আমজাদকে বলতÑ ‘ভারতের জি-বাংলা, স্টার প্লাস নাটকে এগুলো দেখানো হচ্ছে। অন্য নারী নিয়ে বাইরে প্রায়ই সময় কাটাচ্ছে। স্ত্রীকে সময় দিচ্ছে না। নাটকে কি মিথ্যে কথা বলে।’ এসব কথা বলে প্রায়ই ঝগড়া করত শাহানা। স্বামী আমজাদের প্রতি এসব সন্দেহের কারণে শাহানা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
×