ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

না’গঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনা

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সামনে ১৯ জনোর সাক্ষ্য প্রদান

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সামনে ১৯ জনোর সাক্ষ্য প্রদান

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ২৪ অক্টোবর ॥ বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার আবদুল লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে এসে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগকারী ছাত্র রিফাত, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-ম্যানেজিং কমিটির সদস্য-অভিভাবকসহ ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান। সোমবার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কল্যান্দী এলাকায় অবস্থিত পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন তিনি। মঙ্গলবার জেলা সার্কিট হাউসে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তসহ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে। এদিকে বিচার বিভাগীয় তদন্তকাজ চলাকালে সাংসদ সেলিম ওসমানের অনুগতরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, বিদ্যালয় প্রবেশমুখী রাস্তাগুলো ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেয়। বিচার বিভাগীয় তদন্তকারী বিচারক ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমানের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিএমএম আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম নবী ও মাজহারুল ইসলাম। তাদের সহায়তা করেন নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম। বিচার বিভাগীয় তদন্তকারী ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান স্কুলে এসে প্রথমে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগকারী দশম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হাসানের সাক্ষ্য নেন। পরে তিনি রিফাতের মা রিনা বেগম, ইংরেজী শিক্ষক উত্তম কুমার ও মাসুম মিয়া, বাংলা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, গণিত শিক্ষক মোশাররফ হোসেন, ইসলাম ধর্মের শিক্ষক বোরহানুল ইসলাম, সহকারী প্রধান শিক্ষিকা পারভীন আক্তার, ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফারুকুল ইসলাম, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোবারক হোসেন, বাইতুল আতিক জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদুল হাসান, মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল হাই, শিক্ষার্থী রূপন্তী, মৃদুল হাসান, মাকসুদ, রানা, আসিফ, হামিদুলের সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণকালে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল থেকে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সাংসদ সেলিম ওসমানের অনুগত হিসেবে পরিচিত জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের, সাধারণ সম্পাদক আকরাম আলী শাহীন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের নেতৃত্বে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ জড়ো হয় এবং প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের শাস্তির দাবি জানায়। উল্লেখ্য, গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দীতে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় অবমাননা এবং কটূক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও স্থানীয় জাপা (এ) দলীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনায় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছেÑ জানতে চেয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি রুল জারি করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের রুলের জবাবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত তা দায়সারা গোছের উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে তদন্ত করে আগামী ৩ নবেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ৬ নবেম্বর হাইকোর্টে আদেশের দিন ধার্য রয়েছে।
×