ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একান্ত আলাপনে অসম কংগ্রেস নেতা মাহামুদ চৌধুরী

ভারত-বাংলাদেশ অটুট বন্ধনে আবদ্ধ, ভবিষ্যতেও থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

ভারত-বাংলাদেশ অটুট বন্ধনে আবদ্ধ, ভবিষ্যতেও থাকবে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক মধুর। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিসহ সকল দল বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও দেবে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের কর্মকা-ের প্রতিও ভারতের সমর্থন রয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কর্মকা-ের প্রতি বিরোধীসহ সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকা উচিত। তাহলে দ্রুত দেশটি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন অসম কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ হোসেন চৌধুরী। রবিবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বারবার এসে দেখি দেশটি বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়া ‘বাংলাদেশ’ দেখে মন ভরে যায়। ভাল লাগে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়েছে। এতে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি থেকে শুরু করে বিরোধী দল কংগ্রেস, বামফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা আমন্ত্রণ পেয়ে যোগ দিয়েছেন। এতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় ভারতের সরকারসহ সব দলই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও দেবে। অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, তিস্তা চুক্তিসহ ভারত বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিভিন্ন ইস্যু প্রসঙ্গে মাহামুদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি ছিটমহল সমস্যা ও দুই দেশের মধ্যে সীমানাসংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হয়েছে। আমি মনে করি, দুই দেশের মধ্যে আলোচনায় সবকিছুই সমাধানের দিকে যাবে। কারণ ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে। থাকবে। তাই এসব বিষয়ে আমি সব সময় আশাবাদী। চলমান এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ার কোন কারণ নেই বলেও মনে করেন তিনি। কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখনও বাংলাদেশকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছি। আমাদের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কোন ইস্যুতেই বৈরিতা ছিল না। ভারতের বর্তমান সরকারও বাংলাদেশের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক। ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জঙ্গীবাদের উত্থান ও প্রতিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ ইস্যুতে ভারত সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। জঙ্গীদের প্রতি ভারত সরকারের কোন মদদ নেই। জঙ্গীরা নিজেদের স্বার্থে একেক দেশে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যুতে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। বাস্তবতা হলো, জঙ্গীবাদ একটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির শত্রু। তাই ভারত-বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশের উচিত জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি দেখানো। তেমনি কোন রাজনৈতিক দল ও সরকারের উচিত নয় জঙ্গীবাদকে সমর্থন দেয়া। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কর্মকা-ের প্রতি ভারত সরকারসহ কংগ্রেসের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার আওয়ামী লীগ। তারা দেশের স্বার্থে কাজ করছে। ভাল করছে। বর্তমান সরকারের কর্মকা- ভারতের সরকার তথা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। অর্থাত সরকারের কর্মকা-ের প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে। যে যাই বলুক সব দেশেরই একটি নীতি রয়েছে। সবাই যার যার নীতি অনুসরণ করে চলবে। ভারতে বিজিপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের অনেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। রাজনীতিতে ছিল নানা কথা। নানা আলোচনা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল বর্তমান ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কও অনেক মধুর। তাহলে ধরে নিতে হবে দুই দেশের নীতির সঙ্গে উভয়ের সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের সঙ্গে এখন সার্বিক সম্পর্ক খুবই ভাল। সব সময়ই ভাল ছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের সম্পর্কও মধুর। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসা নতুন নয়। অন্তত ১০ বার এসেছি। প্রথম আসা দশ বছরেরও বেশি সময় আগে। প্রতিবার এসে দেখি ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’। সত্যিই দ্রুত উন্নতি হচ্ছে দেশটির। দিন দিন বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেখতে ভালই লাগে। ভাবতেও ভাল লাগে। যতবার আসি সবাইকে খুব আপন মনে হয়। তাই আমন্ত্রণ পেলেই ছুটে আসি। মনে হয় এটি যেন নিজের ঘর। পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে এমন আশাবাদী এই নেতা। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাও অনেক বদলেছে। আগে তীব্র যানজট ছিল। এখন কমেছে। উড়াল সড়কে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। রাস্তার পরিধি বেড়েছে। নতুন নতুন রাস্তা হয়েছে। সড়কগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। শহরকে সুন্দর করার চেষ্টা চলছে। গাছ বেড়েছে শহরজুড়ে। সার্বিকভাবে বললে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এ শহরের। আগের শহর এখন আর নেই। রাতের ঢাকা সত্যিই চেনা দায়। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্থল ও আকাশপথে যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন ইচ্ছে করলে বিমানযোগে দিনে দিনে যাতায়াত করা যাচ্ছে। অনেক সীমান্ত গেট করা হয়েছে। যাত্রী প্রয়োজন অনুযায়ী যাতায়াত করছেন। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ সম্পর্কের মাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, যোগাযোগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটি এগিয়ে যাবে। কারণ যোগ্য নেতৃত্ব আছে। তাই আমরা আশাবাদী এ দেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। সকল বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ উন্নয়নে আরও সামনের সারিতে পৌঁছবে। দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নে কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন ও জাতীয় স্বার্থে সরকারী দলের সকল কর্মকা-ে বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন দেয়া উচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই। তাহলে দেশ দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, সকল দলের উচিত জনসেবা করা। কারণ জনস্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করে। তাই সরকারী বা বিরোধী দল সবারই উচিত জনগণের স্বার্থে নিবেদিত হয়ে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নেয়া। তবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সার্বিক উন্নয়ন একটি দেশের সরকারের কর্মকা- ও দক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
×