ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ২১ নব্য জেএমবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে ২১ নব্য জেএমবি

শংকর কুমার দে ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর গত সাড়ে ৩ মাসে অন্তত বড় ধরনের ৯টি জঙ্গী বিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, সামরিক কমান্ডারসহ নব্য জেএমবির ৩৩ জঙ্গী নিহত হয়েছে। নিহতরা নব্য জেএমবির সবাই আত্মঘাতী দলের (সুইসাইড স্কোয়াডের) সদস্য। এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে আছে নব্য জেএমবির ২১ জঙ্গী। এছাড়াও ৬ জঙ্গী ভারত ও সিরিয়ায় চলে গেছে। জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, গত ১ জুলাই থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে ৩ মাসে যে ৯টি বড় ধরনের জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে সে স্থানগুলো হচ্ছে, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া, কল্যাণপুর, মিরপুর, আজিমপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও সর্বশেষ সাভারের আশুলিয়ায়। সাভারের আশুলিয়ায় নিহত হয়েছে নব্য জেএমবির প্রধান আবদুর রহমান ওরফে সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ই-মেইল, মোবাইল ফোনের এসএমএস, চিঠিপত্র, তথ্য উপাত্ত, যার বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে র‌্যাব। গুলশান ও শোলাকিয়াসহ বড় বড় হামলার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও অর্থদাতাও আবদুর রহমান। আবদুর রহমান বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে মোক্তার, বাবু, নাজমুল ইসলাম, আসিম আজওয়াদ। গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় তার বাসার জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের সময় লাফিয়ে পড়ে আবদুর রহমান। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত আবদুর রহমানের সঙ্গে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত গণপূর্ত বিভাগের এক প্রকৌশলী নাফিস আহমেদ নয়ন ও হুন্ডি ব্যবসায়ী হাসিবুল হাসানকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে জঙ্গী অর্থায়নের ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকাও উদ্ধার করে র‌্যাব। এই দুই জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে নব্য জেএমবির অর্থায়নসহ আরও নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, নব্য জেএমবির যে ২১ জঙ্গী ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে তার মধ্যে শীর্ষ দুই জঙ্গী নেতা হচ্ছে, গুলশান হামলার অপারেশনাল কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান ও বাসারুজ্জামান ওরফে চকোলেট। এ ছাড়াও গুলশান হামলার বোমা সরবরাহকারী সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার সঙ্গে জড়িত একই বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম খালেদ ও উত্তরাঞ্চলের দুর্ধর্ষ জঙ্গী মামুনুর রশীদ রিপন, গুলশান হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ভাটারার তরুণ জুনায়েদ হাসান খান ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা। এছাড়াও কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গী ইকবাল, জঙ্গী ওয়াসিম আজওয়াদ আবদুল্লাহ ওরফে আসিফ আজওয়াদ নিউ জেএমবির ডাকাতির সংগঠক, উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সুভাস বসু, কমান্ডার মানিক, সংগঠক মামুন, প্রশিক্ষক আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, মিজান, অপারেশন বাস্তবায়নকারী সদস্য বাদল মিয়া ওরফে ওস্তাদ বাদল, আবদুল খালেক ও মামা খালেক, সাগর, আকাশ এবং আজাদুল ওরফে কবিরাজ এখনও পলাতক। পলাতকদের মধ্যে জুনায়েদ হাসান খানের ভাই ইব্রাহীম হাসান খান এবং একজন সরকারী কর্মকর্তার ছেলে তাহমীদ শাফী, নিহত আবদুর রহমানের অন্যতম সহযোগী ছিল ডাক্তার রোকন নিউ জেএমবিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়ে এখন সিরিয়ায় জঙ্গী শিবিরে অবস্থান করছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের ভেতরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জঙ্গী তৎপরতায় ছিল নব্য জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। নব্য জেএমবির জঙ্গীরা বিদেশী নাগরিক, ধর্মযাজক, পুরোহিত ও ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করত। আর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম হত্যা করত প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, প্রকাশক শ্রেণীর পেশাজীবীদের। দুই ধারার দুই জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে নব্য জেএমবির সাংগঠনিক অবস্থা এখন অনেকটাই নড়বড়ে, ক্ষয়িষ্ণু। তবে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় এখন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া।
×