ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লড়াই করেই হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

লড়াই করেই হারল বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ স্বপ্নের একটি রাত ছিল। শুধু দলই নয়, পুরো দেশই সোমবার সকালে একটি গৌরবময় অর্জনের প্রত্যাশায় ছিল উন্মুখ। কিন্তু মাত্র ১৮ মিনিট আর ২১ বলেই সেই স্বপ্নালু রাতে গড়া প্রত্যাশার সমাধি ঘটল। আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বরে থাকা শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়া হলো না, ১৬ কোটি মানুষের হৃদয় চুরমার করা ২২ রানের পরাজয়ই লেখা হলো বাংলাদেশ দলের ভাগ্যে। চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনে হাতে থাকা ২ উইকেটে জয়ের জন্য মাত্র ৩৩ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। ২৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামা বাংলাদেশ চতুর্থ দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৫৩ রান তুলেছিল। দারুণ খেলে ৫৯ রানে অপরাজিত স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ক্রিজে থাকাতেই প্রত্যাশার পারদটা ছিল উচ্চমুখী। কিন্তু সাব্বির ৬৪ রানে অপরাজিত থাকলেন। দিনের চতুর্থ ওভারে বেন স্টোকসের করা তিন বলে বিদায় নিলেন তার দুই সহযোদ্ধা তাইজুল ইসলাম ও শফিউল ইসলাম! আর মাত্র ১০ রান যোগ করে ২৬৩-তেই শেষ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ২ টেস্টের সিরিজে সফরকারীরা ২২ রানের জয়ে এগিয়ে থাকল ১-০ ব্যবধানে। ২২ রানে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরাজয় বরণ করল বাংলাদেশ। ফিরে এলো ১৩ বছর আগের মুলতান টেস্টের দুঃসহ বেদনা। যে টেস্টে মাত্র ১ উইকেটে হারতে হয়েছিল। ২০০৩ সালে ২৬২ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকরা তৃতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে তুলেছিল ১৪৮ রান। সেই রাতটাও ছিল দুর্বিষহ, বিনিদ্র এবং স্বপ্নের। কিন্তু ইনজামাম উল হকের ১৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস গৌরব ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশের অথচ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের শুরুটা ছিল আলোকিত। অন্য চারদিনের চেয়ে একেবারেই ব্যতিক্রমী শুরু। কারণ আগের চারদিনেই প্রথম ওভারে উইকেট হারিয়েছে ব্যাটিং করা দল। এবার সেটা হতে দেননি সাব্বির। প্রথম ওভারেই তিনি স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে ৩ রান নিয়ে নেন। স্টোকসের পরের ওভারে হুক করে একটি চারও হাঁকান তাইজুল। ব্রডের করা তৃতীয় ওভারে আরও ৩ রান। কিন্তু শেষ বলে সাব্বিরের এক রান নেয়াটাই কাল হয়ে গেল। দিনের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই তাইজুলকে এলবিডিব্লিউর ফাঁদে ফেললেন স্টোকস। লেগস্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাওয়ার সময় পেছনের পায়ে লেগেছিল বলটি, তাই আম্পায়ার আউট না দেয়ায় রিভিউ নিয়ে জিতে যায় ইংলিশরা। ওই ওভারের তৃতীয় বলেই অফস্টাম্পের অনেক বাইরে পড়া বলটি খেলার প্রবণতা না দেখানোয় প্যাডে লাগলে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন শফিউল। ২৬৩ রানে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে গেলে ২২ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। ১০২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন সাব্বির। সাব্বিরের বিষয়ে অধিনায়ক মুশফিক বলেন, ‘৩৩ রান তো সাব্বির একাই করতে পারবে না। সাব্বির যদি বাড়তি ঝুঁকি নিতে গিয়ে আউট হতো, তাহলে খেলা আরও আগেই শেষ হতো। গতকাল শেষ দিকে তাইজুল খুব ভাল খেলছিল, আজও শুরুটা খুব ভাল করেছিল। এ জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া যে, যদি রান হয় রানটা নিয়ে নেয়া।’ এর আগে ১০০ রানের নিচের ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে একবার হেরেছিল বাংলাদেশ ২০১২ সালে। সেবার ৭৭ রানে হার দেখেছিল দল। এটিই বাংলাদেশের রান বিবেচনায় ক্ষুদ্রতম ব্যবধানে পরাজয়। আর ইংল্যান্ডের দশম সর্বনিম্ন ব্যবধানের জয়। ম্যাচে সর্বাধিক ২৬ রিভিউ হয়ে বিশ্বরেকর্ড তৈরি হয়েছে। আর দীর্ঘদিন টেস্ট না খেলে এ ম্যাচে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বাংলাদেশ সেটাও ভাবনায় ছিল না ইংলিশদের। এ বিষয়ে অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক বলেন, ‘দুর্দান্ত এক টেস্ট। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বাংলাদেশ, আমরা ভাবিনি। দারুণ খেলেছে তারা।’ স্বপ্নের সমাধি হলেও বাংলাদেশও প্রতিপক্ষের সমীহ আদায়, সমানতালে লড়ে যাওয়া এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার কারণে স্বস্তিতে। বাংলাদেশের জন্যও এমন পরাজয় গৌরবের।
×