ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের ভাতা বাড়ল

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের ভাতা বাড়ল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানী ভাতা বাড়িয়েছে সরকার। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বিতরণ নীতিমালা ২০১৬-এর খসড়া এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ৫০ কোটি টাকার স্থলে এখন তারা ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত কেনাকাটার ক্ষেত্রে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর বেশি হলে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির দ্বারস্থ হতে হবে। এছাড়া মন্ত্রিসভা জাতীয় লবণনীতি এবং শিপিং কর্পোরেশন আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সচিবালয়ে সোমবার মন্ত্রিসবার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকের শুরুতে থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ছায়ামন্ত্রী টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হককে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে যে বালু উত্তোলন করা হয় তা বন্ধ করতে ভূমিমন্ত্রী, পনিসম্পদমন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় অনেক স্থানে ভাঙ্গন দেখা যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। কোথা থেকে কী পরিমাণ বালু কিভাকে উত্তোলন করতে হবে তার একটা পরিকল্পনা থাকতে হবে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বীরউত্তমদের ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ৮ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা এবং বীরপ্রতীকদের মাসিক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ‘এ’ শ্রেণীর পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা, ‘বি’ শ্রেণীর পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা, ‘সি’ শ্রেণীর ১৬ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ‘ডি’ শ্রেণীর পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ৯ হাজার ৭০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাসিক ভাতা মাসে ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ১৫ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের ভাতা ২৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নতুন ভাতা কার্যকর ধরা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে সভায় কোন আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে চার পর্যায়ের খেতাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকার। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালে ওই চার খেতাবের নামকরণ হয় বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ বীরউত্তম, ১৭৫ বীরবিক্রম এবং ৪২৬ জন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এ-শ্রেণীর ২০, বি-শ্রেণীর ১৪৬, সি-শ্রেণীর ২ হাজার ৩২৯ ও ডি-শ্রেণীর ২ হাজার ৫৩২ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শহীদ পরিবার রয়েছে ২ হাজার ৫০০, যুদ্ধাহত পরিবার ৩০৩, বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ৭টি। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বৈঠকে আলোচনায় আসেনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যারা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা) একাধিক ভাতা পান, তারা একটা পাবেন, যেটা সর্বোচ্চ। দুটি একসঙ্গে পাবেন না। অনেক পর্যালোচনা করে সবার মত নিয়ে নতুন এ বিধান করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ল ॥ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ল। ৫০ কোটি টাকার স্থলে এখন তারা ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত কেনাকাটার ক্ষেত্রে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এর বেশি হলে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির দারস্থ হতে হবে। এজন্য সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কার্যপরিধি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ অনুমোদনের কথা জানান। ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত পরামর্শ সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগই আগে সিদ্ধান্ত নিতে পারত। এখন সেটা উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৩০ কোটি এবং অনুন্নয়নের বাজেটের ক্ষেত্রে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর বেশি হলে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যেতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্রয় ও চুক্তি সম্পাদন ১০০ কোটি টাকার উপরে করা হয়েছে। উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রে ১০০ কোটি টাকার বেশি করা হয়েছে। পরামর্শ সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছিল ১০ কোটি টাকা। সেটা উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৩০ কোটি এবং অনুন্নয়নের বাজেটের ক্ষেত্রে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুনঃদরপত্র সংক্রান্ত প্রস্তাবের ক্ষেত্রে যেটা ৫০ কোটি ও ১০ কোটি টাকার ছিল সেটা ১০০ কোটি ও পরামর্শ সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকার উপরে হয়েছে (এর বেশি হলে কমিটির অনুমোদন লাগবে)। অনুন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে ৫০ কোটি টাকা ও পরামর্শ সার্ভিসের ক্ষেত্রে ২০ কোটি টাকার উর্ধে পুনঃদরপত্র সংক্রান্ত প্রস্তাব বিবেচনার জন্য তাদের (ক্রয় কমিটি) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের পর এ সংশোধন কার্যকর হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূলত কমিটির আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটা করা হয়েছে। কমিটির ক্ষমতা কেন বাড়ানো হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অন্যান্য ক্ষেত্রেও বাড়ানো হয়েছে। যেমন একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) ক্ষমতা একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। পরামর্শক সেবার ক্ষেত্রে নিজেরা ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত অনুমোদন দিতে পারবে। সে জিনিসগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এটা বাড়ানো হয়েছে। শিপিং কর্পোরেশন আইন চূড়ান্ত অনুমোদন ॥ ‘বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিপিং কর্পোরেশন আইন ইংরেজীতে ছিল। তা মূলত বাংলায় অনুবাদ করে একই ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আগে গত ২৫ জুলাই শিপিং কর্পোরেশন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। জাতীয় লবণনীতি অনুমোদন ॥ ‘জাতীয় লবণনীতি ২০১৬’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, ২০১১ সালের যে নীতিটা ছিল সেটিকে একটু আপডেট করে অনুমোদন করা হয়েছে। শোক প্রস্তাব ও অভিনন্দন ॥ থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ছায়ামন্ত্রী টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হককে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ শোক ও অভিনন্দন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বৈঠকের শুরুতে দুটি শোক ও দুটি অভিনন্দন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরদিকে গত ১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিভাগীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক চলাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মারা যান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় শ্যাডো মিনিস্টার ফর আরলি ইয়ারস এডুকেশন পদে নিযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিককে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, এছাড়া যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির আরেকজন ছায়ামন্ত্রী মিনিস্ট্রি অব হোম এ্যাফেয়ার্স উইথ রেসপন্সিভিলিটি ফর ক্রাইম প্রিভেনশন পদে নিযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রূপা হককে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছে মন্ত্রিসভা। টিউলিপ সিদ্দিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি।
×