ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে ও. কাদের

আমার রাজনৈতিক জীবনে এটাই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

আমার রাজনৈতিক জীবনে এটাই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দলের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তৃণমূল নেতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি আমার পুরস্কার পেয়েছি। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। দায়িত্ব পালনে আমি দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা কামনা করছি। দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ঘাম-শ্রম-মেধা-শক্তি-সামর্থ্য সবকিছু উজাড় করে দেব। নেতৃত্বের আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখব। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দায়িত্ব সুবিশাল।’ সোমবার দুপুরে ধানম-ির একটি কমিউিনিটি সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দেশবাসী, তৃণমূল নেতাকর্মী ও সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান নবনির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূলকে সুশৃঙ্খল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগে এটা পারতাম না। এখন আমি রাস্তা দেখব, সঙ্গে নেতাকর্মীদের কথাও শুনব। তাৎক্ষণিক সমাধান দেব। এটা আমার বাড়তি লাভ। বাড়তি পরিশ্রম না। নিজেকে আঞ্চলিকতার (ইজম) উর্ধে রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমি কোন অঞ্চলের নই, আমি সমগ্র বাংলাদেশের। এখানে আমি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন না করলে আমাকে কৈফিয়ত দাখিল করতে হবে। তিনি বলেন, আমাকে এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে গিয়ে নেত্রী আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন আমি আমার সবটুকু দিয়ে সেই আস্থা ধরে রাখতে চাই। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোন আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি তখন একটি অঞ্চলের স্লোগান শুনেছি। দুই-একদিনের মধ্যে দলের সম্পাদকীয় পদ ও তিন-চারদিনের মধ্যে সদস্য তালিকা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আর একসপ্তাহের মধ্যে পুরো কমিটিই পেয়ে যাবেন। আওয়ামী লীগের কমিটির জন্য আপনাদের চার মাস অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া আমরা বিএনপির মতো জাম্বোজেট সাইজের কমিটিও দেব না। সৈয়দ আশরাফের নাম প্রস্তাবকে ‘চমক’ আখ্যা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটাই বড় চমক। এ সময় তিনি সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তাঁর (সৈয়দ আশরাফ) দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) মন্ত্রিসভায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দেখলাম। তিনি একদম বিচলিত নন। তাঁর মধ্যে কোন হতাশা নেই। তিনি এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছেন। কেবিনেটে তাঁকে (আশরাফ) আগের কেবিনেটের চেয়েও বেশি ফুরফুরে মনে হয়েছে। এটাই আওয়ামী লীগের সৌন্দর্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবতকালের আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন সবচেয়ে বেশি সুশৃঙ্খল মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত বড় একটি সংগঠন, হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে যোগ দিলেন, অথচ টু শব্দটিও হলো না। এতেই প্রমাণিত আওয়ামী লীগ একটি সুশৃঙ্খল দল। বিশ্বের ১০টি দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দলের ৫৫জন নেতা অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলকে আরও সুসংগঠিত করবেন জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আরাও গুণগত পরিবর্তন হবে। এই চেঞ্জ মেকার দেশরতœ শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ বদলাতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সর্বোপরি তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। ২০ তারিখ থেকেই সারাদেশের সব রাস্তা যেন এসে মিশেছিল ঢাকা শহরের মোহনায়। দলের সব নেতা-কর্মীর জিজ্ঞাসা ছিল কারা হচ্ছেন দলের পরবর্তী নেতা। এরপর আপনারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন। এজন্য দলের নেত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের আচরণ সামনে আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে আরও গুণগত পরিবর্তন হবে। আমাদের নিজেদের বদলাতে না পারলে আমরা দেশকে পরিবর্তন করতে পারব না। আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। সম্মেলনের পর দলের সামনের এজেন্ডা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুটি এজেন্ডা হাতে নিয়েছি। এক সাম্প্রদায়িক পরাশক্তিকে পরাজিত করা। দুই আগামী নির্বাচনের জন্য দলের প্রস্তুতি নেয়া। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করব। তিনি বলেন, বেশি এজেন্ডা হাতে নেয়া উচিত নয়। এতে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। অনেক ডিম একসঙ্গে এক ঝুড়িতে রাখলে ভেঙ্গে যেতে পারে। তিনি বলেন, আমি নিজেকে মন্ত্রী ভাবি না, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক ভাবি। আমি শেখ হাসিনার কর্মী, আওয়ামী লীগের কর্মী। বিএনপি এই কমিটিকে অভিনন্দন জানানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, এটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারের ব্যাপার। তবে তাদের শুভেচ্ছা অভিনন্দন মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারতাম যদি তারা আমাদের সম্মেলনে আসতেন। তারা কথা দিয়ে কথা রাখলেন না। সম্মেলনে আসলে তাদের কেউ বলত না, ‘ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়’। বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তার খেসারত দিচ্ছে। সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে কোথাও বিরোধীদলের স্ট্যাটাস নেই। আবার যদি তারা ভুল করে তবে ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকতে হবে তাদের। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের নব গঠিত আংশিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সদ্য সাবেক কমিটির নেতা আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।
×