ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলা নেতাদের প্রতি শেখ হাসিনার নির্দেশ উন্নয়নের কথা জনগণকে জানান

ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এ জন্য ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে ভোটারদের কাছে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোর কথা জনগণকে জানাতে হবে। জনগণের জন্য মন দিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মন জয় করতে হবে। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটি (আংশিক) ও জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। দেশের সব মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে নিয়ে আসার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আজ থেকে আমাদের একটাই প্রতিজ্ঞা; সেটা হলোÑ দেশের একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না। মানুষকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য যা করার দরকার তাই করা হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অষ্টমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় স্নাত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নবনির্বাচিত সভাপতিম-লীর সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নেতা আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, বিএম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, ক্যাপ্টেন (অব) এ বি তাজুল ইসলাম, মির্জা আজম প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবেÑ জনগণের জন্য কাজ করা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। দেশের কোন মানুষ নিঃস্ব, ভূমিহীন থাকবে না, দরিদ্র থাকবে না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যার যার এলাকার নিঃস্ব, ভূমিহীন মানুষের তালিকা তৈরি করেন। আমরা তাদের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করব, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হতদরিদ্র মানুষের জন্য আমরা আশ্রয়ণ, গৃহায়ন বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা জনগণকে দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। সরকারের পাশাপাশি দরিদ্র অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারী কোন অনুদান ছাড়াই এলাকার স্কুল-কলেজগুলোর সংস্কার করা যায়। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই স্কুল-কলেজগুলোর সংস্কার করতে পারি। সরকারের তরফে আমরা তো শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তিও দিচ্ছিÑ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গীবাদের বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গীবাদ কখনও আশ্রয় দিইনি, দেব না। ছাত্রদের ওপর শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে। মা-বাবাকে সন্তানের খোঁজ রাখতে হবে। কারও ছেলেমেয়ে যেন বিপথে না যায়, এ ব্যাপারগুলো আপনাদের দেখতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গীবাদের বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। তারপরও এ বিষয়টি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ছেড়ে দিলে চলবে না। আপনাদেরও খেয়াল রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের অষ্টমবারের মতো পুনর্নির্বাচিত সভাপতি আরও বলেন, বর্তমান সরকার কোন কোন খাতে উন্নয়ন করছে, সেসব নিয়ে প্রকাশনা তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনে যারা এসেছেন তাদের সবাইকে একটি করে ব্যাগ দেয়া হয়েছে এবং এর ভেতরে এসব প্রকাশনা দেয়া হয়েছে। উপস্থিত নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রকাশনা নিজেরা পড়ার পাশাপাশি জনগণের কাছেও সেগুলো তুলে ধরবেন। ভবিষ্যতে মানুষ যেন কেবল বলেÑ এগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। অনেক সরকার আসে যায় কিন্তু এগুলো যে আওয়ামী লীগ করেছে, সেগুলো মানুষকে বলে দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে জঙ্গীবাদ নির্মূল করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই। এ সময় তিনি জুমার খুতবায় জঙ্গীবাদ নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান। বিগত সময়ে সরকারে থাকতে দুর্নীতি-লুটপাটসহ বিএনপির দুঃশাসন ও আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ অপশক্তির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিআরআই নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সেটি বন্ধ করে দেয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এটিকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। রাতে দলের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারাও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাঁর হাতে ফুলের তোড়াও তুলে দেন নেতারা। যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোও প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
×