ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকুন্দিয়া পৌরসভা নির্বাচন: রাজনীতির মাঠ সরগরম

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

পাকুন্দিয়া পৌরসভা নির্বাচন: রাজনীতির মাঠ সরগরম

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ জেলার পাকুন্দিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠসহ সর্বত্র সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রার্থীরা পৌরবাসীকে ভোটদানে আগ্রহী করতে নানাবিধ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফেসবুক থেকে চায়ের কাপ পর্যন্ত প্রচারণা ছড়িয়ে দিয়েছেন স্ব-স্ব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি মার্কা নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রচার প্রচারণায় পিছিয়ে নেই। পোস্টার, ইন্টারনেট, মাইকিং ও পথসভা থেকে শুরু করে ভোটাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। এ সময় দিচ্ছেন নানামুখী উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। এখানে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪২ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। আগামী ৩১ অক্টোবর এ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মেছবা উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির বর্তমান পৌর মেয়র ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দিন (ধানের শীষ) এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান খোকন (নারিকেল গাছ) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এখানে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন শক্তিশালী হিসেবে মাঠে থাকায় জটিল হয়ে পড়েছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলসহ সর্বত্রই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন স্বপন মেয়র পদে তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও দলীয় মনোনয়ন পাননি। এক্ষেত্রে মনোনয়নের দৌড়ে পিছিয়ে থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় মনোনয়ন পান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেছবা উদ্দিন। এ অবস্থায় মোতায়েম হোসেন স্বপনের সমর্থকরা দলীয় এই মনোনয়ন মেনে না নিয়ে প্রার্থী বদলের দাবিতে দু’দিনের হরতাল কর্মসূচিও পালন করেছে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে এমন প্রত্যাশা থেকে দলের প্রত্যয়নপত্র ছাড়াই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার জন্য ‘দলীয় প্রার্থী’ পরিচয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন মোতায়েম হোসেন স্বপন। কিন্তু শেষমেশ কাক্সিক্ষত সেই প্রত্যয়নপত্র না পাওয়ায় বাছাইয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ফলে মিজবাহ উদ্দিনই দলের একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এদিকে মনোনয়ন পেলেও দলের সব অংশের নেতাকর্মীদের সমর্থন পাচ্ছেন না মেছবা উদ্দিন। আর তাই তিনি অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয়ভাবে যুক্ত না থাকায় কাক্সিক্ষত ফল নিয়ে অনেকটাই উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে মিজবাহ সমর্থকরা বলছেন, দলের আর কোনো বিকল্প প্রার্থী না থাকায় শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মান-অভিমান ভুলে সবাই একাট্টা হয়ে নৌকারই যাত্রী হবেন। অপরদিকে বর্তমান মেয়র ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মোঃ জালাল উদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন ছিল খুবই প্রত্যাশিত। পাকুন্দিয়া পৌরসভার প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের কাছেও রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। তবে এখানে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। আর তাই বর্তমান মেয়র জালাল উদ্দিন রয়েছেন অনেকটা অস্বস্তিতে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না থাকলেও রয়েছে চরম গৃহদাহ। দলের এই গৃহদাহের কারণে এখানে বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপিই। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন নিয়েও আওয়ামী লীগের কোন্দল ও বিভাজনের কারণে নির্বাচনের মাঠে দলটির প্রার্থী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মেছবা উদ্দিনও রয়েছেন কোণঠাসা অবস্থায়। ফলে দলীয় দুই প্রার্থীর পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীও। প্রসঙ্গত: এ বছরের শুরুতে সারা দেশের মতো কিশোরগঞ্জের ৮টি পৌরসভার মধ্যে ৭টির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় তখন পাকুন্দিয়া পৌরসভার নির্বাচন করা যায়নি। এ পৌরসভার মোট ভোটার ২০ হাজার ৪৭৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৪৭৫ ও নারী ভোটার হচ্ছেন ১০ হাজার ৩০৬ জন। ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো পাকুন্দিয়া পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর এই পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
×