ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জমির জন্যই প্রান দিতে হলো হতভাগ্য মোকছেদকে

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

জমির জন্যই প্রান দিতে হলো হতভাগ্য মোকছেদকে

শ.আ.ম হায়দার,পার্বতীপুর ॥ পার্বতীপুরে ঘুমন্ত অবস্থায় হতভাগ্য মোকছেদকে(৫৮) ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শহর থেকে আনুমানিক ৭ কি.মি দূরে মনম্মথপুর রেল ষ্টেশন সংলগ্ন মোমিনপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জুন/১৬ তারিখে । পরের দিন নিহতের স্ত্রী আমেছা বেগম(৪৮) নিজ পুত্র মালেক ওরফে সাইদুরকে (৩০) দায়ী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। পার্বতীপুর মডেল থানা পুলিশ ৩০ আগষ্ট/১৬ তারিখে এজাহার অনুযায়ী একজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জসীট দাখিল করে। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে তদন্তে নেপথ্যের কুশলীদের চিহ্নিত না করে তড়িঘড়ি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এ পর্যায়ে নিহতের নিকট স্বজন ও এলাকাবাসী সিআইডির মাধ্যমে পুনরায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবী জানিয়েছেন। স্ত্রী আমেছা বেগম(৪৮), তিন পুত্র আ.মালেক ওরফে সাইদুর রহমান(৩০), আশরাফুল(২৭) ,ইমরান (২৪), কন্যা মুসকিনা বেগম(১৯), পুত্রবধূ রুপালী বেগম(১৯) ও বৃদ্ধা মা অছিমন নেছা(৭৫) এরাই নিহতের পরিবারের সদস্য। আজ সোমবার ঘটনাস্থলে গেলে পুত্র শোকে কাতর বৃদ্ধা মা বলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে ঘরে শুয়ে ছিলেন, কিছুই বলতে পারেননা। তবে তার নাতি পিতাকে খুন করতে পারে তা তিনি বিশ্বাস করেননা। কারা করতে পারে জানতে চাইলে যারা জমি ক্রয় করেছে এই চক্রটিকে তিনি দায়ী করেন। এ পর্যায়ে মোকছেদের স্ত্রীর কাছে ঘটনা জানতে চাইলে বলেন আমার মাথা ঠিক ছিল না। তখন ছেলেকে চাপের মুখে আসামী করেছি। তবে এখন ছেলের মুক্তি চান। তার ছেলে সন্তানরা অনুরুপ বক্তব্য দিয়ে বলেন মালেকের জামিনের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। প্রতিবেশী, বিভিন্ন জনের সাথে কথাবলে জানা যায় একখন্ড জমির কারনেই মোকছেদের এই পরিনতি। বাড়ীর অদূরে গোবিন্দপুর মনম্মথপুর বাজারের অল্প দূরে দক্ষিনে পাকা রাস্তা সংলগ্ন মোকছেদের ৩১ শতক মূল্যবান জমি রয়েছে। পাশেই প্রভাবশালী ধনাঢ্য জনৈক মোবারক হাজীর মিল চাতাল। এই জমি ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা করেও মোবারক রাজি করাতে পারেনি মোকছেদকে। শেষ পর্যন্ত প্রভাব খাটিয়ে তার (মোবারক) শ্যালিকা রুপালীর সাথে মোকছেদের বড় ছেলে মালেকের বিয়ে দেন। আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও মোবারক ওই লোভনীয় জমি কব্জা করতে পারেননি। তবে থেমেও থাকেননি। আটতে থাকেন নানা যড়যন্ত্র । টাকার প্রয়োজনে এক পর্যায়ে ১৯ জুন একই গ্রামের জনতা ব্যাংকের নাইট গার্ড আ. হামিদ ওরফে হাসনাতের কাছে ১২ লাখ টাকায় জমিটি রেজিষ্ট্রিমূলে বিক্রি করলে মোবারক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মোকছেদের উপর। পরের দিন অংশীদারিত্ব সূত্রে মোবারক ঐ জমি থেকে সাড়ে ৭ শতক জমি মোকছেদের বোনের নিকট থেকে রেজিষ্ট্রি করে নেন। সাথে সাথেই ভাড়াটিয়া মাস্তান বাহিনী দিয়ে দখলও করেন। প্রতিবাদ ও বাধা দিয়েও ফল হয়নি। এ কারনে মোকছেদ আইনের আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন। তবে ঘাতকরা তা হতে দেয়নি। এই ঘটনার পর পরিবারটি তছনছ হয়ে গেছে। মালেক জেলে যাওয়ার পর কিছুদিন পরে মালেকের স্ত্রী রুপালী বেগম জীবিকার অন্বেষনে ঢাকা চলে গেছেন। ঝামেলা এড়াতে জমি ক্রেতা হাসনাত গ্রামে নেই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিনাজপুর শহরে চলে গেছেন। যোগাযোগ করলে তিনি উচিত মূল্যে উক্ত জমি কিনেছেন বলে জানান। মোবারক হাজীর একই উক্তি ।
×