ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেহাল বিআরটিসি!

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

বেহাল বিআরটিসি!

বিআরটিসি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এক কথায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থাটির অবস্থা বেহাল। সরকারী-বেসরকারী পরিবহন কোম্পানির মধ্যে নিঃসন্দেহে এটি বিশাল। সিঙ্গেল ডেকার, ডাবল ডেকার, আর্টিকুলেটেড, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানবাহনের পাশাপাশি সংস্থাটির মালামাল পরিবহনের নিমিত্ত ট্রাকের বহরও আছে। সে অবস্থায় রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের পণ্য ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় এর সুফল পাওয়ার কথা। সে গুড়েবালি। এর পরিবর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির বছরের পর বছর ধরে বাড়িয়ে চলেছে লোকসান ও ঋণের বোঝা। বর্তমানে বিআরটিসির বাসবহরে বিভিন্ন রকম যানবাহনের সংখ্যা দেড় হাজার। এর মধ্যে ৫৫৫টিই নষ্ট। অর্থাৎ চলছে না আদৌ। অল্পস্বল্প মেরামত করে শতাধিক ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন ৫৫ কোটি টাকা মাত্র। এই পরিমাণ অর্থও হাতে নেই সংস্থাটির। ফলে স্বভাবতই কমছে বিআরটিসির সেবার পরিধি। আর ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। বিআরটিসির যেসব বাস ও ট্রাক নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে। সম্প্রতি একনেক বৈঠকে বিআরটিসির জন্য ভারতীয় ঋণে ৬০০ নতুন বাস এবং ৫০০ নতুন ট্রাক কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির বর্তমান প্রায় অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে নতুন বাস ও ট্রাক কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দুই বছর আগে বিআরটিসির সচল গাড়ি ছিল এক হাজার ২৭টি। এখন গাড়ির সংখ্যা এক হাজার ৪৯টি। তবে দুর্ভাগ্য হলো, সর্বোচ্চ ৮৫টির বেশি গাড়ি কোনদিনই রাস্তায় নামে না। অচল বাসগুলো কম-বেশি ১৯টি ডিপোতে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। সর্বোপরি যেসব বাস রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে থাকে, সেগুলো চলে প্রধানত চুক্তিভিত্তিতে, মর্জিমাফিক। অনেক স্থানে, বিশেষ করে জনবহুল রুটগুলোতে বেসরকারী বাস, মিনিবাস কোম্পানিগুলোর সঙ্গে রেষারেষি, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতাও আছে। অনেক ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমঝোতার মাধ্যমে বিআরটিসির রুট বন্ধ করে দেয়ার খবরও আছে। বাস সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে বিআরটিসির পক্ষ থেকে অন্তত ২০টি রুটে যাত্রীসেবা তথা পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার অত্যন্ত লাভজনক রুটগুলোতে সাধারণ মানুষ বিআরটিসির বাসসেবা পায় না বললেই চলে। সব মিলিয়ে বলা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি একরকম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। বিআরটিসির এই ব্যাধিটির নাম ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম। অযোগ্য ও অদক্ষ লোকের হাতে পড়ে মাথাভারি প্রশাসন এবং অদক্ষ ড্রাইভার-হেল্পারদের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। বেসরকারী খাতে পরিবহন কোম্পানিগুলো যেখানে চুটিয়ে ব্যবসা করছে, সেখানে প্রচুর সংখ্যক বাস থাকা সত্ত্বেও বেড়েছে সংস্থাটির লোকসান। প্রাইভেট সেক্টরের যানবাহনগুলো যেখানে অবলীলাক্রমে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চলে, সেখানে বিআরটিসির বাসগুলো রাস্তায় নামার দুই-তিন বছরের মধ্যেই জরাজীর্ণ, অকেজো অথবা অচল হয়ে পড়ে প্রধানত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। অথচ সংস্থাটির ডিপোগুলোতে যানবাহন মেরামতের ব্যবস্থাসহ জনবলও রয়েছে। ওই যে বলে, কার গোয়াল কে দেয় ধোঁয়া! সরকারী চাকরি বলে কথা। কে কার কথা শোনে? সুতরাং মেরামতের কোন চেষ্টা না করেই ফেলে রাখা হয় যানবাহনগুলো। চুক্তিভিত্তিতে বিআরটিসির যানবাহন চালানোর চেষ্টাও কোন সুফল দেয়নি। যোগ্য প্রশাসক ও দক্ষ জনবল দিয়ে পরিচালিত হলে বিআরটিসির লোকসান দেয়ার কোন কারণ নেই। প্রশ্ন হলো, সংস্থাটি আদৌ কি তা করবে?
×