ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়ার সুযোগ সাব্বিরের

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

ইতিহাস গড়ার সুযোগ সাব্বিরের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বড় কোন দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের দারুণ এক সুযোগ। আর সেই আশাটা এখনও জিইয়ে রেখেছেন অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই তিনি হয়ে গেছেন এখন পুরো দেশের জন্য প্রত্যাশার বড় নাম। প্রথম ইনিংসে ১৯ রান করে ফিরে গেলেও দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৫৯ রান করে অপরাজিত তিনি। তার সঙ্গের সঙ্গী হিসেবে আর কোন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নেই। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট বিজয়ের থেকে মাত্র ৩৩ রান দূরে, সেটা করতে হবে আজ চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম ও শেষদিনে। অভিষেকেই ইতিহাস গড়ার হাতছানি তাই ২৪ বছর বয়সী অভিষিক্ত সাব্বিরের কাঁধে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম কোন বড় দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জিততে পেরেছিল বাংলাদেশ। সেটাই প্রথম ও শেষ। এবার আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের চারে থাকা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই সুযোগ, জিতলেই রচিত হবে ইতিহাস। চতুর্থ ইনিংসে অভিষেকে আর কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটার অর্ধশতকই করতে পারেননি, সেদিক থেকে ইতোমধ্যেই একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন সাব্বির। ঐতিহাসিক টেস্ট বিজয়ের অন্যতম রূপকার হতে পারলে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই নতুন এক মাইলফলক যুক্ত করবেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে অর্ধশতাধিক রান করে দলকে জেতাতে পেরেছেন মাত্র ১৫ ক্রিকেটার। সাব্বিরেরও সুযোগ সেই দলে নাম লেখানোর। চট্টগ্রাম টেস্টে চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ২৮৬ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামে। ১৪০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন সাব্বির। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেটে একজন মেজাজী ও আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি থাকলেও টেস্ট টেম্পারমেন্ট তার কতটা থাকবে সেটা নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু শুরু থেকেই নিজেকে সুস্থির রেখে ঠা-া মাথায় খেলে গেছেন সাব্বির। প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বরে নেমে দারুণ খেলছিলেন। কিন্তু ১৯ রান করার পর সাজঘরে ফিরেছেন বেন স্টোকসের পেসে সিøপে ক্যাচ দিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে একইভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে শুরু করেন সাব্বির। দারুণ খেলে ষষ্ঠ উইকেটে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ৮৭ রানের দারুণ জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন জয়ের প্রত্যাশা পূরণের পথে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এটি ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি। তবে মুশফিক দিনের শেষভাগে সাজঘরে ফিরে যান। তখনও বাংলাদেশ দল ৫৯ রান দূরে জয় থেকে। এরপর আরেক অভিষিক্ত তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ ও কামরুল ইসলাম রাব্বি উইকেটে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মেহেদী ১ ও রাব্বি ০ রানে ফিরে গেলে ২৩৮ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। তিন ব্যাটসম্যানকে বিদায় নিতে দেখলেও সাব্বির হাল ছাড়েননি। ক্যারিয়ারের অভিষেক টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেই পেয়ে গেছেন অর্ধশতক। এটি বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেকে অর্ধশতক বা তার বেশি রান করার এটা ১৫তম ঘটনা। তিনটি সেঞ্চুরি ও ১২টি হাফসেঞ্চুরি আছে। আর কোন টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে অভিষিক্ত কোন ব্যাটসম্যানের অর্ধশতক হাঁকানোর এটি সপ্তম ঘটনা। তবে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে এর আগে কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান অভিষেকে অর্ধশতক করতে পারেননি। মানজারুল ইসলাম রানা ও মার্শাল আইয়ুব উভয়ে ৩১ রান করে করেছিলেন অভিষেক টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে। সবাইকে ছাড়িয়ে এখন সবার ওপরে সাব্বির। শেষ পর্যন্ত তাইজুল ইসলামকে নিয়ে আরও ১৫ রান যোগ করেছেন সাব্বির নবম উইকেটে। তবে জয়ের যে স্বপ্ন সেটা পূরণের জন্য শুধু সাব্বিরই ভরসা। তিনিই বাংলাদেশ দলকে জয় পাওয়ার মতো একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এর আগে বাংলাদেশের কোন অভিষিক্ত ব্যাটসম্যানের ওপরই টেস্ট ক্রিকেটে টার্গেট নিয়ে খেলার সময় এমন গুরুদায়িত্ব চাপেনি। এই চাপ সামলে তিনি দলকে জেতাতে পারলে অন্যরকম এক ইতিহাস লেখা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কারণ এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিরুদ্ধে টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। নিয়মিত খেলোয়াড়রা বিদ্রোহ করার কারণে একজনও ছিলেন না ২০০৯ সালে হওয়া সেই সিরিজে। এরপর জিম্বাবুইয়ে ছাড়া আর কোন দলকে টেস্টে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। এবার মোক্ষম সুযোগ এসেছে ইংল্যান্ডের মতো শক্ত দলকে হারিয়ে দেয়ার। ইংলিশরা ২০১৪ সালেও বিশ্বসেরা টেস্ট দলে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও তাদের অবস্থান চার নম্বরে। ভগ্নাংশের ব্যবধানে পিছিয়ে আছে তিনে থাকা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে। তাদের বিরুদ্ধে জয় এলে দেশের ক্রিকেটে এক গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা হবে। আর সেটা রচনা করার সুযোগ সাব্বিরের হাতেই। ৯৩ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রান করে অপরাজিত তিনি। বর্তমান সঙ্গী তাইজুল ছাড়াও আছেন পেসার শফিউল ইসলাম। এ দু’জনকে নিয়েই বাকি ৩৩ রান করার চ্যালেঞ্জ আজ নিতে হবে সাব্বিরকে। অভিষেক টেস্টে উভয় ইনিংসে অর্ধশতাধিক রান করার রেকর্ডটা অবশ্য হাতছাড়া হয়েছে তার। ২০০১ সালের এপ্রিলে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বুলাওয়েতে অভিষেক টেস্টের উভয় ইনিংসে জাভেদ ওমর বেলিম করেছিলেন অপরাজিত ৮৫ ও ৬২। আর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে তামিম ইকবাল করেছিলেন ৮৪ ও ৫৩ রান। কিন্তু সেসব ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ছিল না, সাব্বিরই প্রথম। টেস্ট ইতিহাসে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে অভিষিক্ত ক্রিকেটারের অর্ধশতাধিক রান করার ঘটনা এটা নিয়ে ৪৫তম। আছে ৭টি সেঞ্চুরিও। তবে অর্ধশতাধিক রান করে অভিষেকেই দলকে জেতানোর ঘটনা আছে মাত্র ১৫টি। একমাত্র সেঞ্চুরি আছে পাকিস্তানের ইয়াসির হামিদের। তিনি ১০৫ রান করেছিলেন ২০০৩ সালের আগস্টে করাচীতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এবার সেই গৌরবজনক ঘটনার অংশ হওয়ার সুযোগ এ সাব্বিরের। বড় সুযোগ বাংলাদেশের গৌরবময় অধ্যায় রচনার এক মহানায়ক হওয়ার!
×