ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ৩৩ রান আর ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২ উইকেট

পেন্ডুলামের মতো দুলছে সাগরিকা টেস্ট

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

পেন্ডুলামের মতো দুলছে সাগরিকা টেস্ট

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ বছর হয়ে গেল। এই দীর্ঘ সময়ে যে কাজটি করতে পারেনি বাংলাদেশ, সেটিই করার পথে এগিয়ে চলেছে। আর ৩৩ রান করলেই ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে কুপোকাত করে দেবে বাংলাদেশ। সেটি যদি শেষ পর্যন্ত করা যায়, তাহলে ইতিহাসই গড়ে ফেলবে। এখন পর্যন্ত যে ২১৫ রানের বেশি টার্গেটে বাংলাদেশ জয় তুলে নিতে পারেনি, সেই ইতিহাসই বদলে যাবে। ইতিহাস বদলাতে পারবে বাংলাদেশ? পারার কথা। প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রান করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামার আগেই ৪৫ রানে এগিয়ে থাকে ইংল্যান্ড। এরপর যে রান করে, তাতেই বড় টার্গেট দাঁড় হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান যোগ করে। ২৮৫ রানে এগিয়ে থাকে। বাংলাদেশের সামনে জিততে ২৮৬ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এ রান তুলতে বাংলাদেশের হাতে প্রায় দুইদিন থাকে। ইংল্যান্ডের দুই ইনিংস ও বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস মিলিয়ে ২৭২ ওভার খেলা হয়। তাতে ১৭৮ ওভার বাকি থাকে। হাতে থাকে ১০টি উইকেটও। কিন্তু চতুর্থদিনেই ৮ উইকেট পড়ে যায়। রান হয় ২৫৩। জিততে যে রান বাকি আছে তা এখনও করা সম্ভব। যদি দুর্দান্ত খেলা সাব্বির ও তাইজুল একটু ধৈর্য ধরে খেলতে পারেন। উইকেট আঁকড়ে থাকলে রান বের হবেই। বাংলাদেশ এর আগে ২১৫ রান বা তার বেশি টার্গেটে খেলতে নেমে একবারই জিততে পেরেছে। সেটি ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এর আগে ও পরে কখনই আর ২১৫ রানের বেশি টার্গেটে ম্যাচ বের করে নিতে পারেনি। বেশি টার্গেট যখনই পড়েছে বাংলাদেশের সামনে, জয় তুলে নিতে পারেনি। এবার তার চেয়েও অনেক বেশি টার্গেট নিয়ে খেলে জয়ের কাছাকাছি চলে গেছে। এখন ইতিহাস গড়ার পালা। ম্যাচের পঞ্চম দিনে সাব্বির ও তাইজুল ব্যাট হাতে নামবেন। তারা ছাড়াও আছেন শফিউল। হাতে আছে আরও ২টি উইকেট। যদি জিততে ৬৬ রান বাকি থাকার সময়, দিনের ১০ ওভার বাকি থাকার সময় মুশফিক (১২৪ বলে ৩৯ রান) আউট না হতেন, তাহলে এতক্ষণে বাংলাদেশ নিশ্চিত জিতে যেত, তা বলাই যেত। কিন্তু যেই দলের স্কোরবোর্ডে ২২৭ রান জমা হলো। মুশফিক আউট হলেন। ছন্দপতনও যেন শুরু হয়ে গেল। কত কষ্টে, কত ধৈর্য ধরে ১২৪টি বল খেলে উইকেটে টিকে থাকলেন মুশফিক। সাব্বিরকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৮৭ রানের জুটিও গড়লেন অথচ শেষমুহূর্তে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। তাতে বাংলাদেশের স্বপ্নের সমাধিও যেন হওয়ার পথে। বাংলাদেশের চিরাচরিত রূপই যেন দেখার মিলল। মুশফিক আশা দেখালেন। সেই মুশফিকই যেন ডুবিয়ে দিলেন। তার ওপরই ভরসা ছিল। দ্বিতীয় দিনের মতো শেষ বেলাতে গিয়ে মুশফিক আবারও সাজঘরে ফিরলেন। বাংলাদেশের স্বপ্নে আঘাতও এলো। টেস্ট ক্রিকেটে ১৯৩০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৮৫ রানের বেশি টার্গেট পড়েছে ৬৬৫টি ম্যাচে। এর মধ্যে ৪০১টি ম্যাচেই হার হয়েছে। ২২৯টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। আর একটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। জয় হয়েছে ৩৪টি ম্যাচে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ২৮৫ রানের বেশি টার্গেট পড়লেই জেতা কত কষ্ট। সেই কষ্টের কাজটি বাংলাদেশ সহজভাবেই করতে পারত। কিন্তু টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা যেন পিছুই ছাড়ছে না। দুইদিন হাতে ছিল। এমন ম্যাচে উইকেট আঁকড়ে থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়াই প্রধান কাজ হওয়া উচিত। উইকেটে সেট হলে রানও বের হবে। কিন্তু সেটিই তো টপঅর্ডাররা করতে পারলেন না। ১৪০ রানেই ৫ উইকেটের পতন ঘটে যায়। দলের সেরা সব ব্যাটসম্যান তামিম, ইমরুল, মুমিনুল, মাহমুদুল্লাহ ও সাকিব সাজঘরে ফেরেন। যাদের ওপর আশা, তারাই হতাশায় ডোবান। এরপর মুশফিক-সাব্বির মিলে আবার আশার বেলুন আকাশে ওড়ান। কিন্তু ২২৭ রানে গিয়ে মুশফিক আউট হতেই সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে যায়। ৬ উইকেটের পতন ঘটে যায়। তবে মুশফিক আউট হতেই যে হারের বিপত্তিও ঘাড়ে ভালভাবেই চেপে বসে, তা বোঝা হয়ে যায়। মুহূর্তেই ২৩৮ রানের মধ্যে মিরাজ ও রাব্বিও আউট হন। তখন জিততে লাগে ৪৮ রান। হাতে থাকে ২ উইকেট। এর মধ্যে সাব্বির অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেই অর্ধশতক করে ফেলেন। একমাত্র সাব্বিরেই তখন সব আশা টিকে থাকে। যদি জয় কোনভাবে মিলে যায়। সেই আশাই থাকে। সেই আশা দেখাচ্ছেনও সাব্বির। সঙ্গে তাইজুল মিলে এখন জয়টি বাংলাদেশকে এনে দিতে পারলেই হয়। আজই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে যাবে। তবে ম্যাচটি যে ইংল্যান্ডের দিকেই হেলে পড়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। ‘জাদুকরী’ কিছু না ঘটলে ম্যাচটি বাংলাদেশের হাত থেকে ছুটে গেছে। সেই ছোটা তো তৃতীয় দিনেই গেছে। যখন ২৭৩ রানে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। চতুর্থদিনের সকালে বাকি থাকা দুই উইকেটে মাত্র ১২ রান যোগ করতেই অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। টার্গেটটা আরেকটু বড় হয়। এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের পালা। টপঅর্ডাররা আবারও ব্যর্থ হলেন। আর সেই ব্যর্থতায় এখন টেস্ট হারের শঙ্কাতেই পড়ে গেল বাংলাদেশ। সকালের সেশন যে মহা বিপজ্জনক! বাংলাদেশের হাতে আছে ২ উইকেট। জিততে বাকি ৩৩ রান। প্রথমদিন ইংল্যান্ড সকালে ২১ রানেই ৩ উইকেট হারায়। দ্বিতীয় দিন দ্রুত ৩ উইকেট হারায়। তৃতীয় দিন সকালেই বাংলাদেশ হারায় ৪ উইকেট! চতুর্থদিন সকালে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শেষ ২ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশেরও একটি উইকেট যায়। আজ পঞ্চমদিনে সেই রকম কিছু ঘটলেই বিপদ। হেরে যাবে বাংলাদেশ। তবে জয়ের সম্ভাবনাও এখন উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ব্যাট হাতে যে সাব্বির (৫৯*) এখনও আশা দেখাচ্ছেন। আর তাইজুল (১১*) চতুর্থদিনের শেষ দিকে যে ছন্দ পেয়েছেন, তা ধরে রাখলেই হলো। এখন সবার একটিই প্রশ্ন, টেস্ট জিততে পারবে বাংলাদেশ? পারবে ইতিহাস গড়তে? যে ইতিহাস ডাকছে বাংলাদেশকে।
×