ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবকদের দ্বিধাদ্বন্দ্বে না থাকার আহ্বান

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়েই হবে ॥ শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হঠাৎ অপরাগতা প্রকাশ করায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও সকলকে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। হঠাৎ দায়িত্ব পাওয়ায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিতে চাপ হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রবিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পরীক্ষা নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই, ঠিক সময়েই পরীক্ষা হবে। আমাদের পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকের উদ্দেশে বলছি, পরীক্ষা নিয়ে আপনারা কোন ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকবেন না। কিংবা আপনারা কোনভাবেই কোন সন্দেহ রাখবেন না যে, এটা ঠিকভাবে হবে কি হবে না। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আগামী ১ নবেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হতে যাওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা তারা নিতে পারছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে এক আধা সরকারী পত্রে (ডিও লেটার) বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের এ পরীক্ষাটি নিতে বলেছিল। কিন্তু যেহেতু মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে তাদের কর্তৃত্ব দেয়নি তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে বহু আগেই। দায়িত্ব পাওয়ার পর এবার প্রথমবারের মতো অষ্টম শ্রেণীর এ পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে বলে ঘোষণাও দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুসারে এ মন্ত্রণালয় কমিটি করে একদফা বৈঠকও করেছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেও পরীক্ষা নিতে পারছে না, প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের এমন ঘোষণায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা কাটাতেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা অন্যান্যবারের মতো সময়মতো প্রতিটি পরীক্ষা গ্রহণ করব এবং ফলও দেব। আগামী ১ নবেম্বর পরীক্ষা শুরু হবে, শেষ হবে ১৭ নবেম্বর। ৩০ দিনের মধ্যে আমরা ফল দেই। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাদের সব শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের অন্যবার যে নিয়মে হয়েছে, সেই নিয়মেই সবকিছু হবে। কোন ব্যত্যয় হবে না। শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী বা জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেয়ার কথা জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সে হিসেবে আমরা বলেছি, যেহেতু প্রথম তাই সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাব। শিক্ষাবোর্ডগুলো পরীক্ষার আয়োজন করবে। এ বিষয়ে যে সাহায্য লাগে সেটা করতে প্রথম থেকেই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, আমরা সে সাহায্যই করছিলাম। গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর চিঠি পেলাম। লিখেছেনÑ তাদের পক্ষে এখন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় খুব স্বল্প সময় পাওয়ায় আমরাও কিছুটা অপ্রস্তুত। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এটা আমাদের দায়িত্ব, কারণ পরীক্ষাটা অব্যাহত রাখতে হবে। মাঝখানে একটা বিচ্ছিন্নতা হলে আমাদের ধারাবাহিকতায় ক্ষতি হবে। আমরা একই শিক্ষা পরিবার, দুটিই সরকারের মন্ত্রণালয়। কাজগুলো যখন যে যা পারে করার দায়িত্ব নিতে দ্বিধাবোধ করার কোন কারণ নেই। যদিও আমাদের খুব চাপ পড়বে, রাত-দিন খেটেই এটা করতে হবে। বন্ধ (শুক্র ও শনিবার) থাকলেও আমরা কিছুটা যোগাযোগ করে ফেলেছি। বোর্ডগুলোকে প্রস্তুত করেছি। আমাদের মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) আমাদের ওপর আস্থা রেখেই বলেছে, আমরা যেন করে ফেলি (পরীক্ষা নেয়া)। আমরা তাদের আস্থার অবশ্যই মর্যাদা রাখব। পরীক্ষা আমরা আগের মতোই করব। মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ লিখেছেন আমি ক্ষুব্ধ। আমি কোথাও এ কথাটা বলিনি। বরং তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখায় আমরা খুশি হয়েছি। এটা ঠিক যে, আমাদের ওপর চাপ বেশি পড়বে। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন পরীক্ষা নিতে পারবে না তা তিনি জানেন না দাবি করে বলেন, তাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব। জেএসসি-জেডিসিতে পরীক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার ॥ শিক্ষামন্ত্রী জানান, এ বছর জেএসসি ও জেডিসিতে মোট পরীক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার ১৫। এর মধ্যে ছাত্র ১১ লাখ ২৩ হাজার ১৬২ ও ছাত্রী ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৩। ছাত্র থেকে ছাত্রী বেশি এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৯১। ২৮ হাজার ৮৪৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৭৩৪ কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে। আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জেএসসিতে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৩ ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭২ পরীক্ষা দেবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেন, কেউ যেন কোনভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা না করেন। আমাদের মনিটরিং অব্যাহত আছে। সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতন আছে, সক্রিয় আছে। কেউ মিথ্যা অপপ্রচার করে আমাদের ছেলেমেয়েদের বিভ্রান্ত করবেন না। পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ফেসবুক বন্ধ করা বড় জটিল ব্যাপার। ফেসবুক বন্ধ হবে না। তবে ফেসবুকের ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে।
×