ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কবিতায় সময় ও ইতিহাস স্পর্শ করেছেন শামসুর রাহমান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

কবিতায় সময় ও ইতিহাস স্পর্শ করেছেন শামসুর রাহমান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কবিতায় সময় ও ইতিহাসকে স্পর্শ করেছেন শামসুর রাহমান। জাতিসত্তার এই কবির কবিতায় রেখে গেছেন সময়ের ছাপ। ধারণ করেছেন এ দেশের ইতিহাসের প্রতিটি বিন্দুকে। পৃথকভাবে চিহ্নিত করেছেন বাংলাদেশের কবিতাকে। তাই তাঁকে ধারণ করলে দীপ্ত হয় বর্তমান ও ভবিষ্যত। কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিনের আয়োজনে এভাবেই তাঁকে মূল্যায়ন করলেন আরেক কবি রবিউল হুসাইন। রবিবার কবির ৮৮তম জন্মদিন উদ্যাপনের আয়োজনে তিনি এসব কথা বলেন। হেমন্তের বিকেলে বাংলা একাডেমির সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত রবীন্দ্র চত্বরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কবির সৃষ্টির মূল্যায়নভিত্তিক আলোচনা, তাঁকে নিবেদিত কবিদের কবিতাপাঠ, তাঁর রচিত কবিতার আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশনায় সাজানো হয় জন্মদিনের এ আয়োজন। যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। আলোচনায় অংশ নেন- সংস্কৃতিজন রামেন্দু মজুমদার, কবি রবিউল হুসাইন, কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা এবং অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমি ও শামসুর রাহমান স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। কবির পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র ব্যারিস্টার তৌফিকুর রাহমান। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শামসুর রাহমানের কবিতায় প্রথমদিকে ত্রিশের কবিতার আবহ ছিল। তবে আবহ ছাপিয়ে ক্রমেই তিনি এ ভূখ-ের কবিতায় সৃষ্টি করেছেন মৌলিক সুর। বাংলা কবিতায় যুক্ত করেছেন নতুন মাত্রা। পাকিস্তানপর্বে জারি হওয়া সামরিক শাসন যখন বাঙালীর মৌলিক অধিকার হরণ করতে শুরু করে, তখন শামসুর রাহমান কবিতার অক্ষরে অক্ষরে বাঙালীর নিজস্বতার কথা বাক্সময় করে তুলেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে ভিয়েতনামের যুদ্ধ পর্যন্ত তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু হয়েছে অবলীলায়। মানুষের শুভ ও কল্যাণের কথা কবিতায় কী করে উচ্চারণ করতে হয় শামসুর রাহমানের কবিতা তার উদাহরণ হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, সমাজ ও রাজনৈতিক বিষয় আশ্রিত হলেও শামসুর রাহমানের কবিতা কখনই স্লোগান হয়ে ওঠেনি। সব সময়ই তাঁর কবিতা হয়েছে শিল্পোত্তীর্ণ। কবি পরিচয়ের বাইরে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মিছিলেও ছিলেন তিনি। আমৃত্যু কথা বলেছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। অন্য আলোচকরা বলেন, বাংলা কবিতার উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের একজন কবি শামসুর রাহমান। আবহমান বাংলার জনজীবন ও প্রকৃতির রূপময় বর্ণনায় যেমন তাঁর কবিতা ভাস্বর, তেমনি আমাদের সাহিত্যিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাপচিত্র হয়ে আছে তাঁর কবিতাভুবন। রূপালী স্নান থেকে তাঁর কবিতাযাত্রা গন্তব্য পেয়েছে রক্ত আর মিছিলের স্রোতে। মধ্যবিত্ত জীবনের একান্ত অনুভব-উপলব্ধিকে যেমন তিনি কবিতায় মেলে ধরেছেন তেমনি সমষ্টির কণ্ঠস্বরকেও ভাষা দিয়েছেন। তাই তাঁর জন্মদিন মানে বাংলাদেশের কবিতারই জন্মদিন। তাঁরা বলেন, শামসুর রাহমান বেড়ে ওঠার ইতিহাস আমাদের কবিতার অগ্রযাত্রারও ইতিহাস। কারণ রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে এ দেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা হলেও শামসুর রাহমানের কবিতাই আমাদের প্রকৃত ইতিহাসের বিশ্বস্ত সাক্ষ্য হয়ে থাকবে। তিনি ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পর্যন্ত আমাদের ইতিহাসের প্রতিটি বিন্দুকে স্পর্শ করে গেছেন। কবিতার সঙ্গে জনবিচ্ছিন্নতার অপবাদ শামসুর রাহমান একেবারেই ঘুচিয়ে দিয়ে গেছেন; স্বপ্নচারিতার সমান্তরালে তাঁর পা প্রোথিত ছিল বাংলার পবিত্র মৃত্তিকায়। এজন্য শামসুর রাহমান যেমন বারবার আমাদের স্মরণে আসবেন, তেমনি থাকবেন আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন ও সংগ্রামে। অনুষ্ঠানে শামসুর রাহমানকে নিয়ে লেখা কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শামসুর রাহমানের কবিতা আবৃত্তি করেন লায়লা আফরোজ, শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও তামান্না সারোয়ার নীপা। শামসুর রাহমানকে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন- কবি কাজী রোজী, সাযযাদ কাদির, রবীন্দ্র গোপ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, বদরুল হায়দার, পিয়াস মজিদ, এম আর মনজু, রনজু চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন চাষা প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন শারমিন সাথী ইসলাম ও সুমা রায়। স্মৃতিতে কবি শামসুর রাহমান ॥ কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে রবিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। ‘স্মৃতিতে কবি শামসুর রাহমান’ শীর্ষক এ আয়োজনে রয়েছে আলোকচিত্রী সৈয়দ মাসুদ হোসেনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা, কবিতাপাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পিদিম থিয়েটারের শিশুদের পরিবেশনায় কবিকে নিবেদিত ‘আমার বাংলা’ শীর্ষক গীতিনাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেখক জাদুঘরের আহ্বায়ক কবি অসীম সাহা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লেখক জাদুঘরের যুগ্মআহ্বায়ক কবি আসলাম সানী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন লেখক জাদুঘরের সদস্য সচিব শারমিন সাথী। এছাড়াও বক্তব্য দেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান আজিজ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবি আমিনুল ইসলাম, কবি নাসির আহমেদ প্রমুখ। সভাপতি ছিলেন সাংসদ ও কবি কাজী রোজী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ড. শাহাদৎ হোসেন নিপু। আলোকচিত্রী সৈয়দ মাসুদ হোসেনের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে রয়েছে কবির নানান বয়সের নানামাত্রিক ছবি। বিশেষত রয়েছে কবির ঘরোয়া নানান আলোকচিত্র। এছাড়াও রয়েছে কবির বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’, ‘কখনো আমার মাকে’ এবং ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’ কবিতার প্রদর্শনী। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নাট্যজন আলী যাকের, কবি ড. মোহাম্মদ সাদিক প্রমুখ।
×