ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

চট্টগ্রাম টেস্টে জয়ের আশা জিইয়ে রেখেছে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টের পরতে পরতে রোমাঞ্চ! প্রতিদিনই রোমাঞ্চে ভরা টেস্ট। সেই রোমাঞ্চ আজ পঞ্চমদিনে যেন আরও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ! যে কোন একটি দলের জয়, আরেকটি দলের হার দিয়ে এই দিনে ম্যাচের ইতি ঘটছে। কিন্তু ইতিটা টানবেন কে? কোন্ দলই বা জিতবে? সেই প্রশ্নই এখন সবার মনে। আশা শেষ পর্যন্ত জিতবে বাংলাদেশই। জিততে যে রান লাগে আর ৩৩। হাতে এখনও আছে দুই উইকেট। আর পুরো একটি দিন। উইকেটে আছেন ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকা সেট ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মন। তার সঙ্গে চতুর্থদিন শেষ বেলায় ছন্দ পাওয়া তাইজুল ইসলামও (১১*) রয়েছেন। একই ছন্দ যদি আজও ধরে রাখতে পারেন সাব্বির ও তাইজুল, তাহলে টেস্ট তো বাংলাদেশেরই জেতার কথা। জয় মিলুক বাংলাদেশেরই। তা বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের চাওয়া। কিন্তু এখানে আবার শঙ্কাও থাকছে। কী সেই শঙ্কা? শুরুতেই যে ভয়ঙ্কর সকালের সেশন খেলতে হবে। যে সেশনে প্রতিটি দিনই কম করে হলেও তিনটি করে উইকেট পড়েছে। সেটি ইংল্যান্ডের ইনিংসে হোক কিংবা বাংলাদেশের ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রান করেছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ২৪০ রান। আর প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪৮ রান করায় জিততে মুশফিকবাহিনীর সামনে ২৮৬ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। চতুর্থদিন শেষে ২৫৩ রান করে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ছাড়া প্রতিটি ইনিংসের শুরুতে এবং সকালের সেশনে ৩০ রানের ধারে কাছে ২ উইকেট পড়েছে তো মুড়ি-মুড়কির মতো! তাই আজ যত ভয়। ৩৩ রান করার আগেই না আবার ২ উইকেটের পতন ঘটে যায়। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রথমদিনে প্রথম তিন উইকেট পড়তে তো এক ঘণ্টাও লাগেনি। দ্বিতীয় দিন আবার ৩১ রান করতেই ২ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসেও দেখা গেছে সেই একই চিত্র। দ্বিতীয় দিন ইংল্যান্ডকে অলআউট করে দিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই ২৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনে তো ২৭ রানে ৫ উইকেটই হারিয়ে বসে। আর এখানেই দীর্ঘশ্বাস মেলে। আফসোসও হতে থাকে। এই ৫ উইকেটে যদি বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নিতে পারত পারত, তাহলে খেলা তো পঞ্চমদিনে গড়াতই না! বাংলাদেশ এরই মধ্যে জিতে যাওয়ারও কথা! কিন্তু হলো না। দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষ হতেই ৪৫ রানে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। যেটি ইংল্যান্ডকে শুরুতেই যেন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণের আসনে বসিয়ে দেয়। এরপর ইংল্যান্ড যখন দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে, ২৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। সেটি আবার তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই। তৃতীয় দিন শেষে যখন দ্বিতীয় ইনিংসে স্কোরবোর্ডে ৮ উইকেটে ২২৮ রান যোগ করে ফেলে ইংল্যান্ড, তখনই যেন বাংলাদেশকে হার চোখ রাঙ্গাতে থাকে। ততক্ষণে যে ২৭৩ রানে এগিয়ে যায় ইংলিশরা। চতুর্থদিন ১২ রান যোগ করতেই হারিয়ে বসে বাকি থাকা ২ উইকেট। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের সামনে জিততে ২৮৬ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এ রান অতিক্রম করতে গিয়ে অবশ্য ৩০ রানের নিচে বাংলাদেশ কোন উইকেট হারায়নি। তবে সকালের সেশন শেষ হওয়ার আগেই ২ উইকেট হারিয়ে বসে। দিন শেষে ৮ উইকেটে ২৫৩ রান করে বাংলাদেশ। ভয় যা সকালের সেশন নিয়েই। বাংলাদেশের ২ উইকেট না আবার টার্গেট পূরণের আগে সকালের সেশনেই কাত হয়ে যায়। তাহলে জয়টি ইংল্যান্ডের হাতেই ধরা দিয়ে দেবে। বাংলাদেশ জয়ের আশায় আছে। কিন্তু সেই আশায় শঙ্কাও আছে অথচ ১৪০ রানেই ৫ উইকেট পড়ার পর সাব্বিরকে নিয়ে যে মুশফিক এগিয়ে যেতে থাকেন, তা আরেকটু দীর্ঘ হলেই হতো। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যেত। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে সাব্বিরের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়ার পর দলের জিততে যখন ৬৬ রান লাগে, এমন সময়ে দিনের ১০ ওভার বাকি থাকতে আউট হয়ে গেলেন মুশফিক। ১২৪ বল খেলে ৩৯ রান করেন। তাতেই বোঝা যায়, উইকেট আঁকড়ে থাকতে কত চেষ্টা করেছেন মুশফিক। সেই চেষ্টা আরও বাড়লে চতুর্থদিন শেষে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাই ভারি থাকত। কিন্তু আরও ২টি উইকেট পতনে ম্যাচে বাংলাদেশ জিতবেই, সেই আশা করা যাচ্ছে না। উইকেট হাতে যে মাত্র ২টি। রান দরকার ৩৩। এখন যা করার সাব্বিরকেই করতে হবে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই প্রথম ইনিংসে ১৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেই অর্ধশতক করেছেন। বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছেন। তার সঙ্গে তাইজুল একটু উইকেট আঁকড়ে থাকলে ম্যাচে জয়ও মিলতে পারে। প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে জয়ের আশাতেই আছেন। কোচ বলেন, ‘আমি অনেক প্রতিযোগিতাপূর্ণ টেস্ট ম্যাচ দেখেছি। তার মধ্যে এটিকেও অন্যতম সেরা ম্যাচ হিসেবে রাখব। এই উইকেটে খেলা অনেক কঠিন। কিন্তু আমার ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। বিশেষ করে সাব্বির অনেক চাপের মধ্যেও দুর্দান্ত খেলেছে। এছাড়া মুশফিক, ইমরুল ও তামিম খুব ভাল ইনিংস খেলেছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সবাই জিততে চায়। এখনও আমাদের দুটি উইকেট আছে। পঞ্চমদিন সকালে বলের মেরিট অনুযায়ী খেলতে পারলে জেতাটা আমাদের জন্য কঠিন হবে না। এটা খুব ভাল একটা টেস্ট হচ্ছে। ছেলেরা সবাই দুর্দান্ত খেলছে। এই কঠিন উইকেটে আমরা এখনও ম্যাচে আছি এটা অনেক বড় ব্যাপার।’ জয়ের আশায় শুধু হাতুরাসিংহে নন, বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা ও বাংলাদেশের মানুষ আছেন। এখন সেই জয়টি মিললেই ইতিহাস হয়ে যাবে। ২০০০ সাল থেকে টেস্ট ক্রিকেট খেলে এখন পর্যন্ত যে এত বড় টার্গেটে খেলতে নেমে জিততে পারেনি। এবার পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটিতে সেই জয়ের আশায় আছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত মিলবে জয়?
×