ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাভেল এজেন্টদের ভ্যাট মওকুফ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২৪ অক্টোবর ২০১৬

ট্রাভেল এজেন্টদের ভ্যাট  মওকুফ হচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ট্রাভেল এজেন্টগুলোর সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) ভ্যাট মওকুফের আবেদন বিবেচনায় না নেয়ায় ট্রাভেল এজেন্টদের ওপর আরোপিত ভ্যাট মওকুফ হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ভ্যাট মওকুফের আবেদন করা হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তা পর্যালোচনা করে ভ্যাট মওকুফ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে। একই সঙ্গে এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভ্যাটের পরিবর্তে আবগারি শুল্ক বাড়ানো যায় কিনা তা পর্যালোচনা করতে অর্থমন্ত্রী যে সুপারিশ করেছিলেন সেটিও সম্ভব নয় বলে এনবিআর জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য আপাতত কোন সুসংবাদ নেই। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ট্রাভেল এজেন্টদের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়। সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলা এবং জনশক্তি রফতানিতে ভাটার কারণ দেখিয়ে আটাবের পক্ষ থেকে ভ্যাট মওকুফসহ বেশকিছু দাবি জানানো হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক আবেদনে আটাব পর্যটন খাতের সাম্প্রতিক অবস্থা তুলে ধরে এসব দাবি জানায়। অর্থমন্ত্রী এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভ্যাট মওকুফের পরিবর্তে আবগারি শুল্ক বাড়ানো যায় কিনা তাও পর্যালোচনা করে দেখতে বলেন। এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চূড়ান্ত বাজেট পাসের সময় বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়নি। তাই এ ব্যাপারে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। তাই প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফের কোন সুযোগ নেই। আবগারি শুল্ক চার্জের ব্যাপারে এনবিআর থেকে বলা হয়েছে, বিমান টিকেটের ওপর যে আবগারি শুল্ক রয়েছে তা সরাসরি ভোক্তা পরিশোধ করে। তাই এটি বাড়ানো সম্ভব নয়। তাছাড়া মুসকের আওতা বাড়ানো এবং মওকুফ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বলেও জানানো হয়। সূত্র জানায়, পর্যটন খাতে মন্দাভাব চলছে। সাম্প্রতিক জঙ্গী হামলা এবং জনশক্তি রফতানিতে ভাটার অন্যতম কারণ বলে মনে করছে আটাব। বিশেষ করে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এর ওপর প্রভাব ফেলছে বলে অর্থমন্ত্রীকে লেখা আবেদনে জানিয়েছে আটাব। এতে বলা হয়েছে, আটাবের সদস্যভুক্ত এজেন্সিগুলোর টিকেট বিক্রি ৭০ শতাংশ জনশক্তি রফতানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে জনশক্তি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ব্যবসাও কমেছে। ইতোমধ্যে অনেক এজেন্সি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় সরকারী পর্যায়ে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর পাশাপাশি জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নানা দেশও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াতে জনশক্তি রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আটাবের চিঠিতে বলা হয়েছে, চলমান বাজার প্রতিযোগিতায় টিকেট বিক্রি থেকে ট্রাভেল এজেন্টরা যে কমিশন পায় তার সিংহভাগ কমিশনই ছাড় দিয়ে টিকেট বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ একটি টিকেট বিক্রি করে শুধু ভাড়ার ওপর সর্বোচ্চ এক থেকে দুই শতাংশ কমিশন পাওয়া যায়। আর টিকেটের সঙ্গে আনুষঙ্গিক ট্যাক্স ও ফির ওপর কোন ধরনের কমিশন পাওয়া যায় না। এমনকি কয়েকটি এয়ারলাইন্স কমিশন না দিয়ে শুধু নিট ফেয়ারে টিকেট বিক্রি করছে। চিঠিতে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সিদের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে পর্যটন খাতে চলমান মন্দার বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকেও ভাবাচ্ছে। তাই তিনি এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে এনবিআর থেকে একটি মতামত পাঠানো হবে। এনবিআরের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই ট্রাভেল এজেন্টদের চার্জ নির্ধারণ করা হতে পারে।
×