ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৮২ হাজার, সন্দেহে ভাইরাস

প্রকাশিত: ২০:১০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও ৮২ হাজার, সন্দেহে ভাইরাস

অনলাইন ডেস্ক ॥একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সার্ভারে ভাইরাস হানার পরে দেশ জু়ড়ে এটিএম জালিয়াতির কথা প্রকাশ্যে এসেছিল। এ শহরেও সেই অপরাধের শিকার হন এক আইনজীবী। এ বার তেঘরিয়ার এক দম্পতির অ্যাকাউন্ট থেকে ৮২ হাজার টাকা উধাও হওয়ার পিছনেও সেই ভাইরাসকেই সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। ব্যাঙ্কের সার্ভারে ভাইরাস হানার কথা জেনে নিজেদের অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন তেঘরিয়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষিকা সুস্মিতা দাস ও তাঁর স্বামী অনীত দাস। তাঁরা জানান, অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ছিল। পরীক্ষা করার জন্য শুক্রবার রাতে স্থানীয় একটি এটিএম থেকে এক হাজার টাকা তোলেন তাঁরা। ব্যালান্স পরীক্ষা করে দেখেন, অ্যাকাউন্টে ৮২ হাজার টাকা কম রয়েছে। এর পরেই ফোন করে কার্ডটি ব্লক করিয়েছেন ওই দম্পতি। বাগুইআটি থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম নেটওয়ার্কের সার্ভারে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের পরিষেবা ব্যবহারকারী বহু গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকা তোলা হয়েছে চিন থেকে। যার পরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে ‘চিনা গ্যাং’-এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে। কলকাতার আইনজীবী কল্যাণ ভৌমিকের টাকাও চিন থেকে তোলা হয়েছিল। পরিস্থিতির এতটাই গুরুত্ব যে, এই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তবে সুস্মিতাদেবীর টাকা কোথা থেকে তোলা হয়েছে, জানা যায়নি। পুলিশ সূত্র ও সুস্মিতাদেবী, দু’পক্ষই জানিয়েছেন, এ দিন মাসের চতুর্থ শনিবার হওয়ায় ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। কাল, সোমবার ব্যাঙ্ক খুললে এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। চিনা গ্যাং যেমন বিদেশে বসে টাকা সাফ করে চলেছে, তেমনই দেশের মধ্যে বসে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি চালাচ্ছে ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’। গ্রাহকদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে ওই গ্যাং। শনিবার তাদের শিকার হয়েছেন হাওড়ার অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী শিখা মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এ দিন সকালে এক যুবক তাঁর মোবাইলে ফোন করে নিজেকে ব্যাঙ্ককর্মী বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘কেওয়াইসি’-র নথিপত্র জমা না দেওয়ায় শিখাদেবীর অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে তাঁর এটিএম কার্ড। প্রথমে আমল না দিলেও বারবার ওই যুবকের ফোন পেয়ে শিখাদেবী এটিএম কার্ডের নম্বর, সিভিভি নম্বর বলে দেন। পরে এসএমএসে আসা ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’-ও (ওটিপি যা টাকা লেনদেনের সময় স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে পাঠানো হয় এবং এক বারই তা ব্যবহার করা যায়) বলে দেন। শিখাদেবীর অভিযোগ, এর পরেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে বালি নর্থ ঘোষপাড়ার ওই মহিলা নিশ্চিন্দা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাকেও। শনিবার সকালে একই রকম ফোন পেয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তিনি কোনও রকম তথ্য দেননি। একই ভাবে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে যাদবপুর সন্তোষপুরের বাসিন্দা মৃণাল মণ্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকেও। তাঁর দাবি, ১৫ অক্টোবর এক যুবক তাঁকে ফোন করে ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বর, কার্ড নম্বর বলে এবং সিভিভি নম্বর চায়। তিনি না দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ১৫ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত একাধিক বার জালিয়াত মৃণালবাবুকে ফোন করেছিল এবং মোবাইলে আসা ‘ওটিপি’ একাধিক বার জালিয়াতকে দিয়েছেন মৃণালবাবু। একই ভাবে টাকা খোওয়া গিয়েছে দত্তাবাদের বাসিন্দা মধুসূদন দাসেরও। পুলিশ জানিয়েছে, এই ধরনের জালিয়াতির আঁতুড়ঘর ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার কর্মটাঁড়। সেই সূত্রেই এর নাম ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’ হয়েছে। বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। তবে ইদানীং কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’ কর্মটাঁড় ছেড়ে ছ়ড়িয়ে পড়ছে এ রাজ্য-সহ দেশের নানা জায়গায়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×