ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওরা ছয় জন

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে  ওরা ছয় জন

হিমালয় কন্যা নেপালের ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে ওদের শৈশব কেটেছে। বরফাচ্ছাদিত পাহাড়, ক্ষরস্রোতা নদী, পাহাড়ী বনের ফুল, পাখি ও গাছ ছিল তাদের শৈশব-কৈশরের বন্ধু। কিন্তু উচ্চশিক্ষার টানে হিমালয় ছেড়ে ওরা ছুটে এসেছে বরেন্দ্র ভূমি রাজশাহীতে। বলছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ৬ নেপালী শিক্ষার্থীর কথা। রাবিতে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে জিলানী আনসারি, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে বসন্ত রাজগিরী, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ফার্মেসি বিভাগে রিতেশগিরী, ইলেক্ট্রনিক এ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রাওয়াজ শেখ, কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগে পুষ্পা ঠাকুর এবং ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে এনিমেল হাজবেন্ড্রি এ্যান্ড ভেটেনারি সায়েন্স বিভাগে রঞ্জিত মল্লিক। দুই দেশ, দুই ভিন্ন পরিবেশ। খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতি, জলবায়ু, ভূমিরূপ- সব কিছুতেই বিস্তর ফারাক। প্রথম দিকে রাজশাহীর পানি, খাবারের স্বাদ, বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের তীব্র গরমের সঙ্গে মানিয়ে চলা তাদের জন্য বেশ কঠিন ছিল। দেশের টান প্রবলভাবে অনুভব করতেন। কিন্তু সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেন। এমনকি তারা বাংলা বোঝেন, কয়েকজন তো অনর্গল বাংলায় কথা বলতে পারেন এবং পড়তেও পারেন। তাদের বাংলা শেখার পেছনে বড় অবদান সহপাঠী, শিক্ষকদের। ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের জিলানি আনসারি বলেন, বাংলা ভাষাটা খুব মজার, আমাদের ভাষার সঙ্গে কিছুটা মিলও আছে। এখানকার সব মানুষ বাংলাই ব্যবহার করেন। পুরো পরিবেশটাই বাংলা আর বাঙালীর, তাই আমরা বাংলা না শিখে যাই কোথায়? শুধু ভাষাই নয়, সংস্কৃতিরও খানিকটা মিল রয়েছে। দু’দেশেই বৈশাখের প্রথম দিনে নববর্ষ উদযাপিত হয়। তবে বর্ষবরণ যে এতটা উৎসবমুখর আর রঙিনভাবে পালন করা যায়, সেটা তারা এখানে এসেই প্রথম দেখলেন। তাদের চোখে বাঙালীরা খুবই উৎসবপ্রিয় মানুষ। শুধু বর্ষবরণই নয়, অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক উৎসবগুলোর পাশাপাশি জাতীয় দিবসগুলোও ধুমধাম করে এদেশে পালিত হয়। তারাও এসব উৎসবে, দিবসে মেতে ওঠেন, পাঞ্জাবি পরেন, পান্তা-ইলিশ খান। এভাবে তারা এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে আন্দোলিত ও সম্পৃক্ত হচ্ছেন। তারাও নিজেদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জানাচ্ছেন। এভাবে রাবি হয়ে উঠেছে নানান দেশ, নানান জাতি, নানান ভাষা, নানান সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও সম্মিলন কেন্দ্র। ঈদ, পূজার ছুটিতে তারা বেড়াতে যান দেশের নানা প্রান্তে। ঘুরে দেখেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এবং বিভিন্ন প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনাসহ নানা দর্শনীয় স্থান। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা এত সুন্দর ও সমৃদ্ধ একটা দেশ, এদেশের মানুষদের সারল্য, আতিথেয়তায় তারা মুগ্ধ। ছুটিতে নেপালে গেলে তারা খুব আনন্দভরে এদেশের গল্প শোনান। ফার্মেসি বিভাগের রিতেশগিরী বলেন, এখানে আসবার আগে শুনেছিলাম বাংলাদেশ খুব সুন্দর একটা দেশ। এদেশের মানুষগুলো খুব সরল আর অতিথিপরায়ণ। এখানে এসে দেখলাম সবই সত্যি। আমি এদেশের প্রেমে পড়ে গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাদের সুযোগ-সুবিধার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। তাদের জন্য রয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গী হামলার পর রাবি প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দ্বিগুণ করেছে। তাদের থাকার জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন শহীদ মীর কাইয়ুম আন্তর্জাতিক ডরমেটরি। তারা কোন সমস্যা ও অসুবিধার সম্মুখীন হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেন। শুধু তাই নয়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিদ্যাপীঠ শিক্ষায়, গবেষণায় দিনে দিনে আরও উন্নতি করে চলেছে। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সুনাম কুড়াচ্ছে। এছাড়া ভর্র্তিচ্ছু বিদেশী শিক্ষার্থীদের রাবি কর্তৃপক্ষ কূটনৈতিকভাবে সাহায্য করে। ফলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের দিনে দিনে আগ্রহ বাড়ছে এই ক্যাম্পাসের প্রতি। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হতে পেরে নেপালী শিক্ষার্থীরাও গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত। কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বসন্ত রাজগীরির ভাষায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক বড় আর খুব সুন্দর। শিক্ষার মান অনেক উন্নত, পরিবেশটাও মনোরম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অসাধারণ একটি ক্যাম্পাস। এখানে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমরা সত্যিই গর্বিত। ম খুর্শিদ রাজীব
×