ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত বাফুফের সাবেক সহসভাপতি মনজুর হোসেন মালুর

দুরবস্থার জন্য দায়ী ফুটবল সংগঠকদের অবমূল্যায়ন

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

দুরবস্থার জন্য দায়ী ফুটবল সংগঠকদের অবমূল্যায়ন

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সহ-সভাপতি মনজুর হোসেন মালু। ১৯৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা (মুজিব বাহিনী) মালুর সবচেয়ে বড় পরিচয়Ñ তিনি একজন প্রখ্যাত ফুটবল সংগঠক। রাইট উইং পজিশনে ফুটবলও খেলেছেন ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, বিআরটিসি এবং খুলনা টাউন ক্লাবের হয়ে। ছিলেন জাতীয় দলের ম্যানেজার, ১৯৮০ সালে প্রথম পাইওনিয়ার ফুটবলের সাধারণ সম্পাদক, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগের (যুগ্ম) সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় লীগ চ্যাম্পিয়নশিপের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সময়ে বাফুফের একাধিক পদে। এএফসি থেকে পেয়েছেন সংগঠক হিসেবে সম্মানসূচক ‘গোল্ড এ্যাওয়ার্ড’ এবং বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির ‘অগ্রজ ক্রীড়া সংগঠক সম্মাননা’ পুরস্কার। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে মালু জানান, ‘ভুটানের কাছে হেরে আমরা এখন তিন বছরের নির্বাসনে। বাফুফের একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং একজন ফুটবল সংগঠক হিসেবে যে এতে কতটা দুঃখ পেয়েছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। নব্বইয়ের দশকে যখন বাফুফেতে ছিলাম, তখন আমাদের র‌্যাঙ্কিং ছিল ১১৪-১১৭’র মধ্যে। আর এখন সেটা ২০০ হওয়ার পথে!’ কেন এমন হলো? ‘মূল কারণ দুটি। ১৯৯১ সাল থেকে বাফুফেতে পলিটিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার ঢুকে যায়। সরকারী লোকজন বিভিন্ন পদ নিয়ে বাফুফেতে ঢুকে পড়ে। কিছু লোক ফুটবলের উন্নয়ন নয়, নিজেদের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে শুরু করে। এজন্য দায়ী সাদেক হোসেন খোকা। তিনি তার নিজস্ব লোকদের বাফুফেতে ঢোকান। প্রকৃত ফুটবল সংগঠকদের ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয় ও তাদের আড়ালে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। সংগঠক হতে গেলে ধাপে ধাপে নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হয়। সরাসরি হওয়া যায় না। কিন্তু এখন সবাই সরাসরি সংগঠক হচ্ছে। এখন তো ফজলুর রহমান বাবুলের মতো বিতর্কিত, তস্কর-অযোগ্য লোক বাফুফেতে বড় নেতা হয়ে গেছে। শুনেছি তার নাম নাকি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে, ভাবা যায় এসব! এর ফলেই আজ দেশের ফুটবলের এই দুরবস্থা!’ আরেকটা কারণও আছে বলে জানান মালু, ‘আমাদের সময়ে বাফুফেতে আর্থিক দৈন্যতা থাকলেও দেশজুড়ে সবধরনের ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। অথচ এখন প্রচুর টাকা থাকলেও বেশ কটি টুর্নামেন্ট (শেরে বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ, বিমান কাপ, জাতীয় লীগ, সুপার কাপ) বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো না হলে ফুটবলার তৈরি হবে কিভাবে? হয়নি বলেই তো আজ এই ভুটান-লজ্জা!’ আর্থিক প্রসঙ্গে মালু আরও যোগ করেন, ‘সালাউদ্দিনের আমলে গত নয় বছরে ফুটবলে যে পরিমাণ টাকা এসেছে, তা এর আগের ৩৪ বছরেও আসেনি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই টাকার সঠিক ব্যবহার হয়নি।’ ফুটবলারদের বর্তমান মান নিয়ে মালুর মূল্যায়ন, ‘এখন তো কেউ স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখে না। আমি মাঝে মধ্যে যাই বা টিভিতে দেখি। মনে হয় প্রিমিয়ার লীগের নয়, দ্বিতীয় বিভাগের কোন খেলা দেখছি!’ বাফুফের বর্তমান কমিটিকে ব্যর্থ হিসেবে উল্লেখ করে মালু বলেন, ‘সালাউদ্দিনসহ কমিটির সবারই উচিত পদত্যাগ করা। তার জায়গায় আমি হলে ঠিকই করতাম। ঠিকমতো জেলা ফুটবল হয় না। একাডেমিও চালাতে পারল না। স্কুল ফুটবলের শোচনীয় অবস্থা। আমাদের ফুটবল তো পিছিয়ে গেছে ২৫ বছরের জন্য। আমাকে দেখান তো, সালাউদ্দিন কোন জায়গায় সফল হয়েছে? সে তো সবকিছুতেই ব্যর্থ!’ তৃণমূল ফুটবলের ওপর জোর দিয়ে শীঘ্রই আগামী তিন বছরের জন্য রেডম্যাপ দেবেন সালাউদ্দিন। এ প্রসঙ্গে মালুর ভাষ্য, ‘স্টান্টবাজি দিয়ে সবকিছু চলে না। তিন বছরের রোডম্যাপ? এটাও তো স্টান্টবাজি! আমাদের সময় ঠিকমতো জেলা ফুটবল না হলে ডিএফএগুলোকে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করতাম। কিন্তু এখন তো বাফুফে ভোট নষ্ট হবার ভয়ে তাদের কিছুই বলে না, বরং তোয়াজ করে!’ ঘরেয়া ফুটবলে বিদেশী ফুটবলারের আধিক্যই কি দেশী ফুটবলারদের নৈপুণ্যের অধঃপতনের কারণ? ‘মোটেও না।’ আপত্তি করলেন মালু, ‘দেশে মানসম্পন্ন ফুটবলার নেই বলেই ক্লাবগুলো বিদেশী ফুটবলার আনতে বাধ্য হচ্ছে। এটাই সত্য।’ সালাউদ্দিনের ‘ভিশন ২০২২’ প্রসঙ্গে মালুর ব্যাঙ্গোক্তি, ‘এগুলো শুনলেই হাসি পায়। যেখানে আমরা সাফেই পারি না, ভুটানের কাছে হারি, সেখানে ২০২২ সালের বিশ^কাপে কিভাবে খেলতে পারি? কিসের ভিত্তিতে এসব আজগুবি কথা বলা হয় বুঝি না।’
×