ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৫০ উইকেটের মাইলফলক, ১৫তম বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে বেদিকে ছাড়িয়ে কাদিরকে ছুঁলেন এ বাঁহাতি স্পিনার

আরেকটি অর্জন সাকিবের

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

আরেকটি অর্জন সাকিবের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয়দিনের গোড়ার দিকে তাকালে ব্যর্থতার চিত্রই স্পষ্ট ব্যাটসম্যানদের। সে তালিকায় ছিলেন সাকিব আল হাসানও। আগেরদিন ৩১ রান নিয়ে খেলতে নেমে আর মাত্র দুই বল মোকাবেলা করে সে রানেই ফিরে গেছেন। মাত্র ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেই ব্যর্থতাকে কাটিয়ে তিনি ঠিকই আলো ঝলমলে হয়েছেন নতুন এক অর্জনে। দেশের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক পেরিয়েছেন তিনি। চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামার আগে ৪২ টেস্টে ১৪৭ উইকেট ছিল তার। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট শিকার করেন দেশের পক্ষে সর্বাধিক টেস্ট উইকেট শিকারি এ বাঁহাতি স্পিনার। তৃতীয়দিন বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যাওয়ার পর ইংলিশরা ব্যাটিংয়ে নামার পরই সাকিবের ঘূর্ণি তোপের মুখে পড়ে। জো রুটকে এলবিডব্লিউ করে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৭৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। এটি সাকিবের ক্যারিয়ারে ১৫তম বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের ঘটনা। ইনিংসে ১৫ উইকেট শিকারে তিনি ভারতের সাবেক বাঁহাতি বিষেন সিং বেদীকে (১৪ বার) পেছনে ফেলে ছুঁয়ে ফেলেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগস্পিনার আব্দুল কাদিরকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশের স্পিনটাকেই মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আর সেই আক্রমণের অন্যতম ভরসা এবং শক্ত স্পিন বিভাগের স্থপতি সাকিবের ওপরই ছিল বড় আস্থা। কিন্তু ইংলিশদের প্রথম ইনিংসে সাকিবকে ছাপিয়ে গেলেন অভিষেক হওয়া তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। এ বাঁহাতি অফস্পিনার ৬ উইকেটও শিকার করেন এবং সাকিবের চেয়ে অনেক বেশি সময় বোলিংও করেন। এরপরও সাকিব ইংলিশদের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুক ও বেন স্টোকসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দখল করেন। সে দুটিই ছিল সরাসরি বোল্ড! বোলারদের পর বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা দারুণ খেলেছেন দ্বিতীয়দিন পর্যন্ত। ব্যাটিংয়ে তখনও সাকিব। তাই তৃতীয়দিন লিড নেয়ার মতো একটি ইনিংস গড়বে বাংলাদেশ এমন প্রত্যাশাই ছিল। কিন্তু হতাশ করেন মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা সাকিব। আগেরদিন ৩১ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে আর একটুও এগোতে পারেননি। ফিরে গেছেন দিনের দ্বিতীয় বলেই। এমন শুরুর পর বাংলাদেশের ইনিংসটাও বেশিদূর যায়নি। তাই যেন ব্যর্থতার দায়টা নির্ভরযোগ্য সাকিবের কাঁধেই বর্তেছে। কিন্তু যখন তিনি ব্যাটে পারেন না দলকে সন্তুষ্ট করতে ঠিক তখনই বল হাতে নিয়ে জ্বলে ওঠেন। সে কারণেই বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার তিনি। এবারও সেই প্রমাণটা দিলেন সাকিব। বল হাতে নিয়েই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ওপর সাঁড়াশির মতো চেপে বসলেন তিনি। অবশ্য তরুণ অফস্পিনার মিরাজই শুরু করেছিলেন আবার কুককে প্রথমে ফিরিয়ে দিয়ে। এরপর সাকিব ইনিংসের দশম ওভারে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন রুটকে। হয়ে যান বিশ্বের ৯৯তম ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০ টেস্ট উইকেটের মালিক। নিজের পরবর্তী ওভারে এসে আবার আঘাত হানেন সাকিব, এবার শিকার করলেন বেন ডাকেটকে। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই সাকিবের বিধ্বংসী বোলিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ইংলিশরা। মধ্যাহ্ন বিরতির পরই তিনি আবার হামলে পড়ে শিকার করেন মঈন আলীকে। ৬২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে খাদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। এর মধ্যে সাকিবের শিকার ছিল ৩টি। তবে এরপর বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টো ১২৭ রানের জুটি গড়ে দলকে দারুণ ভিত দেন। ক্রমেই বিশাল লিড নেয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু বেয়ারস্টোকে বোল্ড করে দেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। এরপর সাকিবের ম্যাজিক শুরু হয়ে যায় আবার। দারুণ সেট হয়ে যাওয়া স্টোকসকে এলবিডব্লিউ করার পর আদিল রশিদকেও একইভাবে শিকার করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন এ বাঁহাতি। সবমিলিয়ে ১৫৪ উইকেট হয়েছে সাকিবের। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে ৫ উইকেটের বেশি উইকেট শিকারের ঘটনা এটি সাকিবের জন্য ১৫তম বার। বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় স্থানে আছেন সাবেক বাঁহাতি মোহাম্মদ রফিক ৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে। টেস্ট ইতিহাসে ৩৮তম বোলার হিসেবে ১৫বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি। আর স্পিনারদের তালিকায় মাত্র ১৬তম বোলার সাকিব। তবে ১৫বার ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে সাকিব আরেকটি কীর্তি গড়েছেন। সাকিব ছাড়িয়ে গেছেন ৬৭ টেস্ট খেলা সাবেক ভারতীয় বাঁহাতি স্পিনার বিষেন সিং বেদীকে। তিনি ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ১৪বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে। আর ছুঁয়ে ফেলেছেন কিংবদন্তি পাক লেগস্পিনার কাদিরকে। ৬৭ টেস্ট খেলা কাদির ১৫বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন। সাবেক পাক স্পিনার দানিশ কানেরিয়াও আছেন সাকিবের পাশাপাশি। তবে সাকিবের পেছনে পড়ে গেছেন সাকলাইন মুস্তাক (১৩ বার), স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল (১২), মুশতাক আহমেদ (১০), জিম লেকারদের (৯) মতো বিশ্বখ্যাত স্পিনাররা। এদের সবাই ক্যারিয়ার শেষ করেছেন সাকিবের চেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে সাকিব অচিরেই পেছনে ফেলবেন ভগবত চন্দ্রশেখর (১৬), রিচি বেনো (১৬), গ্রায়েম সোয়ান (১৭) ও ল্যান্স গিবসদের (১৮) মতো ভুবনখ্যান স্পিনারদেরও। টেস্ট ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেট শিকারি শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরলিধরন সর্বাধিক ৬৭বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে সবার ওপরে। তবে ২৯ বছর বয়সী সাকিবের এখনও লম্বা সময় পড়ে আছে নিজের রেকর্ডগুলোকে আরও সমৃদ্ধশালী করার।
×