ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসম্ভবকে সম্ভব করলেন স্টোকস

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

অসম্ভবকে সম্ভব করলেন স্টোকস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার বাংলাদেশ সফরে এসে নানাবিধ জটিলতার মধ্যে পড়েছেন। ওয়ানডে সিরিজেই আচরণের জন্য হয়েছেন সমালোচিত। ওয়ানডে সিরিজ থেকে শুরু করে সেটা অব্যাহত ছিল টেস্ট সিরিজের আগে প্রস্তুতি ম্যাচেও। তবে ইংল্যান্ড দলে অপরিহার্য বেন স্টোকস। কারণ ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার তিনি। সেটার প্রমাণ ওয়ানডে সিরিজে দিয়েছেন। সাগরিকায়ও চলমান টেস্টেও দিলেন। প্রথমদিন থেকেই স্পিন বড় ভূমিকায় অবতীর্ণ ছিল। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের সবগুলো উইকেট বাংলাদেশী স্পিনাররাই নিয়েছেন। আর বাংলাদেশের পড়ে যাওয়া প্রথম ৫ উইকেটের চারটিই নিয়েছিলেন ইংলিশ স্পিনাররা। সেখানেই বল হাতে ম্যাজিক দেখিয়ে ৪ উইকেট দখল করে বিস্ময় জাগালেন এ মিডিয়াম পেসার। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সেই বাংলাদেশী স্পিনই হয়ে উঠলো ভয়াবহ। ৬২ রানেই টপঅর্ডার ৫ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন চরম বিপর্যস্ত ইংল্যান্ড তখনই দেবদূত হয়ে এলেন ব্যাটসম্যান স্টোকস। ৮৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে বিপদ থেকে রক্ষা করলেন দলকে। স্পিন উইকেটে পেস বোলিং করে ৪ উইকেট দখলের পর সেই ভয়াল স্পিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ইনিংস। ব্যাটে-বলে স্পিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী এ তরুণ অলরাউন্ডার। এত বিতর্কের মাঝেও ক্রিকেটার হিসেবে যে পরিচয় সেই জাতটাই চেনালেন তিনি। ওয়ানডে সিরিজে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ, কটূক্তি ও বিতর্ক করে কঠোর সমালোচিত হয়েছিলেন স্টোকস। সেই সমালোচনা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ব্রিটিশ গণমাধ্যমেও হয়েছে। তবে পারফর্মার হিসেবে সেটার ছাপ পড়েনি স্টোকসের মধ্যে। ব্যাটে-বলে চৌকস নৈপুণ্য দেখিয়ে তিনি হয়েছেন ওয়ানডে সিরিজের সেরা ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটেও তিনি দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সদস্য বর্তমানে। কারণ ডানহাতি পেস বোলিংটা যেমন করতে পারেন, তেমনি ব্যাট হাতেও দুর্বার ২৫ বছর বয়সী এ নিউজিল্যান্ড বংশোদ্ভূত অলরাউন্ডার। এ বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি কেপটাউনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৫৮ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে সেই সামর্থ্য ও মেধার প্রমাণ দেন। এরপর থেকে ৬ নম্বর পজিশনটা তার জন্য স্থির হয়ে গেছে। আচরণে যতই মেজাজি, রাগী কিংবা রূঢ় হোন না কেন, ব্যাটে-বলে সেটার কোন প্রভাবই পড়েনি। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার অশোভন ব্যবহারটা এবার চলতি সফরেই নতুন নয়, পুরনো অনেক ঘটনাই আছে। সেসব ঢাকা পড়েছে তার পারফর্মেন্সের কারণে। চট্টগ্রাম টেস্টে স্পিনাররাই মূল নায়ক হিসেবে আবির্ভূত। প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ানক হিংস্র সর্পের ছোবল দিয়ে গেছে স্পিন প্রথমদিন থেকেই। সেই স্পিন বিষে নীল হয়ে গেছে ইংলিশরা প্রথম ইনিংসে। বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নামার পরও ইংলিশ স্পিনাররাই ভিলেন হিসেবে নাম ভূমিকায়। দ্বিতীয়দিনেই আদিল রশিদ, মঈন আলী ও গ্যারেথ ব্যাটি ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এমন উইকেটে পেস বোলার হয়েও কিছু করা যায় সেটার প্রথম প্রমাণটা দ্বিতীয়দিনের শেষ ভাগে দিয়েছেন স্টোকস। বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ও সবচেয়ে ক্ল্যাসিক্যাল হিসেবে স্বীকৃত অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের উইকেট নিয়েছেন। আগেরদিন মুশফিকের মতো ব্যাটসম্যানকে স্পিন উইকেটে শিকার করেছিলেন। রাতভর বিশ্রামে যেন সেটাকেই প্রেরণার মূল শক্তি হিসেবে নিয়েছিলেন স্টোকস! তিনি ইংল্যান্ড দলের মূল স্ট্রাইক বোলার নয়। কিন্তু তৃতীয়দিন সকালে (শনিবার) তিনিই হয়ে উঠলেন সবচেয়ে দুর্বার। অথচ শুরুটা করেছিলেন মঈন আর রশিদই টানা দুই উইকেট নিয়ে। এ উইকেটে পেসারদের জন্য কিছুই নেই। অথচ স্টোকস এরপর টানা তিনটা উইকেট তুলে নিলেন। তার গতিঝড়ে দ্রুতই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে চলতি টেস্টে ইংল্যান্ডের সেরা বোলিং নৈপুণ্য তার দখলে চলে গেল স্পিনবান্ধব উইকেটে। সেই স্পিনটাই ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে পৈশাচিক রূপ নিয়ে হানা দিল। মাত্র ৬২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত ইংল্যান্ড। তখন বেয়ারস্টোকে নিয়ে ১২৭ রানের জুটি গড়লেন। দলও বড় লিড পেয়ে গেল এ জুটির কল্যাণেই। ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি হাঁকিয়ে ১৫১ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রান করার পর থামলেন তিনি। আউট হয়েছেন সেই স্পিনেই, সাকিবের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন স্টোকস। চলতি টেস্টে স্পিনের বিরুদ্ধে যেখানে ব্যাটসম্যানরা নাকাল হয়ে সর্বস্বান্ত সেখানে এমন একটি ইনিংস খেললেন, এই স্পিন স্বর্গেই পেস বোলিংয়ে ঝড় তুললেন। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৮ করা মঈন এবং বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ করা তামিম ইকবাল বলছিলেন, ‘এ উইকেটে রান করা দারুণ কঠিন এবং দীর্ঘক্ষণ থেকেও সেট হওয়া অসম্ভব।’ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন স্টোকস ব্যাটে-বলে ইংল্যান্ডের পক্ষে সেরা নৈপুণ্য দেখিয়েছে। একাই লড়ে বিজয়ী তিনিই।
×