ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে ভাসমান প্রতিষ্ঠানের নাম বিপিএড কলেজ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

যশোরে ভাসমান প্রতিষ্ঠানের নাম বিপিএড কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মাত্র দুইটি শ্রেণী কক্ষ আর একটি অফিস রুম ভাড়া নিয়ে চলছে যশোরের ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) কলেজ। নেই নিজস্ব শিক্ষক, শরীরচর্চা প্রশিক্ষণের জন্য মাঠ। ভাড়ায় আনা শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে ক্লাস। এমনকি, কলেজের অধ্যক্ষেরও শরীরচর্চার উপরে নেই কোন প্রশিক্ষণ। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ব্যবহার করে সনদ বাণিজ্য চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর এখানে ৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এক বছরের এই প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয় ৩৮ হাজার আট শ’ টাকা। কলেজটির নিজস্ব কোন জমি ও বিল্ডিং নেই। কয়েক শিক্ষক নিয়োগ দেখানো হলেও তাদের শিক্ষার্থীরা কোনদিন দেখেনি। অতিথি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে ২০০৩ সালে কলেজটির যাত্রা শুরু। শুরু থেকেই যশোর উপশহর ডিগ্রী কলেজের পেছনে ‘সি’ ব্লকে এক নম্বর সেক্টরে আবু বক্কর সিদ্দিকীর বাসায় তিনটি রুম ভাড়া করে কলেজটি পরিচালিত হয়ে আসছে। সেই থেকে এখানে লিখিত ক্লাস করানো হচ্ছে। নিজস্ব মাঠ না থাকায় প্রতি শুক্রবার ব্যবহারিক ক্লাস (খেলাধুলা চর্চা) নেয়া হয় উপশহর কেন্দ্রীয় উদ্যানে। কলেজের অফিস সহকারী আব্দুল হালিম বাবু জানান, ক্লাস নেয়ার মতো কলেজে নিজস্ব তেমন কোন শিক্ষক নেই। যারা আছেন তারা কেউ ক্লাস নেন না। কলেজ শুরুর প্রথম দিকে ১২ শিক্ষক ছিল, যাদেও বিভিন্ন কলেজ থেকে টাকার বিনিময়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবে আনা হতো। বর্তমানে তাদের কয়েকজন রয়েছেন। বাকিরা ক্লাস নেন না। তার মধ্যে উপশহর কলেজের নিবাস হালদার, সরকারী বিএড কলেজের হাসান, মাগুরার সীমাখালীর এক মাদ্রাসার হাবিবুর রহমান হাবিব ও বাহাদুরপুর স্কুলের সালাউদ্দিন দিলু ক্লাস নেন। আর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এহসান কাদির তাপস। তবে তিনি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করায় তার ছেলে তাওসান হাবিব তিতাস কলেজের সবকিছু দেখভাল করেন। তাওসান হাবিব তিতাস বলেন, আমার আব্বুই কলেজের সবকিছু দেখাশুনা করেন। তিনি না থাকায় কলেজ পরিচালনার স্বার্থে আমি কিছু কিছু বিষয় দেখভাল করি। নিউটাউন বালিকা বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক গুলশান আরা অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ বিষয়ে গুলশান আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার স্বামী তৌহিদুর রহমান রিসিভ করেন। তিনি বলেন, আমি, আমার স্ত্রী ও ঝিকরগাছার শিমুলিয়া কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক বদরুল আলমসহ অনেকেই এখানে শিক্ষকতা করতাম। আমরা সবাই যেহেতু একটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, তাই এখানে আমাদের কারও নিয়োগ ছিল না। তবে বর্তমানে আমরা কেউ আর এখানে জড়িত নেই। এক সময় আমার স্ত্রীকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। উপশহর ডিগ্রী কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক নিবাস হালদার বলেন, ফিজিক্যাল কলেজে আমার কোন নিয়োগ নেই। আমাকে ক্লাস প্রতি ৫০০ টাকা দেয়া হয়। তাই আমি শুক্রবারে ক্লাস নিই। ঝিকরগাছা শিমুলিয়া কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক বদরুল আলম বলেন, ‘বিপিএড কলেজ ভাসমান কলেজ। নির্দিষ্ট কোন শিক্ষক নেই। এই কলেজের অধ্যক্ষ আসলে কে, তা শিক্ষার্থীরাও বলতে পারবে না। আমি এক সময় ক্লাস নিতাম, এখন আর নিই না।’
×