ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তফা জব্বার

৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যে

॥ এক ॥ এটি এখন বাংলাদেশ সরকার ও দেশের বেসরকারী তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রধান লক্ষ্য ও অঙ্গীকার যে, ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময়কালে যা এই দেশটির স্বাধীনতারও ৫০ বছর পূর্ণ হবে তখন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। সরকারী-বেসরকারী যৌথ অঙ্গীকারের আরও একটি লক্ষ্য হচ্ছেÑ ২০১৮ সালে এই খাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। নানাভাবে এই প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। দেশের মিডিয়া থেকে নীতি নির্ধারকদের মাঝে প্রসঙ্গটি কেবল কৌতূহল উদ্দীপক নয়, বরং চ্যালেঞ্জিং মনে হয়। বিশেষত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংক যখন আমাদের গত বছরের রফতানি আয় মাত্র ১৫২ মিলিয়ন ডলার বলে গণ্য করে তখন আমাদের জন্য ১ বিলিয়নই হোক বা ৫ বিলিয়নই হোক সেটি অর্জন করা যে প্রায় অসম্ভব তেমনটিই ধারণা করা হয়। কিন্তু ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলককে যে তারা উভয়েই আমাদের শিল্প খাতের মতোই বিশ্বাস করেন, এমন একটি স্বপ্ন আমাদের বেসরকারী খাত অর্জন করতে সক্ষম। কেন বা কেমন করে আমরা এই সফলতা অর্জন করতে পারব সেগুলো আমরা একটু তলিয়ে দেখতে পারি। প্রথমেই নজর দেয়া যাক দুনিয়ার আউটসোর্সিং বাজারটি কত বড় তার দিকে। সংযুক্ত চিত্রটি থেকে এই ধারণা হবে যে, বিশ্বের আইটি আউটসোর্সিং বাজার বিশাল। ২০১৫ সালে বিশ্বজুড়ে আউটসোর্সিং বাজারের মূল্য ছিল ৮৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৭ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষণীয় যে বিগত সময়ে এই বাজারের প্রবৃদ্ধি তেমন নয়। ২০১০ সাল থেকে যে চিত্রটি আমাদের সামনে আসে তা খুবই প্রণিধানযোগ্য। বিশ্ববাজারে আউটসোর্সিং আয় হিসাবটি আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার অথোরিটি এক্সিলারেন্স থেকে পাওয়া। ওয়েবসাইট লিংক : যঃঃঢ়://িি.িধপপবষবৎধহপব.পড়স/ৎবংবধৎপয/মষড়নধষ-রঃ-সধৎশবঃ-ংরুব-ভধপঃং-ধহফ-ভরমঁৎবং বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং বাজারের বিকাশের জন্য ভিত্তিগত পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে। দেশের আউটসোর্সিং শিল্প ক্রমেই আরও পরিপক্ব হয়ে উঠছে, একই সঙ্গে অনেকে দেশের বাইরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন। ভৌগোলিকগত দিক থেকে ৯০ শতাংশের বেশি আইটি খাতে ব্যয় হয় উত্তর আমেরিকা (৩৯৩৩), পশ্চিম ইউরোপ (৩১৭৪) এবং এশিয়া প্যাসিফিক (১৯১৪) অঞ্চলে। বর্তমানে বাংলাদেশের আউটসোর্সিং সেবার একটি বড় অংশ যায় ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং পূর্ব এশিয়া। এদেশের উদীয়মান রফতানিকারকরা তাদের যোগ্যতার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। বাংলাদেশ সুলভ মানবসম্পদসহ আরও অনেকদিক দিয়েই ভারত এবং ফিলিপিন্স থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশকে আউটসোর্সিংয়ে শীর্ষ উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ধরা হয়। গার্টনার বাংলাদেশকে আউটসোর্সিংয়ে শীর্ষ ৩০টি দেশের মধ্যে স্থান দিয়েছে। এটি কারনির সার্ভিস ইন্ডেক্সেও বাংলাদেশের অবস্থান আরও ৪ ধাপ এগিয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি নিম্নরূপ- আমরা যদি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যাদিকে বিশ্লেষণ করি তবে আমাদের দেশের রফতানির চিত্রটিও বিচিত্র। আমাদের প্রবৃদ্ধির হিসাবটিও সরল রেখায় ওঠানামা করছে না। কখনও সেটি ৫৬.২৮ ভাগ বেড়েছে। আবার কখনও সেটি মাত্র ৪.৭১ ভাগ বেড়েছে। বিশ্বে আউটসোর্সিং বাজারের আকার নিয়ে গবেষণায় জানা গেছে যে গত ৩ বছরে দেশগুলোর আইটিতে ব্যয়ে প্রবৃদ্ধি অস্থিতিশীল। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এটা নিঃসন্দেহে ভাল খবর। এ থেকে বোঝা যায় আমাদের দেশীয় আউটসোর্সিং সেবার চাহিদা বহির্বিশ্বে বেশ ভালভাবেই আছে। বিশ্ববাজারে চিত্র : বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চিত্রটাকে আমরা এভাবে সাজাতে পারি। ইপিবির হিসাবের (১৫১.৮ মিলিয়ন ডলার) পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সূত্র মতে, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) তে গত বছরে প্রায় ১৩০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সার আয়ের সঠিক হিসাব না থাকলেও তাদের আয় কমবেশি ১০০ মিলিয়ন ডলার বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল গেইমিং, মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন থেকে শুরু করে আমাদের আইটি সেক্টর, ফ্রিল্যান্সিং- সব মিলিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে প্রযুক্তি সেবায় বিপুল পরিমাণ আয় হলেও তা ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আসছে না। আমরা রফতানি আয়ের বিচিত্র একটি ধারণা পাই যদি বেসিস সদস্যদের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করি। বর্তমানে বেসিস সদস্যভুক্ত আইটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৫৬। এদের মধ্য থেকে ৩৮২টি সদস্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তারা গত বছর ৫৯৪.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রফতানি করেছে। বেসিস সদস্যভুক্ত নয় দেশে এমন আইটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্তত আরও ১০০০। এই হিসাব থেকে সমগ্র খাত সম্পর্কে একটি আন্দাজ করা যায়। ২০১৫ সালে দেশের আইটি রফতানির আনুমানিক চিত্র : তবে এটি সত্য যে, আইটিখাতের সকল প্রতিষ্ঠান রফতানি করে না। সেক্ষেত্রে যদি ধরা হয় তাদের মধ্যে মাত্র শতকরা ২৫ ভাগ রফতানি কাজে জড়িত, তবুও এর পরিমাণ প্রায় ৭৬১.৫? মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে। যা হোক, এসব আনুমানিক হিসাব কেবল বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপ দিয়েই নিশ্চিত করা যাবে। বেসিস বা সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের জরিপ করা অগ্রাধিকার পেতে পারে। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের কাছ থেকে জেনেছি যে, ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে সফটওয়্যার ও সেবাখাতের আয়কে রিপোর্ট করে না বলে তাদের হিসাবকেও তারা সঠিক বলতে পারেন না। আমি নিজে বাংলাদেশের একটি বড় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের খবর জানি যারা ১২.৫ মিলিয়ন ডলার বিদেশে আয় করে। কিন্তু তাদের একটি ডলারও তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি হিসেবে রিপোর্ট করা হয় না।
×