ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ কামরুল হাসান খান

শেখ হাসিনা ॥ বাঙালীর মুক্তির ভরসা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

শেখ হাসিনা ॥ বাঙালীর মুক্তির ভরসা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মে মাসে কয়েকটি অনন্যসাধারণ ঘটনা ঘটে, যা রানৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয়। এ লেখা শুরু করতে চাচ্ছি ঐ মাসের কয়েকটি ঘটনার ওপর আলোকপাত করে। ১৭ মে ১৯৮১ বুকের ভেতর কষ্টের পাথর বেঁধে তিনি পা রাখলেন তাঁরই প্রাণপ্রিয় পিতা-মাতা, ভাই, ভ্রাতৃবধূসহ নিকটাত্মীয়ের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে নিজের স্বামী-সন্তান-সংসারের সুখ পেছনে ফেলে কেবল পিতার অবশিষ্ট কাজটুকু সম্পন্ন করতে। সেই থেকে নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন বাঙালী জাতির চূড়ান্ত মুক্তির জন্য। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ তাঁকে ১৯ বার সরাসরি হত্যা করার চেষ্টা হয়েছে, বাঙালীর অধিকার আদায়ের শেষ বাতিটি নিভিয়ে ফেলার জন্য। অন্য কোন নেতার জীবনে এমন ঘটনা ঘটলে দেশত্যাগ করতেন বহু আগেই। কিন্তু তিনি দুনিয়ার সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ নেতা হওয়া সত্ত্বেও আঁকড়ে ধরে আছেন বাবার আদর্শ, স্বপ্ন, লালন করছেন বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। তিনি অসম সাহসী, গভীর আত্মপ্রত্যয়ী, স্পষ্টবাদী, আন্তরিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, অসাধারণ স্মরণশক্তির অধিকারী, দানশীল, ধর্মপরায়ণ, হাসি-খুশি, রসিকজন, প্রাণবন্ত, গভীর মমতাময়ী, সৎ দেশপ্রেমিক, শান্তিপ্রিয়, মানবতাবাদী, ধৈর্যশীল, সত্যিকার আপোসহীন এবং সর্বোপরি সাধারণ বাঙালী কন্যা, বধূ এবং মা। তিনি বাংলাদেশের সবচাইতে পরিপক্ব রাজনীতিবিদ, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক এবং চিন্তাবিদ। তার একক সিদ্ধান্তে বাঙালী জাতি বহুবার সঙ্কট থেকে রক্ষা পেয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা সাবেক এবং বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী, বাঙালী জাতির একমাত্র গ্রহণযোগ্য নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১/১১-এর পর আবারও প্রমাণিত হয়েছে এ দেশের মানুষের মনের কাছে তার কত গভীর শক্তিশালী অবস্থান। কোন ষড়যন্ত্রই তাঁকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করেত পারেনি। ৭ মে ২০০৭ বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ গ্রেট ব্রিটেনের বিমানবন্দরের নাম হিথরো এয়ারপোর্ট এবং অন্যতম পেশাদার এয়ারলাইন্সের নাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করল ২০০৭ সালের মে মাসে উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আসার জন্য প্রতিদিন বিমানবন্দরে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এটা একটা বড় ঘটনা। পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকেট থাকলেই যে কোন মানুষ বিমানে উঠতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সবচাইতে বড় দলের প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘৃণ্য প্রয়াস নিচ্ছিল গণতান্ত্রিক দেশের বিমান পরিবহন তৎকালীন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইন্ধনে। বিশ্ববাসী, বিশ্ব মিডিয়া এবং বাংলাদেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। দ্রুতবেগে বিশ্বজনমত তৈরি হলোÑ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে কুচক্রী মহল বাধ্য হলো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ৭ মে দেশে ফেরার অনুমতি দিতে। এ কারণে ৭ মে তারিখটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের চিন্তা, দূরদর্শিতা, সাহস এবং ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে না আসতেন তবে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুখ দেখত কিনা, দেশবাসীর আশঙ্কার যথেষ্ট যুক্তি ও তথ্য রয়েছে। ওই সময়ের পরিস্থিতি যদি আমরা স্মরণ করি তবে বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। ১/১১-এর কুশীলবরা নানাভাবে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে প্রলোভনে আকৃষ্ট করতে সার্থক এবং নতুন দল গঠনে সক্রিয়, সেনাবাহিনী প্রধান নানা পদ্ধতিতে দেশের মানুষের মন জয় করতে ব্যস্ত, আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ করতে তৎপর, বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দল দুর্নীতির দায়ে ভঙ্গুর এবং পর্যুদস্ত। একমাত্র আশার আলো জননেত্রী শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে কর্মী এবং মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, শেখ হাসিনার এখন দেশে ফেরার দরকার নেই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পর এমনিতেই আসতে পারবেন। বিষয়টা এমনভাবে বোঝানোর চেষ্টা চলছিল যে, ১/১১ চারদলীয় জোট এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়। এটি যে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল শেখ হাসিনার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়। পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে তখনকার পরিস্থিতি ১/১১-এর কুশীলবরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারলে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করার কোন পথ রাখত না এবং জননেত্রী শেখ হাসিনর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সহসাই হতো কিনা, সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। তাই আজকে অনায়াসে বলা যায় কেবল শেখ হাসিনার সেদিনের প্রত্যাবর্তনের মধ্যেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিহিত ছিল। তাই গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে আজ গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক বললে কোনভাবেই ভুল হবে না। তখন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ আঁধারে নিমজ্জিত ছিল। আমাদের অতি চেনা-জানা, সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ সহজেই আত্মসমর্পণ করছিল, প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর নিভে গিয়েছিল। কেবল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবী সচেতন মানুষ এর বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। গোটা দেশ এবং বিশ্ববাসী শুনেছিল কেবল একটি তেজি, আত্মপ্রত্যয়ী, দেশপ্রেমিক কণ্ঠস্বরÑ সেটি জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার। জনপ্রিয় কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তখন তার একটি কলামে লিখেছিলেনÑ ‘বাংলাদেশে একজনই সুপুরুষ আছেন, তিনি হচ্ছেন শেখ হাসিনা।’ তাই ৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবসটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি বিশেষ দিন। জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি ফিরে না আসতে পারতেন তবে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের জন্য আর কতদিন লড়াই করতে হতো, কত মানুষের আবারও জীবন দিতে হতো, তা ভাবাই যায় না। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে নেত্রীর সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর সাক্ষাত করতে গেলাম তাঁর ধানম-ি ৫ নং সড়কের বাসায় অনেক দ্বিধা নিয়ে। দ্বিধা এ কারণেÑ যে মানুষটির ২১ তারিখে শত্রুদের মারণাস্ত্রের কঠিন ফাঁদে মরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর মানসিক অবস্থা কী? কিন্তু আশ্চর্য হলাম স্বাভাবিক আচরণ দেখে। নিজের জীবন তুচ্ছ করে কর্মী-সমর্থকদের সব কষ্ট-যন্ত্রণা ধারণ করে তাদের সেবা-যতœ, খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যস্ত। তাঁকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর ওপর দিয়ে কী ঝড় বয়ে গেছে! আমাদের কী কী করতে হবে, পেশাজীবীদের কিভাবে সংগঠিত করতে হবেÑ এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিলেন। অবাক বিস্ময়ে ফিরে এলাম। দেখে এলাম একজন নেতা, একজন অভিভাবক, হৃদয়ে শত রক্তক্ষরণ, দেহে শত বেদনা নিয়ে তাঁর সন্তানসম দেশবাসী এবং জননীরূপী বাংলাকে বুকের ভেতর আগলে রেখেছেন গভীর মমতায়। চারদলীয় জোট জামায়াত-বিএনপির দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে ২০০৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দেশের প্রগতিশীল পেশাজীবীদের সংগঠনের সমন্বয়ে আমরা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ গঠন করলাম। আমরা পরিষদ গঠন করেই সিদ্ধান্ত নিলাম জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমরা তখন সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলাম দেশের মানুষের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। আমরা তখন অনেক সভা-সমাবেশে এ কথাটি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি এবং ১/১১-এর পরও শেখ হাসিনার পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছি। আমরা পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে জননেত্রীর কাছে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিলাম। নেত্রী কিছুক্ষণ ভেবে আমাদের প্রস্তাবে রাজি হলেন। নেত্রীর ভাবনার কারণটা ছিল এর মধ্যে অনেকেই ছিলেন দুঃসময়ে নেত্রীর বিরুদ্ধে বা দেশের রাজনীতির বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছিলেন। আমরা ৩০ এপ্রিল ২০০৫ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে এক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলাম এবং সেদিন থেকেই দেশের রাজনীতি ভিন্নমাত্রা লাভ করে। জননেত্রী শেখ হাসিনার রয়েছে সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অসাধারণ ক্ষমতা। সেদিন এই মঞ্চে আসার সিদ্ধান্তটিই হয়ত সঠিক ছিল। এ নিয়ে পরে অনেক বিশ্লেষণ হতে পারে। আমাদের পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের অনেক অনুষ্ঠানে নেত্রী এসেছিলেন। প্রতিটি অনুষ্ঠান শেষে নেত্রী আমাদের নিয়ে বসতেন, চা খেতেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখিনি যতক্ষণ সিকিউরিটি তাঁকে তাগাদা না দিতেন। পেশাজীবীদের তিনি সব সময় আলাদা সম্মান দেন। একবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠান শেষে নেত্রী আমাদের নিয়ে বসলেন এবং অবলীলায় ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে কী কী পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বলতে লাগলেন। বিদ্যুত সমস্যার সমাধান কিভাবে করবেন সেটা কিছুটা বলেই তিনি থেমে গেলেন এবং বললেন আর বলা যাবে না, আমার পরিকল্পনা চুরি হয়ে যাবে। রসিক হিসেবে জননেত্রীর সুখ্যাতি রয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ দেশের সব সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ দিয়ে চিন্তা করেন এবং পরিকল্পনা করেনÑ এটি জননেত্রীর এক বিরল বৈশিষ্ট্য। শেখ হাসিনার অনেক কট্টর সমালোচক তাঁর কাছে গিয়ে মুগ্ধ, অনুপ্রাণিত হয়ে ফিরে আসেন এরকম বেশ দৃষ্টান্ত রয়েছে। অনেক জনসভাতেই নেত্রীকে বলতে শুনেছি ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না/তা হবে না’Ñ সাম্যবাদের এর চাইতে বড় দৃষ্টান্ত আর কী হতে পারে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশে আগমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সবুজ চত্বরে দুই রাষ্ট্রনায়কের প্রেস ব্রিফিংয়ে বিল ক্লিনটনের সামনে যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন ‘পঞ্চাশ বছরের গ্যাস মজুদ না রেখে আমি কোন গ্যাস রফতানি করতে পারব না।’ সেদিনও বাঙালী জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে অবলোকন করেছে সাহসী পিতার সাহসী সন্তানকে। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রীদের গ্যাস বিক্রি করার নানা টালবাহানা। ১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান যখন পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য উপর্যুপরি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আতঙ্ক এবং উত্তেজনা সৃষ্টি করছিল তখন তিনি নিজ উদ্যোগে ছুটে যান পাকিস্তান ও ভারতে। দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে উত্তেজনা নিরসনের প্রয়াস চালান। তিনি ১৯৯৯ সালে এ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান ফর পিস (অঅচচ) গঠন করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে হেগ আপীল ফর পিস নামে বিশ্বের পেশাজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে বিশাল আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে কফি আনানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনা বিশেষ মর্যাদাবান অতিথি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্যে কফি আনান ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে দাঁড়িয়ে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। এরকম অনেক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে নিজেকে শান্তির দূত এবং বাঙালী জাতিকে শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে জামায়াত-বিএনপি জোট হত্যা-সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ভূলুণ্ঠিত করেছে। ক্ষমতাপ্রাপ্ত মহাজোট সরকারের মাত্র ২ মাসের মাথায় পিলখানা হত্যাকা- সরকারকে অস্থিতিশীল করার এক গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সেই ভয়ঙ্কর, স্পর্শকাতর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এর বিরুদ্ধে নানা উস্কানি ছিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক অভিযান চালানোর। যদি এ ধরনের পদক্ষেপ চালানো হতো তবে গোটা বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হতো এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটি মহল ঘোলা পানিতে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তৎপর ছিল। পিলখানা হত্যাকা-ে বেশ কিছু তরুণ, মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তা নির্মমভাবে নিহত হন। স্বাভাবিকভাবেই অন্য সহকর্মী সেনা কর্মকর্তারা ছিলেন ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত। সেনা ছাউনিতে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছিল এবং কেউ কেউ এ পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস নিচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনা কর্মকর্তাদের সরাসরি সাক্ষাত হয়ে পড়েছিল জরুরী। তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীকে সেনা ছাউনির দরবার হলে যেতে হবে। উত্তেজিত পরিস্থিতিতে কোন দুর্ঘটনা অমূলক নয়Ñ এ ধারণা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সেনা ছাউনিতে যাওয়াটা নিরাপদ নয় বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু অসম সাহসী বঙ্গবন্ধুকন্যা সব বাধা-পরামর্শ উপেক্ষা করে মুখোমুখি হলেন তাঁর প্রিয় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ধৈর্য ধরে তিনি সব সেনা কর্মকর্তার ক্ষোভের কথা, কষ্টের কথা শুনেছেন। তিনি কখনও প্রশাসনিক দৃঢ়তা দিয়ে, কখনও মাতৃস্নেহ দিয়ে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে সেনা কর্মকর্তাদের মন জয় করে তাদের শ্রদ্ধা-ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ফিরে এলেন বিজয়ীর বেশে। গোটা দেশের মানুষ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেল। এরকম সাহসী পদক্ষেপ সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কেবল শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। তাঁর সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাহসী কার্যক্রম জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও চাপের মুখেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে চলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে জাতির সামনে তাঁর মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে দিনবদলের সনদ ও ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যে তিনি এবং তাঁর সরকার নিরন্তর একটি আধুনিক তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত সরকার পরিচালনার মাধ্যমে যে যোগ্যতা ও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তার জন্য দেশবাসী আশাবাদী ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব। একাত্তরের ইতিহাস বাঙালীর ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালী জাতি ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা। তিনি স্বপ্ন দেখেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। নিরন্তর লড়াই করে চলেছেন এই ব-দ্বীপে; একটি সুশিক্ষিত, বলবান এবং উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যারা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষায় গভীর প্রত্যয়ে দেশবাসী। বাংলাদেশের কোথাও তন্নতন্ন করে অনাহারে বা অর্ধাহারে আছে এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আনন্দ-উৎসবে, ঈদ, পূজা-পার্বণে সম্প্রীতিপূর্ণ জীবনযাপন করছে। শিশুরা নির্বিঘেœ স্কুলে যাচ্ছে, পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে, ফল পেয়ে আনন্দে ভাসছে। আবার জেগে উঠেছে বাংলাদেশের শাশ্বত প্রাণ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের মানুষকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেমন বাংলাদেশ তারা চায়? তারা কি তাদের আগামী প্রজন্মকে পেট্রোলবোমা, অগ্নিসন্ত্রাসের অনিশ্চিত বাংলাদেশে রেখে যাবে, না-কি সুন্দর, উন্নত, নিরাপদ বাংলাদেশে রেখে যেতে চায়? সুন্দর, উন্নত, নিরাপদ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তাই আগামী প্রজন্মের জন্য, একটি নিরাপদ আবাসভূমির জন্য দলমত নির্বিশেষে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। লেখক : ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×