ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে গৃহবধূ হত্যা, গ্যাস লাইনের লিকেজে চারজন দগ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

রাজধানীতে গৃহবধূ হত্যা, গ্যাস লাইনের লিকেজে চারজন দগ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরখানে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। পুরান ঢাকার পোস্তগোলার একটি বাসায় গ্যাস লাইনের লিকেজে আগুন লেগে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। এদিকে হযরত শাহজালালে বিপুল পরিমাণ বিদেশী মুদ্রাসহ এক যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। শনিবার পুলিশ ও মেডিক্যাল সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরখানে মুন্নি আক্তার (১৮) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর নিহতের স্বামী রুবেল হোসেন গা-ঢাকা দিয়েছে। শনিবার দুপুরে পুলিশ উত্তরখান থানাধীন কাঁপুরা বেপারিপাড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সিরাজুল হক বলেন, মৃতের পরিবার থেকে জানতে পারি বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন করণে রুবেল তার স্ত্রী মুন্নিকে মারধর করতেন। তিনি বলেন, গৃহবধূর গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে স্বামী রুবেল তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। মুন্নীর স্বামী রুবেল হোসেনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও ওসি জানান। নিহতের নানা আবদুল কাদের জানান, দেড়বছর আগে রুবেলের সঙ্গে মুন্নির বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি জানান, বিয়ের পর থেকেই রুবেল যৌতুকের জন্য মুন্নির ওপর নির্যাতন করত। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর রুবেল তাকে মারধর করলে শিশু কন্যা নিয়ে মুন্নি বাপেরবাড়ি গাজীপুরের বীরতৈল গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। পরে ২১ তারিখ রুবেল গিয়ে তার শ্বশুর আবদুল মোতালেবের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুন্নিকে আবার নিয়ে আসে। এরপর উত্তরখানের বাসায় এনেই তাকে আবারও নির্যাতন শুরু করে। শনিবার খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে মুন্নির লাশ উদ্ধার করে। আব্দুল কাদের জানান, বিয়ের আগে শুনেছি রুবেল এয়ারপোর্টে চাকরি করত। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাস পর জানি সে বেকার ও নেশাগ্রস্ত। নিহত মুন্নির বাবা আবদুল মোতালেব অভিযোগ করেন, জামাই রুবেল নেশার টাকার জন্য প্রায়ই মুন্নিকে মারধর করত। আর নেশার টাকা না দেয়ায় মেয়ে মুন্নিকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই। একই পরিবারের চারজন দগ্ধ ॥ পুরান ঢাকার পোস্তগোলার একটি বাসায় গ্যাস লাইনের লিকেজে আগুন লেগে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধরা হচ্ছেন, আবুল কালাম আজাদ (৪০), স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৩৮), ছেলে রনি (১০) ও আজাদের ভাতিজি শারমিন আক্তার (২৫)। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানান, কালাম ৬০ শতাংশ, জেসমিন ৩৯ শতাংশ, শিশু রনি ৪০ শতাংশ ও শারমিনের ৩৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক। দগ্ধ কালাম স্থানীয় একটি এ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করেন। স্ত্রী জেসমিন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। শিশুপুত্র রনি স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার গোপালগঞ্জ গ্রামে। আগুনে দগ্ধ জেসমিন আক্তার (৩৮) জানান, চলতি মাসের এক তারিখে জুরাইনের বউবাজার মদিনা মসজিদের পাশে মুজাফফরের একটি টিনশেড বাড়িতে ভাড়া নেন। তিনি জানান, শনিবার সকাল ৭টার দিকে স্বামী আবুল কালাম আজাদ সিগারেট ধরাতে গেলে হঠাৎ পুরো ঘরে আগুন জ্বলে উঠে। এতে আমার স্বামী ও শিশু সন্তান রনি দগ্ধ হয়। এছাড়াও কালাম ভাইয়ের মেয়ে শারমিন আক্তার দগ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সকাল ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। দগ্ধ জেসমিন আক্তার জানান, চলতি মাসে ওই বাড়িতে ওঠার পর দেখেন রান্না ঘরের গ্যাস লাইনে লিকেজ রয়েছে। বাড়ির মালিককে বিষয়টি জানানো হয়। পরে তিনি ঠিক করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। তাদের ধারণা, লিকেজ দিয়ে গ্যাস বের হয়ে ঘরের মধ্যে জমা হয়েছিল। যেটা তারা বুঝতে পারেনি। এদিকে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সকাল ৭টায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া অগ্নিদগ্ধ সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। শাহজালালে বিদেশী মুদ্রাসহ এক যাত্রী গ্রেফতার ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণে বিদেশী মুদ্রাসহ মোঃ শহিদুল আলম (৩০) নামে এক যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। আটককৃত যাত্রীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায়। শুল্ক গোয়েন্দার যুগ্ম-কমিশনার সাইফুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শুক্রবার রাতে শাহজালাল থেকে যাত্রী শহিদুল দুবাই যাবার সময় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ হ্যান্ড ট্রলিব্যাগ ভর্তি বিদেশী মুদ্রাসহ তাকে আটক করেছে। তিনি ইকে-৫৮৫ যোগে দুবাই যাচ্ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই যাত্রীকে অনুসরণ করে বোর্ডিং ব্রিজে তাকে আটক করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, গত ১০ মাসে শহিদুল ৪০ বার দুবাই যাওয়া-আসা করেছেন। চোরাচালানের স্বর্ণ কিনতেই এই মুদ্রা পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করেন ড. মঈনুল খান। তিনি জানান, উদ্ধারকৃত মুদ্রাগুলোর মধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২০৫ সৌদি রিয়াল এবং ৩১ হাজার ৫৭ দিরহাম রয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৩২ লাখ টাকা দাঁড়ায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত শহিদুল জানান, কালো রংয়ের হ্যান্ড ট্রলিব্যাগে বিদেশী মুদ্রা সৌদি রিয়াল রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন ড. মঈনুল খান।
×