ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সাকিবের স্পিনে লড়াইয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

সাকিবের স্পিনে লড়াইয়ে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টে টানা দুটি দিন কি সুন্দরভাবে কাটাল বাংলাদেশ। কোনভাবেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রই ইংল্যান্ডের হাতে ছিল না। অথচ তৃতীয়দিনে এসেই সব ‘ওলট-পালট’ হয়ে গেল। ইংল্যান্ড ২৭৩ রানে এগিয়ে গেল। ম্যাচের নিয়ন্ত্রইও পুরোপুরি নিয়ে নিল। আর তাতে করে বাংলাদেশকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে হার! এখনও ইংল্যান্ডের ২ উইকেট বাকি আছে। বাংলাদেশের পুরো একটি ইনিংস বাকি আছে। হাতে আছে দুটি দিনও। এখনই তাহলে বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশ কী জিততে পারে না কিংবা ড্র করতে পারে না? প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে যে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, ১৬ বছরে আড়াই শ’ রানের টার্গেট সামনে পড়লেই ধুঁকেছে বাংলাদেশ। জিততে পারেনি। বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে না আসলে হারই হয়েছে নিয়তি। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনটি ৫ উইকেটে ২২১ রানে শেষ করার পর মনে হয়েছিল, ভাল কিছুই ঘটতে যাচ্ছে। আশায় সবাই বুক বেঁধেছিল। সাকিব ৩১ রানে ব্যাট করছিলেন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান রুম্মনের মতো ব্যাটসম্যানরাও ছিলেন। তাই ভরসা ছিল। কিন্তু তৃতীয়দিনে সকালের সেশনের এক ঘণ্টার মধ্যেই যখন প্রথম ইনিংস ২৪৮ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ, তখনই যেন সব আশা হতাশায় পরিণত হলো। দিনের দ্বিতীয় বলেই সাকিব এগিয়ে গিয়ে খেলতে যান। মঈনের স্পিন ভেল্কিতে স্ট্যাম্পিং হয়ে যান। তাতে করে অন্য ব্যাটসম্যানদের মনোবলও দুর্বল হয়ে পড়ে। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন যখন এমনভাবে আউট হন, তখন বার্তা মিলে; ব্যাট করা খুব কঠিন! তাই হলো। বাকি থাকা ৫ উইকেটে মাত্র ২৭ রান যোগ করতে পারল মুশফিকবাহিনী। স্পিন স্বর্গে ৪ উইকেট তুলে নেন পেসার বেন স্টোকস! প্রথম ইনিংসে ২৯৩ রান করায় শুরুতেই ৪৫ রানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। এরপর ইংল্যান্ডও শুরুতে বিপাকে পড়ল। ৬২ রানেই কুক, রুট, ডাকেট, ব্যালান্স ও মঈনের মতো ব্যাটসম্যানদের হারাল। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে গিয়ে স্টোকস-বেয়ারস্টো মিলে যে ১২৭ রানের জুটি গড়লেন, সেখানেই স্কোরবোর্ড ভারি হয়ে গেল। বিপদের সময় দলের হাল ধরে স্টোকসতো ব্যাট হাতেও দারুণ ব্যাটিং করে দেখালেন। একাই ৮৫ রান করলেন। তার এ ইনিংসে তৃতীয়দিন শেষে ৮ উইকেটে ২২৮ রান করে ইংলিশরা। ২৭৩ রানে এগিয়েও যায়। সাকিব ৫ উইকেট তুলে নেন। আজ ওকস (১১*) ও ব্রড (১০*) চতুর্থদিনের শুরুটা করবেন। এখন দেখা যাক, বাংলাদেশের টার্গেট আরও কত বড় হয়! টার্গেট এখন আর যতটুকুই বাড়ুক কিংবা নাই বাড়ুক; ম্যাচ ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণেই চলে গেছে। এখন ম্যাচ বাঁচাতে হলে ‘মিরাকল’ কিছুই ঘটাতে হবে। সবকিছু ব্যাটসম্যানদেরই হাতে। তা কী সম্ভব? ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। সেটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই আবার ২০১২ সালে ২৪৫ রানের টার্গেটেই হেরেছে বাংলাদেশ। সেটি আবার বাংলাদেশের সামনে টার্গেট পড়া সবচেয়ে কম রান ছিল। জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেখানে ইংল্যান্ডতো আর ব্যাটিং না করলেও ২৭৪ রান টার্গেটে পড়বে! কিভাবে পারবে বাংলাদেশ? ইতিহাসই যে বাংলাদেশের পক্ষে নয়। আর এ ম্যাচে এত বেশি সময় আছে যে ফল হবেই। সেটি যে দলের পক্ষেই যাক। যদি আজকের দিনটির অর্ধেকটা খেলে দেয় ইংল্যান্ড, রান আরও যদি ১০০ হয়; তখন গিয়ে ড্র’র সম্ভাবনা জাগতেও পারে। তবে এজন্য ব্যাটসম্যানদেরই মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে। উইকেটের যে অবস্থা, তাতে সকালের সেশনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই সেশনে দুইদলেরই ভরাডুবি হয়েছে। তাই চতুর্থদিনের সকালটাতেও যে ইংল্যান্ডের ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেটি ধরেই নিতে হবে। যদি এমনটিই হয়, তাহলে তিন শ’ রানের কাছাকাছি টার্গেট পড়বে। সেই টার্গেটে হয় হার হবে, নয়তো জয় হবে। ড্র সম্ভব নয়। কারণ দুইদিনের বেশি সময় হাতে থাকবে। হারের সম্ভাবনাতেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ। তা ইতিহাসই বলছে। তবে ম্যাচটি বের করার সক্ষমতাও বাংলাদেশের আছে। তা যে নেই বলা যাবে না। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে ৪১৩ রান করার ইতিহাসও যে বাংলাদেশের আছে। ২০০৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫২১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৪১৩ রান করে বাংলাদেশ। সেটি চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের করা সবচেয়ে বড় স্কোর। তিন শ’ রানের বেশি স্কোরও দুইবার করেছে বাংলাদেশ। একবারতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১০ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই ৩৩১ রান করে বাংলাদেশ। যদিও ম্যাচটি ১৮১ রানের বড় ব্যবধানেই হারে। একই মাঠে একই বছর ভারতের বিপক্ষেও ১১৩ রানে হারা ম্যাচে ৩০১ স্কোর করে বাংলাদেশ। তবে ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ২৮৫ রান করে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। তার মানে, যদি ৩০০ রান বা তার কম করে বাংলাদেশ, সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে চার শ’ বা তিন শ’ রান করা ইনিংসগুলোতে একজন ব্যাটসম্যানের শতক ও আরেকজনের শতকের কাছাকাছি রান ছিলই। এবারও তাই করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। না হলে ম্যাচ বাঁচান কঠিন! প্রথম ইনিংসে যে অবস্থা দেখা গেছে, তাতে ব্যাটসম্যানরা এখন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলেই হয়। না হলে হার যে চোখ রাঙ্গাচ্ছে, সেটিই বাস্তবে রূপ নেবে।
×