ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতের চাপে বিএনপি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যায়নি

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

জামায়াতের চাপে বিএনপি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যায়নি

শরীফুল ইসলাম ॥ জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে ওই দলটির চাপে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে যায়নি বিএনপি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বিএনপির উদারপন্থী নেতাদের পরামর্শে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রথমে কাউন্সিলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নিলেও পরে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতের চাপ ও নিজের দলের কট্টরপন্থীদের পরামর্শে সে অবস্থান থেকে সরে আসেন। এদিকে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে যাওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত না যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গেলেও কী কারণে বিএনপির কোন নেতা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যায়নি তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ২০ দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতকে আমন্ত্রণ না জানানোর কারণে ওই দলের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্দ হয়। আর এ ক্ষোভ থেকেই জামায়াতের শীর্ষপর্যায় থেকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে না যেতে বিএনপি হাইকমান্ডের প্রতি চাপ দেয়া হয়। এছাড়া বিএনপির কট্টরপন্থী কিছু নেতা খালেদা জিয়াকে বোঝাতে সক্ষম হন, খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি যেভাবে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং রাজপথে কর্মসূচী পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে তারপরও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে গেলে নেতাকর্মীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির প্রতিনিধি দল গেলেও তাদের সামনেই দল সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এতে বিএনপি নেতাদের অপমানিত হয়ে ঘরে ফিরতে হবে। খালেদা জিয়া দলের কট্টরপন্থী নেতাদের এ পরামর্শ ও জামায়াতের চাপকে আমলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার মধ্যরাতেই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এর পর থেকেই উদারপন্থী কোন কোন নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাসের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কাউন্সিলে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র দুটি গ্রহণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতি করে এবং বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের আমন্ত্রণ পেয়েছি। কিভাবে অংশগ্রহণ করা যায় সে ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি যে প্রথমে ইতিবাচক অবস্থানে ছিল তা দলের একজন যুগ্ম-মহাসচিবের বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বিএনপি অংশ নেবে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমরা খুশি হয়েছি আমাদের দাওয়াত দিয়েছেন, আমরা আনন্দিত। আমাদের সম্মেলনে কিন্তু আপনারা আসেননি। সৌজন্যবোধ দেখিয়ে টেলিফোন করে দুঃখ প্রকাশও করেননি। কিন্তু আমরা আপনাদের মতো হীনম্মন্য নই। বিএনপিকে আপনারা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, আপনাদের সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বলেছেন। বিএনপি যে একটা উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল সে প্রমাণ আপনারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিন পাবেন ইনশা আল্লাহ। আমরা যাব। জানা যায়, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় খালেদা জিয়া ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের যোগদানের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন। তবে মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়াকে জানান, আওয়ামী লীগ না এলেও বিএনপি যদি তাদের কাউন্সিলে যায় তাহলে এটা রাজনৈতিকভাবে বিএনপির জন্য ইতবাচক হবে। এছাড়া দেশ-বিদেশে বিএনপির এ অবস্থান প্রশংসিত হবে। দলের আরও ক’জন উদারপন্থী নেতাও খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দেন যেন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রতিনিধি পাঠানো হয়। উদারপন্থী নেতাদের পরামর্শে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রথমে কাউন্সিলে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নেন। এ খবর শুনে দলের ক’জন কট্টরপন্থী নেতা খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রতিনিধি না পাঠানোর পরামর্শ দেন। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন। পরে জামায়াতের হাইকমান্ড থেকে খালেদা জিয়াকে চাপ দেয়া হয় যেন বিএনপির কোন নেতা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে না যায়। এ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামতও নেন খালেদা জিয়া। বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতের চাপ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে গেলে পরে ২০ দলীয় জোটের রাজনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন খালেদা জিয়া। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির কোন প্রতিনিধিকে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে পাঠাবেন না।
×