ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্সিলে আবেগময় ভাষণ সৈয়দ আশরাফের

আওয়ামী লীগে আমার সময়ে কোন ‘ইজম’ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগে আমার সময়ে কোন ‘ইজম’ হয়নি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন আন্দোলনে এ দলটির মতো আত্মত্যাগ পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দল করেনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগ যে কোন সময়ের থেকে এখন শক্তিশালী। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি পৃথিবীর কোন শক্তি নেই এই আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। আর আমি দুই দুইবার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। শেখ হাসিনা উপদেশে দলকে পরিচালনা করেছি। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন ভাঙ্গন ধরেনি, কোন কন্সপিরিসিজম তৈরি হয়নি। শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন। সাংগঠনিক রিপোর্টের লিখিত বক্তব্য সবাইকে পড়ে নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে আবেগময় ভাষায় সৈয়দ আশরাফ বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমরা জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমারও হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একটা কর্মী যদি ব্যথা পায় সেই ব্যথা আমিও পাই। তিনি বলেন, আমরা সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমি এবং আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করেছি। দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়। হাজারো শহীদের রক্ত, জাতির পিতার রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ। দলের নেত্রী শহীদের সন্তান, আমিও একজন শহীদের সন্তান। তাই আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা অনুভূতি। এই হাজারো বন্ধুর রক্ত, চার নেতার রক্ত, ভাষা আন্দোলনের রক্ত, সেই অনুভূতি। এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে যে দলটি, যার নাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরপরও কিন্তু আওয়ামী লীগকে কেউ নিঃশেষ করতে পারেনি এবং কোনদিনই পারবে না। শেখ হাসিনা যতদিন আছেন উনিই নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যদি না থাকেন, আওয়ামী লীগ কিন্তু মরবে না। আওয়ামী লীগ অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগের মতো দেশের জন্য এত আত্মত্যাগের ইতিহাস পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দলের সেই ইতিহাস নেই। বক্তব্যের শুরুতে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, এটা পড়তে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনাদের অনুরোধ করব যাওয়ার সময় এটা আপনারা নিয়ে যাবেন। লিখিত বক্তব্যে আশরাফ দলীয় শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণকে আস্থায় নিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য নিয়ে দলীয় সকল স্তরের কর্মকা- পরিচালিত করতে হবে। দলীয় ঐক্য ও সংহতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করে দলীয় কর্মকা- পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত কর্মকা-ে দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দলে অশুভ শক্তির চর, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, অসৎ ও বিতর্কিত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিরোধী দলের অপপ্রচারের জবাব দেয়া, জঙ্গী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা নিয়ে জনগণকে সচেতন করা, ১৪ দল ও মহাজোটের ঐক্যকে তৃণমূলে সম্প্রসারণ এবং আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য জনগণকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ। আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের শক্তির জায়গাটির দিকে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আজকে এমন একটি দিনে কাউন্সিল হচ্ছে যখন দেশ নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠীর মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে এই অশুভ শক্তি। চক্রান্ত চলছে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার। কাউন্সিল আয়োজনে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সে জন্য দুঃখও প্রকাশ করে আশরাফ বলেন, ‘আগামীতে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে সেজন্য এই কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি- এদেশে গণতন্ত্র থাকবে, নাকি অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে? এদেশে কি আবার উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমি হবে, নাকি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হবে? এদেশে কি আবার বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হবে, নাকি আইনের শাসন চলবে? এদেশ কি সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পরিণত হবে, নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাবে? সরকারের সাফল্য ও অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরার তাগিদ দিয়ে আশরাফুল ইসলাম বলেন, মনে রাখতে হবে প্রতিটি নেতাকর্মীই দলের একেকজন প্রচারক। প্রসঙ্গত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বক্তৃতা দিতে মঞ্চে দাঁড়ালে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিরা স্বাগত জানান।
×