ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে গরিব, প্রতিবন্ধী ও বয়োবৃদ্ধদের তালিকা করুন ;###;সন্ত্রাস দমনে আবারও জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা

দেশে দরিদ্র থাকবে না ॥ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনার ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

দেশে দরিদ্র থাকবে না ॥ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনার ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের জমকালো জাতীয় সম্মেলনে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে নিতে এবং দেশকে দারিদ্র্যশূন্য করতে আগামী দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিকি শতাব্দীর মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনার কথাও সারাদেশ থেকে হাজার হাজার আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট, বিদেশী অতিথি, রাজনীতিকসহ দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন তিনি। শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দিনব্যাপী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের প্রথম দিন উদ্বোধনী বক্তব্যে দলটির ৩৫ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী এ রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁর দল ও সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি, বাংলাদেশের মাটিকে কোন সন্ত্রাসবাদীদের ব্যবহার করতে না দেয়ার কঠোর অবস্থান ঘোষণার পাশাপাশি দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়া, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ ও শান্তিময় দেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও আকাক্সক্ষার কথাও জানান সম্মেলনে। বিশ্বের ১২টি দেশ থেকে আসা ৫৫ বিদেশী অতিথিও বাংলাদেশের তাক লাগানো উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথাও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। দেশ থেকে দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আজ দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ দেশে আর দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্য বলে আর কিছু বাংলাদেশে থাকবে না। সংসদ সদস্যসহ দেশের সকল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সঠিক তালিকা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্ব স্ব এলাকায় গিয়ে বের করুন কতজন দুস্থ, হৃতদরিদ্র, নিঃস্ব-রিক্ত ছিন্নমূল, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গৃহহারা মানুষ আছে। আমরা সবাইকে বিনা পয়সায় ঘর করে দেব, ঠিকানা করে দেব, তারা যেন ভালভাবে জীবনযাপন করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেব। আপনারা যদি সঠিক তালিকা করতে পারেন তবে দৃঢ়ভাবেই বলতে পারি দেশে আর কোন দরিদ্র থাকবে না। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিদেশী অতিথিদের সামনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। জিরো টলারেন্স এগেইনস্ট টেররিজম। আমরা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে কখনই প্রশ্রয় দেব না। এ দেশের ভূখ- কেউ কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-ে ব্যবহার করতে পারবে না। প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসবাদ চালাতে কাউকে আমাদের দেশের মাটিকে ব্যবহার করতে দেব না। জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঝে দুই ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে চলে কাউন্সিল অধিবেশন। আজ রবিবার সকাল ১০টায় একই স্থানে শুরু হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন। আর এ অধিবেশনেই আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিন বছরের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করবেন দলটির সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা। বর্ণিল সাজে সজ্জিত ও কানায় কানায় পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল দশটায় সুবিশাল কাঠের তৈরি নৌকাসদৃশ্য মঞ্চে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে উপস্থিত হন তখনই পাল্টে যায় সম্মেলনের দৃশ্যপট। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠেই বিশাল মঞ্চের দু’পাশে হেঁটে হেঁটে হাত নেড়ে কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টা থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্যান্ডেলে আসতে থাকেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। সকাল ৯টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরে ওঠে প্রায় ৩০ হাজার লোকের ধারণক্ষমতার সুবিশাল প্যান্ডেল। প্রধানমন্ত্রী আসার পরও অনেক কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত অতিথিকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্যান্ডেলে জায়গার সঙ্কুলান না থাকায় প্যান্ডেলের বাইরে মাইকের সামনে দাঁড়িয়েই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে দেখা যায়। এবারের সম্মেলনের মূল সেøাগাণ ছিল ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।’ কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনস্থলে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়েই সোজা গিয়ে দাঁড়ান মঞ্চের সামনে ডানদিকে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডের পাশে। কাছেই আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকার স্ট্যান্ড, সেটির পাশে দাঁড়িয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আগে থেকেই ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একেকটি স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে যান। ঠিক মঞ্চের সামনে ততক্ষণে স্থান করে নিয়েছেন লাল-সবুজে সজ্জিত নারী-পুরুষ শিল্পীরা। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...’ জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফসহ ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এর পরই প্রধানমন্ত্রীসহ জেলার নেতারা রঙ্গিন বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথি ও কাউন্সিলর-ডেলিগেটদের সামনে সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয় বিশেষ দ্যোতনা। এর পরই ‘আলোর পথে যাত্রা’ শীর্ষক গীতিনৃত্যানুষ্ঠান। এ অংশ পরিচালনা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর। শুরু হয় সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। প্রথমেই গান ‘এখন সময় বাংলাদেশের... এখন সময় আমাদের’। এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনা, যা শেষ হয় জয় বাংলা সেøাগানে। এর পর একে একে ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ আর মোরা একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠে...’ দেশাত্মবোধক গানের তালে তালে নৃত্যানুষ্ঠান। এরপর শুরু হয় সম্মেলনের মূল পর্ব। দলটির প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের উপস্থাপনায় প্রথমেই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দফতর সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। এর পর স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি সকলের সামনে আয়োজনের নানা দিক তুলে ধরেন। এর পর সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এর পর সম্মেলনে উপস্থিত ১২টি দেশ থেকে আসা ৫৫ বিদেশী অতিথিকে পরিচয় করিয়ে দেন দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি। পরিচয় পর্ব শেষে সম্মেলনের সফলতা কামনা করে ভারতের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক বিমান বসু, গোলাম নবী আজাদ, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, যুক্তরাজ্যের জেনি রেথবনসহ ১৭ জন বিদেশী অতিথি বক্তব্য রাখেন। বিদেশী অতিথিরাও তাঁদের বক্তব্যে ৬৭ বছর বয়সী প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম, ঐতিহ্য এবং মহান আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং বর্তমানে দেশের অভাবনীয় উন্নয়ন-অগ্রগতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। বিদেশী অতিথিদের বক্তব্যের পরই সভাপতির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সম্মেলন দুই ঘণ্টার জন্য মুলতবি ঘোষণা করা হয়। বিকেল সাড়ে তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে অনেক কাউন্সিলর বক্তব্য রাখেন। সাড়ে ৫টার দিকে সম্মেলন আজ রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আগত প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে মধ্যহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়। সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মঞ্চে পরিবেশন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে ॥ সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনাসহ আগামী দিনের উন্নয়ন পরিকল্পনার রোডম্যাপ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষে কোন বৈষম্য থাকবে না। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেব। শতভাগ মানুষ বিদ্যুত পাবে, সবার ঘরে আলো জ্বলবে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে উন্নীত, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। প্রতিটি সেক্টরে যেন উন্নয়ন হয় সেজন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। মাইক্রো ক্রেডিটের পরিবর্তে মাইক্রো সেভিং করে দারিদ্র্য দূর করতে সফল হচ্ছি। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও জানান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে মার্শাল ল’ দিয়ে ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে দেশে আসার অনুমতি দেয়নি। প্রায় সাতটি বছর আমাদের দু’বোনকে রিফিউজি হিসেবে কাটাতে হয়েছে। সে সময় ক্ষমতাসীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাঁর দেশে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ’৮১ সালে আমার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। এর পর তারা শত চেষ্টা করেও আমাকে দেশে ফেরানো ঠেকাতে পারেনি। আমি গণমানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে ফিরে আসি। আওয়ামী লীগই আমাকে সভাপতি করে দেশে আসার সুযোগ করে দিয়েছিল। এজন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শোকাবহ ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমরা দু’বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু সব হারানোর ব্যথা-বেদনা যে কী কষ্টের, তা আমরা সব সময় অনুভব করি। কিন্তু দেশে ফেরার পর দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর মধ্যেই আমি ফিরে পেয়েছিলাম আমার বাবা, মা ও ভাইদের। তাদের ভালবাসা ও স্নেহই আমাকে সাহস যুগিয়েছে, দেশের জন্য কাজ করার উৎসাহ পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আত্মত্যাগ, শত আঘাত ও শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এ সংগঠনকে ধরে রেখেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছে। তারাই এ দলের প্রাণ। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ভাষার মর্যাদা, সামরিকতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ, উন্নয়ন-সমৃদ্ধি দেশের মানুষ যা কিছু পেয়েছে তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশে সকল অর্জন এনে দিয়েছে। আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিই হচ্ছে জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণে। আর এ কাজটা করতে পারলে বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশ চালাচ্ছি। ২০০৮ সালে দেশের মানুষ আমাদের ভোট দেয়, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করেছি, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশে শুরু হয় হত্যা-ক্যু’র রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছিলেন তা ধূলিস্যাত করে দেয়া হয়। অবৈধ দখলকারীরা গণতন্ত্রের বদলে সামরিকতন্ত্র উপহার দেয়। দেশের মানুষ দীর্ঘ ২১টি বছর হয়েছে শোষিত-বঞ্চিত। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা ফের দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে আনি। আজ দারিদ্র্যমুক্তির পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ। যে শিক্ষা পিতার (বঙ্গবন্ধু) কাছ থেকে পেয়েছি, সে শিক্ষা দিয়েই দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ২০৪১ সালে এমন বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই যে দেশে দারিদ্র্যতা থাকবে না, প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগ হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে, নারী-পুরুষের কোন বৈষম্য থাকবে না, দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোটায় আসবে, উন্নত-সমৃদ্ধ ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ হবে। এমন বাংলাদেশই আমরা গড়ে তুলব। তিনি আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের নিরলসভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান। বিএনপি না এলেও অন্য সবাই এসেছেন ॥ আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেলেও আসেনি বিএনপির কোন প্রতিনিধি। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাই যোগ দিয়েছেন এ সম্মেলনে। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিএনপি না এলেও দলটির ঘনিষ্ঠ দল বিকল্পধারার সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মহাসচিব মেজর (অব) এমএ মান্নান সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেনÑ বিএনপিরই এক সময়কার স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, জাসদের (রব) আ স ম আবদুর রব, ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা সিপিবির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনজুরুল আহসান খান, সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৪ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের একাংশের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাসদের আরেক অংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ ওয়াজেদুল ইসলাম খান, ডাঃ অসিত বরণ রায়সহ অন্যান্য দলের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের সময় উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সফল করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিদেশী অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সময়স্বল্পতার কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যের সুযোগ দিতে না পারার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, রবিবার (আজ) আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় অধিবেশনে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য শুনব।
×