ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনিড ব্লাইটন ভাষান্তর-সালেহা চৌধুরী

সোনার ময়ূর

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ২৯ অক্টোবর ২০১৬

সোনার ময়ূর

অনেক অনেকদিন আগে এই ধর হাজার বছর আগে, যখন পৃথিবী নবীন ও নতুন, একজন মুচি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি ঝকঝকে জিনিস দেখতে পায়। জিনিসটি কুড়িয়ে নিয়ে বুঝতে পারে -ওরে বাবা এযে একটি সোনার ময়ূর। জিনিসটি বড় কিছু নয় কিন্তু এমন অপূর্বভাবে একে মণিমুক্তা দিয়ে বানানো হয়েছে দেখে আর চোখ ফেরানো যায় না। অপূর্ব একটি ময়ূর। মুচি বেশ সজ্জন মানুষ। সেভাবে এমন জিনিস রাজার কাছে ফিরিয়ে দেয়া ভাল। রাজা জিনিসটি হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে বলেন- এযে একটি মহামূল্যবান জিনিস। এ অমূল্য। এর দাম কত বলা মুশকিল। দেখ কীভাবে মণিমুক্তাগুলো দিয়ে ময়ূরটি সাজানো হয়েছে। কতদিন, কত মাস, কত বছর লেগেছে এমন একটি অমূল্য জিনিস বানাতে। আমি এটা কিনতে চাই। যে এটা বানিয়েছে সে যা বলবে তাই আমি দেব। এমন জায়গায় এই ময়ূরকে রাখব যেন সকলে দেখতে পায়। আমি আমার রাজ্যে সকলকে বলছি যিনি এর নির্মাতা আমার কাছ থেকে এসে পুরস্কার নিয়ে যাক। রাজা পরদিন দেখেন দুজন মানুষ এসে বলছে তারা এই ময়ূর বানিয়েছে। রাজা বলেন- তোমরা দুজন বানিয়েছো? এ হতে পারে না। একজন বানিয়েছো। আর একজন মিথ্যা কথা বলছে। দুজন-দুজনার দিকে আগুনের চোখে তাকায়। একজন মুলা। আর একজন গ্রন। ওরা দুজনই সোনারূপার জিনিস বানায়। দুজনই শপথ নিয়ে বলে তারা এই ময়ূর বানিয়েছে। রাজা বলেন-আমি তোমাদের দুজনের বন্ধুবান্ধবকে, প্রতিবেশীকে জিজ্ঞাসা করব তোমাদের মধ্যে কে এই ময়ূরের কারিগর। মুলা বলে- মহামান্য রাজা সাহেব আমি যে এটা বানিয়েছি কেউ সে কথা জানে না। আমি চুপি চুপি বানিয়েছি। কাউকে বলিনি। ভেবেছিলাম শরতে যে মেলা হবে সেখানে গিয়ে এটা বিক্রি করব। একেবারে সারপ্রাইজ দেব। রাজা বলেন- তুমিও কী তাই বলবে এটা সিক্রেট, গোপন ব্যাপর গ্রন? গ্রনের হাত কাঁপছে। গলা কাঁপছে। বলে সে কাঁপা কাঁপা গলায়- এটা আমি চুপি চুপি বানিয়েছি। এটা আমার সিক্রেট। তবে হুজুর এটা আমি বানিয়েছিলাম আমার একমাত্র মেয়ের জন্মদিনে ওকে উপহার দেব, তাই। কত রাত নির্ঘুম কেটেছে আমার। একটা ছোট দামী পাথর বসাতেই কেটে গেছে একরাত হুজুর। মুলা চিৎকার করে বলে- গ্রন মিথ্যা কথা বলছে। এসব দামী পাখা আর শরীর তৈরি করতে আমার কেটে গেছে অনেক রাত, অনেকদিন। এগারোবার বানানোর পর মনের মতো হয়েছে। রাজা বললেন- চুপ। আর কথা বলবে না। তবু মুলা বলে- এটা আমার। হাঁটুতে বসে কাতর গলায় গ্রন বলে এটা আমার। মুলা বলে- মহারাজ আপনি যা মূল্য দিতে চেয়েছেন তাঁর অর্ধেক মূল্য আপনাকে দেব। রাজা গ্রনের দিকে তাকিয়ে বলেন- তুমিও কী তাই বলবে? গ্রন কোন উত্তর দেয় না। রাজা বলেন- উত্তর দাও। গ্রন তেমনিভাবে কাতর গলায় বলে- হুজুর এটা আমি বানিয়েছিলাম আমার মেয়ের জন্য। হুজুর এটা আমি কোনদিন যে কোন মূল্যে বিক্রি করতে চাইনি। রাজা দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষণ। তারপর বলেন- তোমরা যখন কিছুতেই সত্যি বলছো না, দুজনেই এর কারিগর বলে দাবি করছো আমি একটা উপায় বের করেছি। মযূরটাকে মাঝখানে কেটে ফেলব তারপর তোমাদের দুজনকে দাম ভাগ করে দেব। মুলা বলে- ঠিক আছে। রাজা গ্রনের দিকে তাকিয়ে বলেনÑ গ্রন তুমি রাজি? গ্রন বলেÑ হুজুর পাখিটাকে কেটে ওর সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। কতদিন, কতরাতের পরিশ্রমের ফল এই ময়ূর। লেজ বা মাথা এর কোনটাই এর সবটুকু রূপ নয়। সবটুকু মিলেই এর আসল সৌন্দর্য। এর মূল্য। কাজেই আমি আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি এর মাথা কাটবেন না। আপনি মুলাকে এটা দিয়ে দেন বা এর সম্পূর্ণ মূল্য দিয়ে দেন। আমি যাই হুজুর। গ্রন যখন যাবে বলে দরজার কাছে গেছে রাজা বলেন- যেওনা থামো। বলেন তিনি- এই ময়ূর তোমার। এ কাটা হবে ভেবে তুমি ভেঙ্গে পড়েছো। কিন্তু মুলা অর্ধেক দাম পাবে বলে বসে আছে। আমি এটা কাটতাম না। কেবল আমি তোমাদের পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। যাও এই ময়ূর তুমি যার জন্য বানিয়েছো তাকেই দাও। আর একটা আমার জন্য বানাও। সেটা আমি তোমার কাছ থেকে কিনে নেব। গ্রন এমন কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা এখন ওর? ও ওর মেয়েকে দিতে পারবে? এবার সে অনেক যতœ করে রাজার জন্য একটা বানাবে। মুলা ভয় পেয়ে কাঁপছে তখন। রাজা বলেন- ওকে জেলে দাও। লোভী শয়তান মিথ্যাবাদী। গ্রন বলেন- আপনি ওকে ছেড়ে দেন মহারাজ। রাজা কী ভেবে বলেন- ঠিক আছে। কিন্তু গ্রন তুমি আজ থেকে আমার প্রাসাদে থাকবে। তোমার মতো এমন ভাল কারিগর ও শিল্পী আমার রাজপ্রাসাদের জন্য দরকার। এরপর থেকে গ্রন রাজার প্রাসাদে জায়গা পায়। জীবনের বাকি অংশ এমনই সুন্দর জিনিস বানিয়ে রাজা, প্রজা এবং নিজেকে খুশি করে।
×