ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর মজুরি বেতন বৈষম্য

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০১৬

নারীর মজুরি বেতন বৈষম্য

কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিতে দিন দিন নারীর সম্পৃক্ততা বাড়ছেÑ এটা অবশ্যই শুভ লক্ষণ। শুধু কৃষি কেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে সমস্ত খাত রয়েছে সবগুলোতেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ায় প্রগতির পথে এক অনন্য সংযোজন। কেননা মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ নারীকে উন্নয়নের সড়কে শামিল করতে না পারলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না; সমৃদ্ধির পথেও এগোনো সম্ভব নয়। তবে এর আগে নারীর অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত জরুরী। বিশেষ করে তার শ্রমজনিত আর্থিক বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। কৃষি কাজের সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বেড়ে এখন ৬৯ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি নারী সরাসরি কৃষি জমিতে এবং কৃষি সংক্রান্ত কাজে অংশগ্রহণ করছে। তবে তাদের কোন কোন কাজ ও শ্রমের স্বীকৃতি মিলছে না। পারিশ্রমিক, মজুরি বৈষম্যের মতো গুরুতর অভিযোগও হচ্ছে স্পষ্ট। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘২য় জাতীয় নারী কৃষক সম্মেলন-২০১৬’তে ‘কৃষিতে নারী অধিকার এবং সুরক্ষা’ বিষয়ক সেমিনারে বিষয়টি উঠে এসেছে। যারা সরাসরি কৃষিতে শ্রম দিচ্ছেন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন তাদের ‘নারী কৃষক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি যৌক্তিক ও সময়ের চাহিদা। মনে রাখা দরকার সমাজের অনেক কুসংস্কার, প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতা আমাদের নারী সমাজের বড় একটা অংশ নীরবেই বিপ্লব ঘটিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দৃঢ় করে। এর মধ্যে কৃষি খাতটিতে এমন উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ আশাজাগানিয়া বটে! বহির্বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী তৈরি পোশাক ধরে রেখেছে নারী শ্রমিকরা। নির্মাণ শিল্পে নারীর সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্য। দেশে মোট শ্রমিকের মধ্যে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে নারীর অধিকাংশ কর্মক্ষেত্রে রয়েছে মজুরি ও বেতনবৈষম্য। পুরুষ শ্রমিক বা কর্মীর সমান শ্রম দিয়েও নারীর বেতন ও মজুরি তুলনামূলক কম। বিষয়টি হতাশার উদ্রেক করে বৈকি! গভীরভাবে বিষয়টি দেখলে বৈষম্যের চিত্র আরও প্রকট হয়ে ওঠে। একজন নারী শ্রমিক কিন্তু ঘর-সংসার সামলানোতেও শ্রম দেন পুরুষের তুলনায় বেশি। বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে দিনশেষে পুরুষের তুলনায় তার শ্রমদানের পরিমাণ অধিক। অথচ তার আয় পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় কম। বাংলাদেশের শ্রম আইন-২০০৬-এর ছত্রে ছত্রে শ্রম অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সেখানে কোন লিঙ্গ বৈষম্যের কথা নেই। নারীর শ্রম অধিকার ও বেতন মজুরির বাস্তবতা কি লৈঙ্গিক বৈষম্যকে স্পষ্ট করে না? কোন গণতান্ত্রিক দেশে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে নারীর সমান সামাজিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত থাকা যেমন জরুরী তেমনি তার অন্যান্য অধিকার প্রতিষ্ঠাও আবশ্যক। নারী স্বাবলম্বী না হলে দেশ-জাতি-সমাজ পিছিয়ে থাকে। তার বেতন-মজুরিতে বৈষম্য থাকলে কর্মস্পৃহা কমে যেতে পারে, এমনটা কারও কাম্য হতে পারে না। সমাজের মূলধারায় নারীকে অধিকহারে সম্পৃক্ত করতে, প্রগতির স্বার্থেই নারীর পারিশ্রমিক, মজুরি-বেতন বৈষম্য দূর করে তার ন্যায্য পাওনা-অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের চাহিদা।
×