ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০১৬

আওয়ামী লীগের সম্মেলন

আজ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দু’দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষও সম্মেলনের প্রতি নজর রাখছেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সেজেছে রাজধানী ঢাকা ও তার অলি-গলি। পিছিয়ে নেই ঢাকার আশপাশের জেলাও। রাজধানীজুড়ে নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা সাজবাতি কোনটারই যেন কমতি নেই। সম্মেলনের মূল মঞ্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। উদ্যানের ভেতরে প্রতিটি গাছগাছালিকে সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। এর জন্য কাজ করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। দলটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো, সর্ববৃহৎ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন। ভারত বিভাগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দু’বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজগার্ডেনে অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে এর জন্ম। প্রতিষ্ঠাকালে নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি বাঙালীর শাশ্বত সংস্কৃতির ধারাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে। প্রগতিশীল রাজনীতির কথা চিন্তা করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দলটির পতাকাতলে সমবেত করার লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর দলটির কাউন্সিল অধিবেশনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়। নতুন নাম হয় আওয়ামী লীগ। সেই থেকে অদ্যাবধি দলটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির চর্চা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জনগণের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলে। পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী আন্দোলন দমন করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তারপরও জনগণের অধিকার আদায়ে পিছ পা হয়নি। ৬ দফা থেকে শুরু করে বাঙালী জাতির স্বাধিকার আন্দোলনে এ দলটি ছিল নেতৃত্বের ভূমিকায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতারা দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। সেবার কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে ৩৫ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে দলটি আজ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটা বিশাল বটবৃক্ষ। শেখ হাসিনা এখন দেশে-বিদেশে একজন নন্দিত জননেত্রী। ৬৭ বছর বয়সী ঐতিহ্যবাহী দলটির রয়েছে সংগ্রামের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। চলার পথে বহু প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির স্র্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। কিন্তু তাতে দলটির কোন ক্ষতি হয়নি। কারণ, আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্রোতস্বিনী নদীর মতোই বহমান। আওয়ামী লীগের অনেক অর্জনের মধ্যে দুটি বিশাল অর্জন, বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দেয়া, অন্যটি স্বাধীনতার ৪১ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে রায় কার্যকর করা। তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগের জন্ম। গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় সম্মেলনের কাছে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের প্রত্যাশাও অনেক। শোনা যাচ্ছে এবারের সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আকার ৭৩ থেকে ৮১ করা হচ্ছে। তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব ও নানাপদে পরিবর্তনসহ নতুন নতুন পদ যুক্ত হবে। নিঃসন্দেহে এসব খবর দলটির নেতাকর্মীদের কাছে শুভবার্তা হিসেবে গণ্য হবে। এবারও সভাপতি পদে শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। ১৯৮১ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপরের কয়েক ধাপে সভাপতি হওয়াটা কেবলই তার যোগ্যতার মূল্যায়ন। কয়েকদিন ধরে বলা হচ্ছে, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতির জন্য এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত আসছে’। দলটির শত-সহস্র নেতাকর্মীসহ দেশের মানুষ সে সিদ্ধান্তটি জানার জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন সফল হোকÑ এটাই সবার প্রত্যাশা।
×