ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে হেভিওয়েট নেতাদের তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০১৬

বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে হেভিওয়েট নেতাদের তৎপরতা

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও তৎপরতা শুরু করেছেন বরিশাল আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা। তবে নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা ভাবনা বা আগ্রহ নেই স্থানীয় বিএনপির। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রায় এক ডজন নেতা। তারা আটঘাট বেঁধে মাঠে না নামলেও দলের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। তাছাড়া সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতারা। দলীয় সূত্রমতে, চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের নেত্রী সাহান আরা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ খান, মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ আনিছুর রহমান, মনিরুল আহসান খান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কেবিএস আহম্মদ কবির, একেএম জাহাঙ্গীর, আনিস উদ্দিন শহিদ, লস্কর নুরুল হক, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মাইদুল ইসলামসহ প্রায় এক ডজন নেতা। তবে বেশিরভাগ প্রার্থীই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। এটি দলীয় নির্বাচন হয় কি-না তা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। দলীয় হলে দলের মনোনয়ন দেয়ার ওপর নির্ভর করছে। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে এখনও তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে তাদের ইচ্ছা রয়েছে। অন্যকোন রাজনৈতিক দলের কোন প্রার্থীর নাম এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিতদের সিংহভাগই আওয়ামী লীগের। একই দলের হওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে এসব জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক বহুদিনের। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন করার উদ্যোগ গ্রহণের পর সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সম্পর্কে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ মোখলেছুর রহমানকে জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল তার মৃত্যুর পর পদটি শূন্য হয়। এরপর গত ১৮ জুলাই বরিশাল জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় খান আলতাফ হোসেন ভুলুকে। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক খান আলতাফ হোসেন ভুলু বলেন, দীর্ঘ ৫৪ বছর দলের রাজনীতির সাথে আমি যুক্ত। রাজনীতির কারণে অনেকবার কারাবরণ করেছি। মাত্র দু’মাস আগে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা স্বচ্ছতার সাথে পালন করছি। নির্বাচন হলে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাইব। প্রধানমন্ত্রী যদি মনোনয়ন দেন তাহলে নির্বাচন করব। দলের দুর্দিনে মাতৃস্নেহে দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগকে ধরে রাখা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাহান আরা বেগম বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির হাতে খড়ি। সবসময় দলের জন্যই ভেবেছি। সারাজীবন দলের জন্য শ্রম দিয়েছি। কিছু চাইনি। এজন্য নেতাকর্মীরাও পাশে ছিল। সমর্থন দিয়ে গেছে সবসময়। তাদের ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে চলেছি। তারাও চাচ্ছেন আমি যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। তাদের চাওয়া থেকেই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে প্রার্থী হব। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। ইচ্ছে আছে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার। তবে দল যদি চায়। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী জানান, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। আজ জীবনের শেষভাগে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করব। জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ আনিছুর রহমান জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র কাছে তিনি নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। হাসানাত আবদুল্লাহ তার প্রার্থিতার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কেবিএস আহম্মদ কবির জানান, ইচ্ছেতো আছেই। দল চাইলে নির্বাচন করব। মহানগর আওয়ামী লীগের আরেক নেতা একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, দল করছি। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল যদি সুযোগ দেয় প্রার্থী হব। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জানান, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই কাজ করবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি জানান, দেশের বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ। তাই দলে নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি। এ কারণে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে এখন পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা হয়নি। দলের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকেও মনোনয়নের বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। তাই জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখনও কিছু বলার সময় হয়নি। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগরের সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, সরকার তাদের দলীয়করণ আরও পাকাপোক্ত করতেই জেলা পরিষদ নির্বাচন চাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীন দল তাদের নেতাদের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত করতে এই পন্থা অবলম্বন করছে। এখানে কোন সাধারণ জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার রাখা হচ্ছে না। ভোট ডাকাতি ও একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারাই এই নির্বাচনের ভোটার। তাদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদ নিয়ে দলের মধ্যেও কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তারপরও দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনের বিষয়ে যে নির্দেশনা দিবেন তা বাস্তবায়ন করা হবে।
×