ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত সাবেক জাতীয় ফুটবলার আবু ইউসুফের

‘সালাউদ্দিনরা বাফুফেতে এসেছেন ব্যবসা করতে’

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২২ অক্টোবর ২০১৬

‘সালাউদ্দিনরা বাফুফেতে এসেছেন ব্যবসা করতে’

রুমেল খান ॥ টানা ২২ বছর প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ খেলেছেন। অফুরন্ত স্ট্যামিনা, অসাধারণ ফাইটিং স্পিরিট আর কঠোর শৃঙ্খলার অনুসারী ছিলেন। খেলতেন স্টপার বা উইং ব্যাক পজিশনে। কামাল স্পোর্টিং, ফায়ার সার্ভিস, ভিক্টোরিয়া, রহমতগঞ্জ, মোহামেডান ও আবাহনীতে খেলেছেন সুনাম ও দাপটের সঙ্গে। ১৯৮২ সালে ভারতের দুর্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘আশীষ জব্বার স্মৃতি টুর্নামেন্ট’-এ চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম কোন শিরোপাজয়ী ক্লাবের সদস্য ছিলেন তিনি। এতক্ষণ যাকে নিয়ে কথার অবতারণা, তিনি আবু ইউসুফ। ৫৯ বছর বয়সী ইউসুফের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার ১৯৭৫-১৯৮৭ পর্যন্ত। ১৯৯৫ সাল থেকে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু। কোচ হিসেবে কাজ করেছেন মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আবাহনী, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল ধানম-ি, শেখ রাসেল, ফরাশগঞ্জ ও সর্বশেষ বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। ২০০২ সালে পান বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির সেরা কোচের পুরস্কার। রক্ষণভাগের নির্ভরযোগ্য সাবেক এ তারকা ফুটবলারকে দারুণভাবে কষ্ট দিয়েছে ভুটানের কাছে বাংলাদেশের লজ্জার হারটি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথমেই বলে রাখি, আমার কথার কোন মূল্য নেই। আমাকে অনেকেই পছন্দ করে না। অনেকের কাছেই আমি অপাঙ্ক্তেয়। কারণ আমি সবসময়ই অপ্রিয় সত্য কথা বলি! ভুটানের কাছে হারের প্রসঙ্গে বলব, জেতার আগে চাই শৃঙ্খলা। সেই শৃঙ্খলাই বেশ কয়েক বছর ধরে নেই জাতীয় দলে। কোন বিশৃঙ্খলা হলে বাফুফে কোন এ্যাকশন নেয় না। আর একটু-আধটু নিলেও সেই শাস্তি রাতারাতি মাফ করে দেয়া হয়! কাজেই এই দল যে ভুটানের কাছে হারবে, এতে আশ্চর্যের কী আছে?’ কেন বাংলাদেশ ফুটবলের আজ এই অধঃপতন? ‘যে কোন পর্যায়ের লীগেই অহরহ পাতানো খেলা হচ্ছে অথচ বাফুফে এ ব্যাপারে বিস্ময়করভাবে নির্বিকার! কোচ হিসেবে যখন কাজ করেছি, এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছি, কথা বলেছি। কিন্তু খেলোয়াড়রা তো বটেই, টিম অফিসিয়ালরাও আমাকে পছন্দ করেনি। খেলোয়াড়রা তো পরিশ্রমই করতে চান না। এভাবে কি একটা দেশের ফুটবল চলতে পারে?’ আক্ষেপের সুরে ইউসুফ আরও বলেন, ‘স্পোর্টস একটা পবিত্র জায়গা। এখানে ছলচাতুরি চলে না অথচ এগুলোই এখন ডালভাত হয়ে গেছে। এখানে সৎভাবে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। আগে বিভিন্ন রকম টুর্নামেন্ট হতো। এখন সেগুলো হয় না। সেক্ষেত্রে কিভাবে নতুন ও দক্ষ ফুটবলার উঠে আসবে?’ এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? ইউসুফের জবাব, ‘দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হওয়া টুর্নামেন্টগুলো চালু করতে হবে। জেলা ফুটবলটা যেন সব জেলাতেই পূর্ণাঙ্গ ও সুষ্ঠুভাবে হয়। আমাদের সময়ে তো মহকুমাতেও লীগ হতো। সেগুলো তো এখন ধূসর অতীত।’ ফুটবলার তৈরির সূতিকাগার স্কুল ফুটবল নিয়ে ইউসুফের বিশ্লেষণ, ‘বাফুফে তো এখন স্কুল ফুটবলটাকেও কুক্ষিগত করে ফেলেছে!’ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন ও তার কমিটি প্রসঙ্গে ইউসুফের মূল্যায়ন, ‘আমার মনে হয় না, ফুটবলের উন্নয়নের জন্য তারা এখানে কাজ করতে এসেছেন। তারা এসেছেন অন্য উদ্দেশ্যে। হয়তো ব্যবসা করতে!’ গত নয় বছরে সালাউদ্দিন তৃণমূল ফুটবলে সেভাবে জোর দেননি অথচ এখন বলছেন, শীঘ্রই তিনি আগামী তিন বছরের জন্য রুট লেভেল ফুটবলের জন্য একটা রোডম্যাপ দেবেন। এ প্রসঙ্গে ইউসুফের ভাষ্য, ‘একটা একাডেমি উদ্বোধন করেও তা চালু রাখতে পারে না... এগুলো স্রেফ ধাপ্পাবাজি! কি কাজ আগামী তিন বছরে করবে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। ভুটানের কাছে হারে, তারা এখনও কিভাবে চেয়ারে বসে থাকে?’ সবশেষে ইউসুফ বলেন, ‘একটা দেশের ফুটবলের শেষ দুটি ধাপ হচ্ছে পেশাদার লীগ এবং জাতীয় দল। সবাই এগুলো নিয়েই বেশি কথা বলছে। কিন্তু সবার আগে তৃণমূল ফুটবল। সেটাই গত নয় বছর ধরে অবহেলিত। এর কুফলই এখন দেখা যাচ্ছে লীগে একের পর এক পাতানো ম্যাচ আর জাতীয় দলের ভুটানের কাছে লজ্জাজনক হারে।’
×